Pacificer Voyonkor Dwipe by Abul Asad-51

প্যাসেফিকের ভয়ংকর দ্বীপে – আবুল আসাদ (Pacificer Voyonkor Dwipe by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

ইয়াংম্যান, তুমি যা বলেছ তার সরল অর্থ হলো কোন অ্যাটল দ্বীপে বাইরে থেকে সহজে দেখা যায় না এমন কোন স্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব কি না? এর সরল উত্তর হলো, সম্ভব নয়। কারণটা দেখ, একটা অ্যাটলে কি থাকে? চারদিকের সংকীর্ণ অথবা কিছুটা প্রশস্ত ভূমি সীমানা, এই ভূমি সীমানার মাঝখানে থাকে লেগুন।লেগুনের নিচে থাকে কোরাল লাইমস্টোনের সলিড বেজ। এই বেজটা ধীরে ধীরে এখানে উঠে এসেছে সাগরের ফ্লোর থেকে। পানির নিচে অ্যাটলের এই সলিড বেজের চারিদিকের দেয়াল নানা রকমের হতে পারে। মসৃণ হতে পারে, এবড়ো-থেবড়ো হতে পারে, সূচালো অথবা ভোঁতা কোরালের ঝাড়ে পূর্ণও হতে পারে। এসব নিয়েই একটা অ্যাটল দ্বীপ। এর মধ্যে ইনডিভিজুয়াল স্থাপনা গড়ে উঠার সুযোগ কোথায়?
কথাগুলো বলছিল ইজিচেয়ারে শোয়া শুভ্র কেশ, শুভ্র ভ্রূর একজন বৃদ্ধ। মুখের চামড়াও তার অনেক কুঁচকানো। উজ্জ্বল সোনালী চেহারায় তার চোখ দু’টি খুবই সজীব ও তীক্ষ্ণ।
বৃদ্ধের নাম অধ্যাপক টেপোয়া তাতিহিতি।
তাহিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওসেনিক ল্যান্ড-সাইন্সের সাবেক অধ্যাপক। গোটা প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় এই বিষয়ে সে অদ্বিতীয় বিশেষজ্ঞ। দুনিয়াজোড়া নাম তার। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হওয়ার সাথে সাথে সে প্যাসিফিক আইল্যান্ড ইন্সটিটিউটের প্রধাণও ছিল।
অধ্যাপক টেপোয়া তাতিহিতি মারেভার বাবার শিক্ষক ছিল। আবার তার পারিবারিক বাড়ি “আরু”তে। এই কারণে মারেভাদের ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্ক আছে অধ্যাপক টেপোয়া তাতিহিতির পরিবারের সাথে।
মারেভাই আহমদ মুসাকে নিয়ে এসেছে অধ্যাপক টেপোয়া তাতিহিতির কাছে। অ্যাটল দ্বীপগুলোর কম্পোজিশন সম্পর্কে আহমদ মুসা জানতে চায়। আর জনতে চায় অ্যাটলগুলোতে কোন গোপন স্থাপনা কিভাবে গড়ে উঠতে পারে।
আহমদ মুসা তার মাল্টিওয়েভ মনিটরে পাওয়া এসএমএস মতুতুংগা দ্বীপ থেকেই এসেছে এটা নিশ্চিত হবার পর ভেবে কুল-কিনারা পাচ্চে না। ছোট এই দ্বীপের কোথা থেকে তার কাছে এসওএস বার্তা এল!চারদিকে ঘুরে সে মতুতুংগা দ্বীপটাকে দেখেছে। তাছাড়া কম্পিউটারে দ্বীপটির স্যাটেলাইট ইমেজ সে পরিক্ষা করেছে। এতে উপরের সারফেস ছাড়াও দ্বীপটির পানির তলের বেজটাকেও সে ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছে। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এই অবস্থায় মারেভা তাঁকে নিয়ে এসেছে অধ্যাপক টেপোয়া তাতিহিতির কাছে।
অধ্যাপক তাতিহিতি “আরু”তে তার পৈত্রিক বাড়িতে অবসর জীবনযাপন করছে। সারা জীবন ধরে সমৃদ্ধ করে তোলা পৈত্রিক পাঠাগারে পড়াশুনা, বাড়ির চারদিকের বাগানের টুকিটাকি পরিচর্যা ও বাগানে ঘুরে বেড়িয়েই তার সময় কেটে যায়। আজ খুশি হয়েছে সে আহমদ মুসাদের পেয়ে।
অধ্যাপক টেপোয়া তাতিহিতির কথা শেষ হতেই আহমদ মুসা বলল, কিন্তু স্যার, আমি নিশ্চিত একটি অ্যাটলে গোপন স্থাপনা আছে এবং সেখানে মানুষও আছে। যদি এটা সত্য হয়, তাহলে গোপন স্থাপনা কিভাবে গড়ে উঠল?
তুমি ‘যদি’ শব্দ ব্যবহার করেছ। কিন্তু এই ‘যদি’টাকে সত্য বলে নিশ্চিত হচ্ছো কেমন করে, ইয়ংম্যান? বলল অধ্যাপক টেপোয়া তাতিহিতি।
স্যার, আমি ঐ দ্বীপের এক স্থান থেকে একটি এসওএস বার্তা পেয়েছি। আহমদ মুসা বলল।
তুমি কি করে নিশ্চিত হচ্ছো, এসওএস বার্তাটা ঐ অ্যাটল থেকেই এসেছে? বলল অধ্যাপক তাতিহিতি।
আহমদ মুসা তার অংকের বিবরণ দিয়ে বলল, আমার হিসাবে কোন ভুল হয়নি স্যার।
অধ্যাপক টেপোয়া তাতিহিতি মাথা নেড়ে বলল, ইয়াংম্যান, অংক তোমার ঠিক আছে।কিন্তু অ্যাটলে গোপন স্থাপনা কোত্থেকে আসবে, সে অংক তো মিলছে না!
আহমদ মুসা ভাবছিল। বলল, স্যার, অ্যাটলের কোরাল স্টোন বেজ যা সাগরের ফ্লোর থেকে উঠে এসেছে, তা কি সব সময় সলিড হতে বাধ্য? দেয়ালঘেরা ঘরের মত ফাঁপা হয়ে উঠতে পারে না তা? এভাবে তা কি লেগুনের ফ্লোরের নিচে কোন স্থাপনা গড়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে না?
আহমদ মুসার প্রশ্ন শুনে অধ্যাপক টেপোয়া তাতিহিতি ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দিল।সংগে সংগে উত্তর দিল না। তার চোখ বুজে গিয়েছিল। ভাবছিল সে।
এক সময় চোখ খুলল অধ্যাপক টেপোয়া তাতিহিতি। সোজা হয়ে বসল। তাকাল আহমদ মুসার দিকে। বলল, ইয়ংম্যান, তুমি কি বলতে চাচ্ছ আমি বুঝেছি। স্রষ্টার সৃষ্টি বড় বিচিত্র।এর কতটুকু আমরা জানি। এখানে সম্ভব-অসম্ভবের সীমারেখাও টানা যায় না। অতএব, তুমি য বলছ থাকতে পারে, আবার নাও পারে। বিজ্ঞানের কথা যদি বল তাহলে বলব কোরাল স্তরের বৈচিত্রময় গঠনের ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিক মাপ-জোক থেকে পাওয়া যাবে না। এগুলো মহান স্রষ্টার ইচ্ছার সৃষ্টি।তুমি অ্যাটলের বেজে কোরাল স্টোন ওয়ালকে যেমন ফাঁপা হওয়ার কথা বলছ, তা স্রষ্টার ইচ্ছার আওতার বাইরে নয়।
বলে থামল অধ্যাপক তাতিহাতি। হঠাৎ তার মুখে ভাবনার একটা ছাপ ফুটে উঠল। তার সাথে সাথে তার ঠোঁটে দেখা গেল এক টুকরো হাসিও। তাকাল সে মারেভা মাইমিতির দিকে। বলল, মারেভা, তোমার নিশ্চয় মনে আছে জগতেশ্বরী ও প্রথম মানবী হিনা, প্রিন্স হেসানা হোসানা ও সাগর-রূপা জলকন্যা ভাইমিতি শাবানুর কাহিনী। এই কাহিনীতেই আছে প্রিন্স হেসানা হোসানার প্রতি সদয় জগতেশ্বরী হিনা পাগল প্রেমিক প্রিন্সকে তার প্রেমিকা ভাইমিতি শাবানুর সাথে দেখা করিয়েছিল পানির তলে অ্যাটলের এক প্রাসাদে। অ্যাটলের পানির তলে মানে অ্যাটলের বেজ এলাকায় যে প্রাসাদ থাকতে পারে, তাহিতি এলাকার এই কাহিনীতে তার একটা প্রমাণ পাওয়া যায়।
অধ্যাপক তাতিহিতি থামতেই আহমদ মুসা বলে উঠল, কাহিনীটা কি স্যার?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top