একটু চোখ বুলিয়ে নিন
নিরাশা, হতাশা, দুশ্চিন্তা ও দুঃখ-বেদনা আযাদাবাহকে ঘিরে রেখেছে । সাথে
সাথে এক ধরনের ত্রাস ও ভীতিও তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে । সব মিলিয়ে
তার অবস্থা এমন হয়েছে, যেন তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে আর পায়ের
তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে । সে ঝুঁকে ঝুঁকে প্রাচীরের উপর দিয়ে চলছে।
তার পা কীপছিল। প্রভুর এই নাজুক অবস্থা দেখে তার দুই দেহরক্ষী দ্রুত পাশে
এসে দীড়ায়। সে ডানে বামে উদাস ও হতাশাপূর্ণ দৃষ্টি বুলিয়ে থেমে যায় । দুই
পাশে দুই দেহরক্ষী দেখে তার চেহারা মলিন হয়ে যায়।
“আমি তোমাদের সাহায্য ছাড়াই চলতে পারব” সে দেহরক্ষীদের উদ্দেশে
বলে “আমার সামনে আসার দুঃসাহস করো না”।
তার ধমকে দেহরক্ষী কয়েক কদম পেছনে সরে যায় । আযাদাবাহ অবনত
মস্তক উপরে তুলে সম্মুখপানে অগ্রসর হয়। কিন্তু তার কাধ তাকে সহযোগিতা
করে না। ক্রমেই তার কাধের বাধন টিলে হতে থাকে এবং এক সময় কাধ
দুদিকে ঢলে যায়। যেন তার কাধে এমন ভারী বোঝা চাপানো হয়েছে যা বহন
করা তার সাধ্যের বাইরে । বোঝা তো তার কাধে আগেই চেপে ছিল। তা ছিল
দায়িত্বের বোঝা । হীরা ছিল তার দায়িত্বের অন্তর্গত। এখানে তার পুত্র ছিল
প্রধান সহযোগী । কিন্তু সে-ও আজ পাশে নেই।
সম্রাট উরদূশেরের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ও আস্থাভাজন ছিল আযাদাবাহ।
উরদূশের তাকে ডান হাত মনে করত । কিন্তু উরদূশের ছাড়া আর কারো কাছে
তার মূল্য ছিল না। উরদূশের তাকে বিশাল মর্যাদা দিয়ে রেখেছিল। সে হীরার
মত গুরুতৃপূর্ণ শহর ও তার সীমান্তবর্তা এলাকার শাসনকর্তা ছিল। অনেক
এলাকার সে ছিল স্বাধীন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী । এসব কিছুই ছিল সম্রাট
উরদূশেরের বদান্যতার ফল। সে-ই তাকে এই বিশাল মর্যাদা ও ক্ষমতার আসনে
আসীন করে রেখেছিল । কিন্তু সেই উরদূশেরও আজ মৃত। পরবর্তী সম্রাট হয়ে
পারস্যের রাজ সিংহাসনে যিনি আরোহণ করবেন, তার থেকে আযাদাবাহ তত
বেশি মর্যাদা পাওয়ার আশাবাদী ছিল না। মদীনার মুজাহিদেরা বাস্তবিকই তার
পায়ের তলা থেকে মাটি ছিনিয়ে নিয়েছিল ।
“কিন্তু কেন?” তার এক সালার তাকে এই কথা তখন বলে, যখন সে
নিজের শাহী মহলের খাস কামরায় গিয়ে পৌঁছেছিল। সালার তাকে বলে “মনে
হচ্ছে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই আপনি পরাজয় মেনে নিয়েছেন” । “আপনার
পুত্রের খুনী মদীনার বদ্দুদের ক্ষমা করে দিবেন?” তার নিহত পুত্রের মা রাগত
স্বরে প্রশব ছুঁড়ে মারে ।