Free America by Abul Asad-31

ফ্রি আমেরিকা – আবুল আসাদ (Free America by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

ওয়াশিংটনের ভোর।
সকালের কুয়াশা তখন গভীর।
এরই মধ্যে ফেডারেল পুলিশ প্রধান বিল বেকারের মনে হল কুয়াশায় জড়িয়ে একজন মানুষ যেন পড়ে আছে রাস্তার পাশে।
‘ড্রাইভার গাড়ি দাঁড় করাও।’ সংগে সংগেই ড্রাইভারকে নির্দেশ দিল বেকার।
গাড়ি দাঁড়াল।
ফেডারেল পুলিশ প্রধান বিল বেকার পাশের লোকটির দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, ‘স্যার রাস্তার পাশে একটা মানুষ পড়ে আছে বলে মনে হচ্ছে।’
পাশে বসা লোকটি এফবিআই-এর প্রধান জর্জ আব্রাহাম জনসন।
জর্জ আব্রাহাম জনসন ও বিল বেকার ফিরছিল ভার্জিনিয়ার অরলিংটন থেকে। জরুরী প্রয়োজনে ভোর রাতে গিয়েছিল সেখানে। এখন ফিরছে।
বিল বেকারের কথা শুনে ভ্রুকুঞ্চিত হল জর্জ আব্রাহাম জনসনের। বলল, ‘চলুন তো, নেমে দেখি।’
কাছাকাছি হয়ে তারা নিশ্চিত হল, ঠিক একজন মানুষ রাস্তার পাশে পড়ে আছে।
আরও কাছাকাছি হয়ে তারা আঁৎকে উঠল, একজন মানুষের রক্তাক্ত লাশ এটা। আরও কাছাকাছি গেল তারা।
লাশটি চিৎ হয়ে পড়ে আছে। পরনে কমপ্লিট স্যুট।
লাশের মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল জর্জ আব্রাহাম ও বিল বেকার দুজনেই।
লাশটি জেনারেল আলেকজান্ডার হ্যামিল্টনের।
উদ্বেগ উৎকন্ঠা নিয়ে লাশের উপর একটু ঝুঁকে পড়ল তারা।
বুকে গুলীবিদ্ধ হওয়ার কেন্দ্র দুটি। আর এই দুটি গুলীতেই সে নিহত হয়েছে।
দেহে যা রক্ত লেগে আছে তা জমাট বাধা। মাটিতে রক্তের তেমন কোন চিহ্ন নেই। তার মানে অন্য জায়গায় হত্যা করে এখানে এনে ফেলে রাখা হয়েছে।
আরেকবার ভ্রুকুঞ্চিত হল জর্জ আব্রাহাম জনসনের। হত্যা করে সদর রাস্তার পাশে এনে লাশ ফেলে রাখবে কেন?
এই প্রশ্নটা দেখা দিয়েছে ফেডারেল পুলিশ প্রধান বিল বেকারের মনেও।
হঠাৎ তাদের নজর পড়ল লাশের বুকে রক্তের সাথে লেপটে থাকা একটা চিরকুটের দিকে।
তারা আরও ঝুঁকে পড়ল চিরকুটটা কি ও কেন তা দেখার জন্য।
চিরকুটে একটা মাত্র লাইন টাইপ করে লেখা। চিরকুটটা স্পর্শ না করে রক্তের ফাঁক দিয়ে যতটা পড়া গেল তাতে এই লেখাঃ ‘দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইহুদীদের সহযোগিতার এটাই পরিণাম।’
লেখা পড়ে চমকে উঠল জর্জ আব্রাহাম ও পুলিশ প্রধান বিল বেকার দুজনেই।
উঠে দাঁড়াল দুজনেই।
বিল বেকার তাকাল জর্জ আব্রাহাম জনসনের দিকে। বলল, ‘আমি কিছু বুঝতে পারছি না স্যার। ওরা কি এধরনের কান্ড ঘটাতে পারে? ‘ফ্রি আমেরিকা মুভমেন্ট’ ও ‘হোয়াইট ঈগল’ এতটা পাগল হতে পারে যে, এই কান্ড ঘটিয়ে তা আবার সদর রাস্তার ধারে এনে তাতে এই সাইনবোর্ড দিয়ে রাখবে!’
এই প্রশ্নগুলো ভীষণভাবে পীড়া দিচ্ছিল জর্জ আব্রাহাম জনসনকেও। কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছিল না। বিশেষ করে আহমদ; মুসা যেখানে সারা জেফারসন ও গোল্ডওয়াটারের পাশে আছে, সেখানে এই ধরনের কান্ড ঘটতে পারে কি করে? তাহলে কি তাদের অজান্তে অতি উৎসাহী কেউ এই কান্ড ঘটিয়েছে? এটাও জর্জ আব্রাহামের মন মেনে নিতে পারছে না।
জর্জ আব্রাহাম জনসন বিল বেকারের প্রশ্নের উত্তরে বলল, ‘আমাকেও ব্যাপারটা অবাক করেছে। কিছু বুঝতে পারছি না বেকার।’
‘ঝামেলার এই চিরকুটটি তাহলে সরিয়ে ফেলব কি স্যার?’ বলল বিল বেকার আগ্রহী কন্ঠে।
জর্জ আব্রাহাম তাকাল বিল বেকারের দিকে। বলল, ‘না বেকার, চিরকুট না নিয়ে যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। অপরাধীকে আড়াল করা নয়, তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করাই আমাদের দায়িত্ব।’
‘ধন্যবাদ স্যার। আমি চিরকুটটাকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না তাই কথাটা বলেছি।’ বলল বেকার।
‘ধন্যবাদ বেকার। তুমি ওদের ডেকে পুলিশ কন্ট্রোলে টেলিফোন করতে বল। ওরা আসুক।’
জর্জ আব্রাহাম জনসনের গাড়ির পেছনেই ছিল তাদের টীম-পুলিশের গাড়ি।
বিল বেকার ডাকল তাদের।
গাড়ি থেকে ছয়জন পুলিশ নেমে দ্রুত এগিয়ে এল।
বিল বেকার ওদের মধ্যে যে অফিসার তাকে বলল, ‘ডিউটি পুলিশকে টেলিফোন কর, ওরা আসুক।’
সংগে সংগেই পুলিশ অফিসার তার অয়্যারলেস নিয়ে একটু দুরে সরে দাঁড়াল কথা বলার জন্যে।
এ সময় জর্জ আব্রাহাম জনসন চারদিকে একবার তাকিয়ে দ্রুত বলে উঠল, ‘বিল বেকার, এইতো সামনে আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের বাড়ি। এতক্ষনে লাশের দিকে সব মনোযোগ থাকায় কোন দিকে তাকাবার ফুরসৎ হয়নি।’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top