একটু চোখ বুলিয়ে নিন
১
আহমদ মুসা কর্নেল সুরেন্দ্রের কাছে টেলিফোন সেরে মোবাইলটি জ্যাকেটের পকেটে রেখে গুহার গায়ে হেলান দিল। মনে মনে ভাবল, ১৫ মিনিট পরে সে যাত্রা করবে। তাহলে কর্নেল সুরেন্দ্ররা এবং সে একই সময়ে ‘মহাসংঘ’র আন্ডার গ্রাউন্ড ঘাঁটির মুখে প্রত্নতত্ব অফিস এলাকায় পৌছে যাবে। এদিকে তার ১৫ মিনিটের একটা বিশ্রামও হয়ে যাবে।
আহমদ মুসা তার গোটা শরীর ঢিলা করে চোখ বুঝল।
শুধু তার কানটাই সক্রিয় রইল। তার দুই কানে লাগানো ছিল ‘সাউন্ড মনিটরিং’-এর দুই রিসিভার। কি যেন ভেবে পনের মিনিটের জন্যে মনিটরিং-এর রিসিভার কান থেকে নামিয়ে নেবার জন্যে ওদিকে হাত বাড়াতেই হালকা শব্দে একটা কোরাস ভেসে এল তার কানে।
হাত সরিয়ে নিল আহমদ মুসা। রিসিভার থামাল না।
সোজা হয়ে বসে শব্দের কোরাস বুঝার চেষ্টা করল।
কিছুটা শোনার পর তার মনে হলো অনেকগুলো লোকের এক সঙ্গে চলার জমাট শব্দ এটা। শব্দগুলো ক্রমেই স্পষ্টতর হচ্ছে। তার মানে একদল লোক এদিকে এগিয়ে আসছে।
কথাটা মনে আসতেই তড়াক করে উঠে দাঁড়াল। কারা আসছে? মহাসংঘ’র লোকরা নিশ্চয়। কিন্তু দল বেঁধে এদিকে আসছে কেন? ওদের একটা অংশ কি এখান থেকে চলে যাচ্ছে? বোট দুটো কি এজন্যেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে? এটা কি ওদের রুটিন যাতায়াত? ওরা এক নম্বর নেভি ডকে সিবিআই-এর লোকদের আসা টের পায়নি তো?
আহমদ মুসা গুহা থেকে বেরিয়ে দ্রুত গাছ-পালা ও আগাছার আড়াল নিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে উপরে উঠতে লাগল।
সামনের এলাকা নজরে আসে এমন জায়গায় উঠে একটা গাছের আড়ালে বসল। পাহাড়ের গা গাছ-গাছড়া ও নানারকম আগাছায় ঢাকা। আহমদ মুসা বসলে ঢেকে গেলো তার দেহ। ব্যাগ থেকে দূরবীণ বের করে চোখে লাগাল সে।
সামনের এলাকাটা এবড়ো-থেবড়ো পাথুরে জমি। ঘাস-আগাছায় ঢাকা। মাঝে মাঝে বড় গাছ আছে, কিন্তু তার সংখ্যা খুব বেশি নয়। সুতরাং সামনে বহুদূর দেখা যায়। দৃষ্টি সার্কেলের প্রান্ত পর্যন্ত।
দূরবীনের চোখ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নেবার সময় হঠাৎ দূরবীনের চোখে ভেসে উঠল মানুষের সারি। যুদ্ধক্ষেত্রের ব্যুহের মত সারি বেঁধে এগিয়ে আসছে দশ বারোজন লোক। প্রত্যেকের হাতে কিছু লাগেজ এবং অস্ত্র। তার মধ্যে বেশ কয়েকজনের কাঁধে বড় বড় ব্যাগ। আর দুজন বহন করছে কফিনাকৃতির লম্বা একটি কাঠের বাক্স।
দূরবীনের চোখ এই গোটা দলের ওপর ঘুরে আসার আগেই স্নায়ু তন্ত্রীতে একটা শক ওয়েভ খেলে গেল। জেগে উঠল গোটা শরীর, শক্ত হয়ে উঠল গোটা দেহ।
হঠাৎ তার মনে জাগল, এই ঘাঁটি থেকে মহাসংঘের ওরা পালাচ্ছে শাহ আলমগীরকে নিয়ে। ওরা তাহলে অবশ্যই জেনেছে যে, নৌবাহিনীর ১নং ডকে সিবিআই-এর একটা দল নেমেছে, কিন্তু তারা বুঝতেও পেরেছে যে, সিবিআই-এর টার্গেট তাদের এই ঘাঁটি। এটা বুঝেই তারা পেছনের এই দরজা দিয়ে পালাবার জন্যে ছুটে আসছে।