আমি বীরঙ্গনা বলছি - নীলিমা ইব্রাহিম

আমি বীরঙ্গনা বলছি – নীলিমা ইব্রাহিম

বই পর্যালোচনা: “আমি বীরঙ্গনা বলছি” – নীলিমা ইব্রাহিম

বইয়ের নাম: “আমি বীরঙ্গনা বলছি”
লেখক: নীলিমা ইব্রাহিম
প্রকাশক: মা দিবা প্রকাশনী
প্রকাশকাল: ২০১০

পরিচিতি: আমি বীরঙ্গনা বলছি একটি হৃদয়বিদারক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বই, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। এই বইটি লিখেছেন নীলিমা ইব্রাহিম, যিনি নিজেই একজন বীরঙ্গনা। বইটির মাধ্যমে লেখিকা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধর্ষণের শিকার নারীদের, বিশেষ করে বীরঙ্গনাদের, অমানবিক অত্যাচারের বর্ণনা দিয়েছেন। এটি শুধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নয়, বরং মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি চরম প্রতিবাদ।

বইয়ের বিষয়বস্তু: “আমি বীরঙ্গনা বলছি” বইটি মূলত মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নারীদের উপর পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো অত্যাচার এবং নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। লেখিকা নিজের অভিজ্ঞতা, সেই সময়কার সামাজিক অবস্থা, এবং বীরঙ্গনা নারী হিসেবে তার ব্যক্তিগত যন্ত্রণার কথা প্রকাশ করেছেন। বইটি পাঠকের সামনে এক গভীর এবং দুঃখজনক ইতিহাস উন্মোচন করে, যেখানে নারীরা শুধু স্বাধীনতার জন্য নয়, নিজের সম্মান এবং জীবন বাঁচানোর জন্যও সংগ্রাম করেছেন।

বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন এক একটি ইতিহাসের সাক্ষী। এতে রয়েছে একাধিক নারীর জীবনের গল্প, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের কাহিনীগুলো অত্যন্ত কষ্টকর, তবে তাতে রয়েছে শক্তি, সাহস এবং অবিচল দৃঢ়তা। নীলিমা ইব্রাহিম এই নারীদের দুঃখ-কষ্ট, তাদের বাঁচার তাগিদ এবং নিজেদের গর্বিত হওয়ার অভিজ্ঞতা একত্রিত করে একটি শক্তিশালী এবং মানবিক গল্প উপস্থাপন করেছেন।

লেখকের দৃষ্টি ও শৈলী: নীলিমা ইব্রাহিম তার লেখা বইতে অত্যন্ত সংবেদনশীল ও বেদনাবহুল ভাষায় বীরঙ্গনাদের যন্ত্রণার চিত্র আঁকেছেন। তিনি কোনোভাবেই অতিরঞ্জিত বা আবেগপ্রবণ হয়ে ঘটনাগুলো বর্ণনা করেননি, বরং প্রতিটি ঘটনা ও ব্যক্তির কথা এমনভাবে তুলে ধরেছেন যেন পাঠকরা সে যন্ত্রণা অনুভব করতে পারেন। লেখিকা নিজের অভিজ্ঞতা ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে খুবই সতর্কভাবে প্রতিটি বিষয় উপস্থাপন করেছেন, যাতে বইটি বাস্তবতার সঙ্গে একাত্ম হতে পারে।

বইয়ের শক্তি: বইটির শক্তি হলো তার নির্ভুল বাস্তবতা। এটি কোন কাল্পনিক গল্প নয়, বরং এক একটি নারীর জীবনের অন্ধকার দিক এবং তার সাহসিকতার কাহিনী। বইটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীদের উপর গণধর্ষণের মতো অপরাধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সচেতনতা তৈরি করতে সাহায্য করেছে। লেখিকা এসব নির্যাতিত নারীদের কণ্ঠ হিসেবে দাঁড়িয়ে তাদের চরম অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, যা কখনো ইতিহাস থেকে মুছে যেতে পারে না।

পাঠকগোষ্ঠী: এই বইটি বিশেষত ইতিহাসপ্রেমী, গবেষক, শিক্ষার্থী এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আগ্রহী পাঠকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে, যারা নারীদের প্রতি সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে আগ্রহী, তাদের জন্যও এটি এক অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বই। এটি তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের অজানা দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন করতে সাহায্য করবে এবং বীরঙ্গনাদের সম্মান প্রদর্শনে আরও সোচ্চার হতে অনুপ্রাণিত করবে।

বইয়ের প্রভাব: “আমি বীরঙ্গনা বলছি” বইটি নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিবাদ হিসেবে দাড়িয়েছে। এই বইটি মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে শুধু সম্মানিতই করেনি, বরং নারীর প্রতি সহিংসতার মানবিক ও সামাজিক দিকগুলোকে তুলে ধরেছে। এটি একটি ধ্বংসাত্মক অধ্যায়কে প্রকাশ করেছে, যা আমাদের সমাজকে নারীর প্রতি আরও সহানুভূতির দিকে ধাবিত করবে।

উপসংহার: “আমি বীরঙ্গনা বলছি” বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি শুধুমাত্র যুদ্ধের ইতিহাস নয়, বরং নারীর প্রতি অত্যাচার, সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে একটি গভীর প্রতিবাদ। নীলিমা ইব্রাহিমের লেখনী অত্যন্ত আবেগপ্রবণ এবং শক্তিশালী, যা পাঠককে নাড়া দিয়ে যায়। এটি একটি বই, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের ইতিহাসের অবিস্মরণীয় এক অংশ হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আপনার কপি কিনুন রকমারি.কম থেকে–

এবং

বইটির ফ্রি সফট কপি ডাউনলোড করুন এখানে-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top