একটু চোখ বুলিয়ে নিন
১
রাইন পার হয়ে এগিয়ে চলছিল আহমদ মুসার গাড়ি। আহমদ মুসা ব্রুমসারবার্গ থেকে রাইনের তীর বরাবর এগিয়ে কবলেঞ্জের ব্রীজ দিয়ে রাইন পার হয়েছিল। উঠেছিল ফ্রাংকফুর্ট-বন হাইওয়েতে।
আহমদ মুসার টার্গেট ক্যাসেল, হ্যানোভার হয়ে অ্যারেন্ডসীর দিকে যাওয়া। এর জন্যে ফ্রাংকফুর্ট-ক্যাসেল কিংবা বন-ক্যাসেল হাইওয়েটা বেশি সুবিধাজনক। কিন্তু আহমদ মুসা এই দুই হাইওয়ে এড়িয়ে ফ্রাংকফুর্ট-বন হাইওয়ে আড়াআড়িভাবে ক্রস করে আঞ্চলিক রোড ধরে এগিয়ে চলছে ক্যাসেল-এর দিকে।
হাইওয়ে থেকে এ রাস্তা অনেক ভিন্ন। গাড়ির সেই ভিড় এখানে নেই, সেই স্পিডও কোন গাড়ির নেই। ড্রাইভ তাই এখানে অনেকটাই চাপবিহীন।
বামে টার্ন নিতে গিয়ে আহমদ মুসা রিয়ারভিউ মিররের দিকে তাকাল। তাকাতে গিয়ে নজর পড়ল ড্যাশবোর্ডের উপর রাখা একগুচ্ছ গোলাপের উপর।
গোলাপ গুচ্ছটি তার মনকে টেনে নিয়ে গেল এক তরুণের দিকে। রাত ১২টার দিকে যখন তারা বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল গাড়ি নিয়ে সে সময় দেখা এই তরুণের সাথে।
একজন ফাদারের পোশাক পরা আলদুনি সেনফ্রিড গাড়ি থেকে নেমে গেট লক করছিল। আহমদ মুসা বসেছিল ড্রাইভিং সিটে।
সেই তরুণটি আহমদ মুসার পাশের জানালায় এসে দাঁড়িয়ে তুলে ধরে ঐ ফুলের গুচ্ছ।
আহমদ মুসা তরুণটির দিকে একবার তাকিয়ে ফুলের গুচ্ছটি হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিল।
গোলাপের গুচ্ছ দেখেই আহমদ মুসার মন কথা বলে উঠেছিল।
ফুলের গুচ্ছ হাতে নিয়েই তাকিয়েছিল আহমদ মুসা গুচ্ছের মধ্যে একটা চিরকুটের সন্ধানে। তার সাথে সাথে মন একটা প্রশ্নও করেছিল, এ সময় ওদের চিরকুট আসবে কেন? তারা তো যাচ্ছে এখন অ্যারেন্ডসীতে।
ফুলের গুচ্ছের মধ্যে একটা লাল চিরকুটের উপর নজর পড়ল আহমদ মুসার।
তাড়াতড়ি চিরকুটটি তুলে নিয়ে পড়ল আহমদ মুসা।
একটি বাক্যমাত্র লেখা, ‘মিশন অন্য কোথাও যাচ্ছে শুনেছি, জানা গেলে মন্দ কিছু হতো না।’
একরাশ বিস্ময় আহমদ মুসাকে ঘিরে ধরল। আমরা অন্য কোথাও যাচ্ছি, এরা জানতে পারল কি করে!
আমরা তিনজন শুধু জানি। আমরা কেউ তাদের বলিনি। এটা নিশ্চিত। তাহলে এই বাড়ির মালিকের কাছ থেকে জানতে পেরেছে? আলদুনি সেনফ্রিড কিছুদিনের জন্যে বাড়ির বাইরে যাওয়ার বিষয়টা বাড়ির মালিককে বলার কথা, নিশ্চয় বলেছে। তার কাছ থেকে এরা জানতে পেরেছে। আহমদ মুসার মনে পড়ল, এ বাড়ির খবর তো এরাই আমাদেরকে দিয়েছে। বাড়ির মালিকের সাথে এদের সম্পর্ক কি? আসলে কারা এরা? বাড়ির মালিক কি এদের কেউ?
এসব প্রশ্নের কোনটিরই উত্তর জানা নেই আহমদ মুসার। কিন্তু ওরা যা জানতে চেয়েছে, তা ওদের জানাব কি করে?
তাকাল আহমদ মুসা জানালার বাইরের দিকে। বিস্ময়ের সাথে সে দেখল, দু’ধাপ পেছনে সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তরুণটি। আহমদ মুসা মনে মনে নিশ্চিত ছিল যে সে চলে গেছে। কারণ ইতিপূর্বে কোন সময়ই ফুলের গুচ্ছ হাতে দেয়ার পর কেউ দাঁড়ায়নি, দ্রুত সরে গেছে।
এ তরুণটি দাঁড়িয়ে আছে কেন? উত্তর নেবার জন্যে কি? তাই হবে। ভাবল আহমদ মুসা।
কিন্তু গন্তব্যের কথা কি ওদের বলা ঠিক হবে? বলা যাবে না কেন? ওরা যে অমূল্য সাহায্য করেছে, সেটা ওদের বিশ্বস্ততার প্রমাণ। যা জানতে চাচ্ছে ওরা, এটা তাদের বলা যায়।
আহমদ মুসা ইশারা করে ডাকল তরুণটিকে।
এল তরুণটি।
‘ধন্যবাদ তোমাদের।’ বলল আহমদ মুসা যুবকটিকে উদ্দেশ্য করে।
‘ধন্যবাদ স্যার।’ তরুণটি বলল।
‘ধন্যবাদ কেন, আমি বা আমরা তোমাদের জন্যে কিছু করিনি।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আপনি সবার জন্যে করেন।’
বলে একটু থেমেই সে বলল, ‘আমি যেতে পারি স্যার?’
‘তুমি অ্যারেন্ডসী চেন? বলতে পার সোজাপথ কোনটা?’ বলল আহমদ মুসা।
‘ফ্রাংকফুট-ক্যাসেল-হ্যানোভার হয়ে অ্যারেন্ডসী এবং বন-হ্যানোভার-অ্যারেন্ডসী এই দুই হাইওয়ের মধ্যে ফ্রাংকফুট হাইওয়ে বেশি সংক্ষিপ্ত। কিন্তু আরও সংক্ষিপ্ত পথ হলো কবলেঞ্জ থেকে ফ্রাংকফুট-বন হাইওয়ের যেখানে উঠবেন সেখান থেকে রিজিওনাল একটা সড়ক বহু গ্রাম-গঞ্জ মাড়িয়ে ক্যাসেল হয়ে হ্যানোভারকে বাঁয়ে রেখে স্যাক্সনীর ভেতর দিয়ে অ্যারেন্ডসী গেছে। এই পথে হাইওয়ের গতি নেই, কিন্তু জার্মানীর হৃদয় মানে গ্রামীণ জার্মানীর আনন্দ পাবেন।’
‘ধন্যবাদ।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ওয়েলকাম, স্যার। আমি আসি।’ তরুণটি বলল।
‘জবাব নিলে না?’ মুখে মিষ্টি হাসি টেনে বলল আহমদ মুসা।
‘জবাব পেয়ে গেছি স্যার, ধন্যবাদ।’বলল তরুণটি।
‘আমার বিরাট একটা কৌতুহল।’ বলল আহমদ মুসা।
‘স্যরি, সেটা মেটাবার সাধ্য আমার নেই স্যার।’ বলল তরুণটি।
‘নো স্যরি, ওকে। কিন্তু একটা কথা বলো, বাদেন অঞ্চলের হের হেনরীকে তোমরা চেন?’ আহমদ মুসা বলল।