Varot Ovijan by Enayetullah Altamash

ভারত অভিযান ৫ – এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ (Varot Ovijan 5 by Enayetullah Altamash)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

কনৌজ এখন গযনীর দখলে। গযনী বাহিনীর সেনাপতি আব্দুল কাদের সেলজুকী কন্নৌজের গভর্নর। কনৌজের মহারাজা রাজ্যপাল গযনী বাহিনী কনৌজ অবরোধের আগেই কনৌজ ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গিয়েছিলেন। কনৌজে মুসলমানদের শাসন প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পর রাজা রাজ্যপাল ছদ্মবেশে কনৌজ এসে মুসলিম শাসক সেনাপতি আব্দুল কাদের সেলজুকীর কাছে পরাজয় স্বীকার করলেন এবং তার লোকদের পুনর্বাসনের জন্যে আব্দুল কাঁদেরের কাছে রাড়ী নামক স্থানে বসতি স্থাপনের অনুমতি চাইলেন। সেই সাথে আবেদন করলেন, তাকে সেখানে নগর স্থাপনের অনুমতি দেয়া হোক এবং রাড়ীকে রাজধানী করে পুনরায় তার সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করার সুযোগ দেয়া হোক।

গভর্নর আব্দুল কাদের সেলজুকী রাজা রাজ্যপালের আবেদনে সাড়া দিলেন। তিনি বললেন–

আপনাকে আমি রাড়ীতে রাজধানী গড়ে তোলার অনুমতি দিচ্ছি। কিন্তু পরাজয় স্বীকার করার পর মুসলিম শাসনাধীন থাকতে হলে আপনাকে যে সব শর্ত মেনে নিতে হবে সেগুলো সুলতান মাহমূদ ঠিক করবেন এবং তিনিই নির্ধারণ করবেন আপনাকে কি পরিমাণ যুদ্ধ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং বাৎসরিক খাজনার পরিমাণ কি হবে? তাছাড়া আপনি কি কি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন, আপনার কোন কোন বিষয় আমাদের কর্তৃত্বে থাকবে তাও সুলতানই নির্ধারণ করবেন।

যে কোন শর্ত মেনে নিয়ে মুসলিম শাসনাধীনে থেকে রাজা রাজ্যপাল তার লোক লস্কর নিয়ে কনৌজের পরিবর্তে রাড়ীকে রাজধানী করে রাজত্ব পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিলেন। যাতে তার অস্তিত্বও টিকে থাকে এবং তার অনুগত সৈনিক ও প্রজারা নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারে।

রাজ্যপাল স্বেচ্ছায় কনৌজ এসে গযনী সুলতানের অধীনে রাড়ীকে রাজধানী করে নিজের লোকদের পুনর্বাসন করতে চান। এ খবর দিয়ে সেই দিনই গযনী সুলতানের কাছে দূত পাঠালেন কনৌজের শাসক আব্দুল কাদের সেলজুকী।

খবর পেয়ে দূতের কাছে আদিঅন্ত সবকিছু জেনে সুলতান মাহমুদ রাজ্যপালের জন্যে পালনীয় শর্তাদি ঠিক করে দিলেন। সুলতান যে সব শর্ত দিলেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল–

রাজ্যপাল কখনো গযনীবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবেন না। গযনী বাহিনীর বিরুদ্ধে কাউকে প্ররোচনা দেয়া বা সামরিক সহযোগিতা করতে পারবেন না।

নতুন রাজধানীতে রাজা রাজ্যপালের যে সব সৈনিক থাকবে তারা শুধু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কাজ করবে; কিন্তু তারা থাকবে গযনীর নিয়ন্ত্রণে। স্বায়ত্তশাসনের মতো রাজ্যপাল সুবিধাদি ভোগ করবেন, প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা ট্যাক্স ইত্যাদি উসূল করবেন। কিন্তু তার সবকিছু থাকবে গযনী সরকারের কাছে জাবাদেহিমূলক। রাজ্যপালের উপর যদি কোন বহিঃশত্রু আক্রমণ করে তবে গযনী বাহিনী তাকে সাহায্য করবে। মোটকথা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে রাজ্যপালের উপর। তবে সার্বিক নিরাপত্তা ও সামরিক কর্তৃত্ব থাকবে গযনী বাহিনীর হাতে! বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধ ও রাড়ীর নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে গযনী বাহিনীর কাছে।

গযনী সুলতানের দেয়া সব শর্তই রাজা রাজ্যপাল মেনে নিলেন এবং তিনি সুলতানকে নির্ধারিত অংকের ক্ষতিপূরণ ও বার্ষিক খাজনা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন।

স্বেচ্ছায় গযনীর গভর্ণর আব্দুল কাঁদেরের কাছে আত্মসমর্পণের পর রাজ্যপাল নিজেই বলেছিলেন, গযনী বাহিনী কনৌজ অবরোধ করার আগেই তিনি তার রাজ্যের সকল রাজকীয় সম্পদ অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে রেখেছিলেন। অতএব সুলতান মাহমূদকে ধার্য করা ক্ষতিপূরণ দিতে তার কোন আপত্তি নেই এবং তাতে তার কোন বেগও পোহাতে হবে না।

সুলতানের নির্দেশ মতো গভর্ণর আব্দুল কাদের রাজ্যপালের কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ ও বার্ষিক খাজনা উসূল করে নিলেন। সুলতান মাহমূদ গভর্ণর আব্দুল কাদের সেলজুকীকে নির্দেশ দিলেন, রাজা রাজ্যপালের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে এবং তার সম্পর্কে সবধরনের সংবাদ সব সময় গযনী পাঠাতে থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top