Americarek Ondhokare by Abul Asad-28

আমেরিকার এক অন্ধকারে – আবুল আসাদ (Americar ek Ondhokare by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

অবিরাম কেঁদে চলছে লায়লা জেনিফার।
ডাঃ মার্গারেট বলল, ‘এভাবে কাঁদলে মরার আগেই মরে যাবে জেনিফার। মৃত্যু অবধারিত একটি বিষয়। সুতরাং ভয় কিসের? কাঁদবে কেন?’
‘আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না আপা। ইতোমধ্যে যদি ওরা আমাকে মেরে ফেলত, তাহলে খুশী হতাম’।
‘তাহলে আর ভয় কিসের? এত কাঁদছ কেন?’
লায়লা জেনিফার মুখ খুলতে যাচ্ছিল কিছু বলার জন্যে। দরজায় শব্দ শুনে থেমে গেল সে। দরজা খোলার শব্দ হলো।
ভয়ে মরার মত ফ্যাকাসে হয়ে গেল জেনিফারের মুখ। সে ডাঃ মার্গারেটের পা ঘেঁষে বসল।
ডাঃ মার্গারেট জেনিফারের পিঠে সান্ত্বনাসূচক একটা হাত রাখল।
দরজা খুলে গেল। খাবারের ট্রলি ঠেলে প্রবেশ করল একজন। তার পেছনে আরেকজন। তার কোমরে রিভলবার ঝুলানো। হাতে একটা ওয়াকিটকি। সুবেশধারী লোকটি।
লোকটি চকচকে চোখে লায়লা জেনিফার ও ডাঃ মার্গারেটের দিকে তাকাল। লায়লা জেনিফারকে লক্ষ্য করে বলল, ‘বিনা কারণে কাঁদলে, কারণের সময় কাঁদার জন্যে চোখে পানি পাবেন কোথায়?’
ডাঃ মার্গারেট ও লায়লা জেনিফার কোনো কথা বলল না। মুখও তুলল না তারা। তাদের, বিশেষ করে লায়লা জেনিফারের অবস্থা আড়ষ্ট।
বলল লোকটাই আবার, ‘খুব তো ভয় দেখছি। আহমদ মুসার সংস্পর্শে যারা আসে, তাদের তো এমন ভয় থাকার কথা নয়। ভয়ংকর আহমদ মুসার পাল্লায় পড়েছিলেন আপনারা কেমন করে?’
ডাঃ মার্গারেট চকিতের জন্যে একবার মুখ তুলল। কিন্তু দু’জনের কেউই কোন উত্তর দিল না। কি বলবে তারা? আহমদ মুসা তো ভয়ংকর নয়, আল্লাহ তো তাকে ত্রাণকর্তা হিসেবে পাঠিয়েছেন। কিন্তু একথা তো বলা যাবে না। সুতরাং কিছু না বলাই ভালো।
ক্রোধে লোকটির মুখ লাল হয়ে উঠল। বলল সে চিৎকার করে, ‘কথা বলতে হবে। যাক না পনেরটা দিন। বসের নির্দেশ পনের দিন গায়ে হাত দেয়া যাবেনা। পনের দিনের মধ্যে যদি আহমদ মুসা আত্মসমর্পন না করে, তাহলে তোমরা আমাদের। তোমাদেরকে আমাদের হাতে তুলে দেবেন বস গণ-উৎসব করার জন্যে’।
ট্রলি ঠেলে নিয়ে আসা লোকটি খাবার নামিয়ে রেখেছে মেঝেতে। ট্রলি ঠেলে সে বেরিয়ে গেছে ঘর থেকে।
লোকটি কথা শেষ করেই ঘুরে দাঁড়াল ঘর থেকে বেরুবার জন্যে। যাবার জন্যে পা তুলে একটু মুখ ঘুরিয়ে লোভাতুর দৃষ্টি ডাঃ মার্গারেট ও লায়লা জেনিফারের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, ‘কয়দিন খেয়ে-দেয়ে তৈরী হয়ে নাও ডার্লিং’।
বেরিয়ে গেল লোকটি। দরজা বন্ধ হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গেই।
লোকটি কি বলছে বুঝতে বাকি ছিল না কারোরই। কাঁপছিল লায়লা জেনিফার।
ডাঃ মার্গারেটের চোখেও আতংকের ছায়া। তবু লায়লা জেনিফারের দিকে চেয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলল, ‘যারা অসহায়, তাদের আল্লাহ আছেন’।
‘আলহামদুলিল্লাহ’। চোখ মুছে বলল লায়লা জেনিফার।
বলে একটু থেমেই আবার শুরু করল, ‘পনের দিনের মধ্যে আত্মসমর্পনের কথা নিশ্চয় ওরা আহমদ মুসাকে বলেছে’।
‘অবশ্যই’।
‘আহমদ মুসা কি করবেন বলে মনে করেন?’ শুকনো কন্ঠে বলল লায়লা জেনিফার।
মুখ ম্লান হয়ে গেল ডাঃ মার্গারেটের। তার মনেও এই প্রশ্নটাই বড় হয়ে উঠল। আহমদ মুসার মুখটি ভেসে উঠল তার চোখের সামনে। হৃদয়ের কোথাও চিন চিন করে উঠল পরিচিত সেই বেদনা। আবার আগের মতই চমকে উঠল সে। এই অন্যায় চিন্তাকে সে ভয় করে এবং মনের আড়ালে রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু সুযোগ পেলে চিন্তাটা মাথা তোলে এবং তাকে বিব্রত করে। আহমদ মুসা হিমালয়ের মত উঁচু এক ব্যক্তিত্বই শুধু নন, ডোনা জোসেফাইনের আহমদ মুসাকে নিয়ে তার ভাববার অধিকার কোথায়? চোখ দুটি ভারি হয়ে উঠল ডাঃ মার্গারেটের।
বলল মার্গারেট ধীরে ধীরে, ‘যিনি নিজের চেয়ে পরের কথা বেশী ভাবেন, তিনি কি করতে পারেন তা বলা খুব সহজ নয় কি?’
‘তার মানে তিনি আত্মসমর্পণ করবেন?’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top