Iman Dipto Dastan by Enayetullah Altamash -8

ঈমানদীপ্ত দাস্তান ৮ – এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ (Iman Dipto Dastan 8 by Enayetullah Altamash)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

দ্বিতীয় দরবেশ

 ক্রুসেডাররা মসুলের সন্নিকটে পাহাড়ের অভ্যন্তরে যে বিপুল অস্ত্র ও তরল দাহ্য পদার্থ মজুদ করেছিলো, তদ্বারা সমগ্র ইসলামী সাম্রাজ্যকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা সম্ভব ছিলো। কিন্তু সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবীর গোয়েন্দারা মুহূর্ত মধ্যে সব ধ্বংস করে দিলো। ক্রুসেডারদের জন্য সে ছিলো এক প্রচণ্ড আঘাত। তাদের সব আয়োজন, সব নাটক তছনছ হয়ে গেলো।

সংগ্রহটা ছিলো পাহাড়ের বিীর্ণ গুহার অভ্যন্তরে। আগুন লাগার পর বিস্ফোরণে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত মাটি কেঁপে ওঠে, যেনো ভূমিকম্প হয়েছে। কিন্তু কেউ জানে না, ঘটনাটা কীভাবে ঘটলো।

এ ঘটনায় ক্রুসেডারদের বড় মিত্র ইযযুদ্দীনের কোমর ভেঙে গেছে। ক্রুসেডাররা নিশ্চিত, এটা দুর্ঘটনা নয়। বরং সালাহুদ্দীন আইউবীর গুপ্তচরদের কাজ।

ক্রুসেডাররা মসুলের শাসনকর্তা ইষষুদ্দীনকে মিত্র বানিয়ে মসুলের পার্বত্য অঞ্চলে অস্ত্র, গোলা-বারুদ ও রসদপাতি সংগ্রহ করে সুলতান আইউবীর উপর চূড়ান্ত আঘাত হানতে চেয়েছিলো। কিন্তু রাদী নামক একটি মাত্র মেয়ে সঙ্গী হাসান আল-ইদরীসের পরিকল্পনা ও সহযোগিতায় সব ধ্বংস করে দিয়েছে।

জনগণকে এলাকা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ক্রুসেডাররা এক দরবেশের নাটক মঞ্চস্থ করে প্রচার করেছে, এই দরবেশ উক্ত পাহাড়ে ধ্যানে বসবেন এবং খোদা তাকে মসুলের বিজয়ের ইঙ্গিত প্রদান করবেন। তারপর মসুল তথা ইযযুদ্দীনের সাম্রাজ্য দূর-দূরান্ত পর্যন্ত বিস্তীর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু পরিণামে দরবেশও অস্ত্র গুদানের সঙ্গে ধ্বংস হয়ে গেছে।

একদিন কেটে গেছে। মসুলের জনগণ ভীত-সন্ত্রস্ত। রাতে যে বিস্ফোরণটা ঘটলো এবং এই যে মাঠ কেঁপে কেঁপে ওঠেছিলো, ঘটনাটা কী ঘটেছিলো তারা জানে না। বিষয়টা তাদের বলবার মতোও কেউ নেই। দাহ্য পদার্থগুলো কয়েকদিন পর্যন্ত জ্বলতে থাকে। সেই সঙ্গে সুপরিসর গুহায় যেসব রসদ রাখা হয়েছিলো, সেগুলোও পুড়ে যায়। ভয়ে কেউ ওদিকে পা বাড়াচ্ছে না। সকলের ধারণা, এটা হয় দরবেশের কেরামত, নয়তো আল্লাহর গজব। এমনি ভীতিকর এক পরিস্থিতিতে তাদের কানে একটি শব্দ ভেসে আসে। তিনি জাহান্নামে চলে গেছেন। জাহান্নামের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছেন।

ইনি সবুজ আবা পরিহিত আরেক দরবেশ। মাথায় লম্বা সাদা চুল। মুখে আবক্ষ-লম্বিত সাদা দাড়ি। মুখে বার্ধক্যের বলিরেখা। এক হাতে কাঁধ পর্যন্ত লম্বা একটা লাঠি, অপর হাতে পাক কুরআন। প্রথম দরবেশের ন্যায় ইনিও হঠাৎ আত্মপ্রকাশ করেন এবং বাজারে ঢুকে পড়েন। উৎসুক জনতা ভক্তি গদ গদ চিত্তে তার চারপার্শ্বে এসে ভিড় জমায়। মাঝ বাজারে দাঁড়িয়ে ভাবগম্ভীর কণ্ঠে বললেন- তিনি জাহান্নামের আগুনে পুড়ে গেছেন, যিনি বলতেন খোদা তাকে ইশারা দেবেন। যদি তার পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করো, তাহলে তোমরাও সেই জাহান্নামের আগুনে ভস্ম হয়ে যাবে। খোদা রাতের বজ্রনিনাদে তোমাদেরকে ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। আকাশ ছেয়ে যাওয়া সেই কালো ধোঁয়ার কথা মনে করো। আল্লাহর রোষকে ভয় করো। আমার হাতে যে পত্রখানা দেখতে পাচ্ছো, এটি মান্য করো। এটি আল্লাহর কালাম। এটি পাক কুরআন।

আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদেরকে বলুন- এক বৃদ্ধ এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে- এসব কী ছিলো? তিনি কে ছিলেন? আপনি কে? বলুন, রাতে মাটি কেনো কেঁপে ওঠেছিলো? কালো ধোঁয়াগুলো কী ছিলো?

 তিনি আত্মহারা ছিলেন- নতুন দরবেশ বললেন- পাগল ছিলেন। তিনি আল্লাহর রহস্যের জগতে হস্তক্ষেপ করেছেন। আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ বিজয় কিংবা অন্য কোন আগাম সংবাদ দিতে পারেন না। জয় পরাজয়, আনন্দ-বেদনা সবই আল্লাহর হাতে। নিজেকে আল্লাহর দূত দাবি করে তিনি গুনাহগার হয়েছেন। তিনি তার শাস্তি পেয়ে গেছেন। তোমরা গিয়ে দেখে আসো, পাহাড় এখনো জ্বলছে। সেই মিথ্যাবাদী দরবেশকে এখনো যদি তোমরা সত্য বলে মান্য করো, তাহলে তোমরাও পুড়ে মরবে।

বলুন সঠিক কে?- জনতা জিজ্ঞেস করে- আপনি কি সত্য?

 না- দরবেশ উত্তর দেন এবং কুরআনখানা উর্ধ্বে তুলে ধরে বললেন আল্লাহর এই কালাম সত্য। সেই দরবেশকে ভুলে যাও। এই কিতাবের কথা মান্য করো। আল্লাহ এর মধ্যে যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা কোনো মানুষ দিতে পারে না।

দরবেশ সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top