Pondit Moshai By Sarat Chandra Chattopadhyay

পণ্ডিত মশাই – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (Pondit Moshai By Sarat Chandra Chattopadhyay)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

প্রথম পরিচ্ছেদ

কুঞ্জ বোষ্টমের ছোট বোন কুসুমের বাল্য-ইতিহাসটা এতই বিশ্রী যে, এখন সে-সব কথা স্মরণ করিলেও, সে লজ্জায় দুঃখে মাটির সহিত মিশিয়া যাইতে থাকে ।
যখন সে দু’বছরের শিশু তখন বাপ মরে, মা ভিক্ষা করিয়া ছেলে ও মেয়েটিকে প্রতিপালন করে । যখন পাঁচ বছরের, তখন মেয়েটিকে সুশ্রী দেখিয়া, বাড়ল
গ্রামের অবস্থাপন্ন গৌরদাস অধিকারী তাহার পুত্র বৃন্দাবনের সহিত বিবাহ দেয়; কিন্তু বিবাহের অনতিকাল পরেই কুসুমের বিধবা-মায়ের দুর্নাম উঠে, তাহাতে
গৌরদাস কুসুমকে পরিত্যাগ করিয়া ছেলের পুনর্বার বিবাহ দেয় ।

কুসুমের মা, দুঃখী হইলেও, অত্যন্ত গর্বিতা ছিল। সেও রাগ করিয়া কন্যাকে স্থানান্তরে লইয়া গিয়া, সেই মাসেই আর একজন আসল বৈরাগীর সহিত কন্যার
কণ্ঠীবদল-ক্রিয়া সম্পন্ন করে; কিন্তু ছয় মাসের মধ্যেই এই আসল বৈরাগীটি নিত্যধামে গমন করেন । তবে ইনি কে, কোন্‌ গ্রামে বাড়ি, তাহা একা কুসুমের মা
ছাড়া, আর কেহই জানিত না, কুঞ্জও না। তাহার মা, কাহাকেও সঙ্গে লইয়া যায় নাই । কণ্ঠীবদল ব্যাপারটা সত্য, কিংবা শুধুই রচনা, তাহাও কেহ নিশ্চয় করিয়া
বলিতে পারিত না। এত কাণ্ড কুসুমের সাত বৎসর বয়সেই শেষ হইয়া যায়। সেই অবধি কুসুম বিধবা । সংক্ষেপে এই তাহার বাল্য-ইতিহাস। এখন সে ষোল
বৎসরের যুবতী,_-তাহার দেহে রূপ ধরে না। যেমনই গুণ, তেমনই কর্মপটুতা, আবার লেখাপাড়াও জানে । খুব বড়লোকের ঘরেও বোধ করি তাহাকে বেমানান
দেখাইত না।

এদিকে বৃন্দাবনের বাপ মরিয়াছে, দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়াছে; তাহার বয়সও পঁচিশ-ছাব্বিশের অধিক নয় । এখন সে কুসুমকে ফিরিয়া গ্রহণ করিতে চাহে। সে
কুঞ্জকে পঞ্চাশ টাকা নগদ, পাচ জোড়া ধৃতি-চাদর এবং কুসুমকে পাচ ভরি সোনা ও একশ” ভরি রূপার অলঙ্কার দিতে স্বীকৃত। দুঃখী কুঞ্জনাথ লোভে
পড়িয়াছে। তাহার বড় ইচ্ছা কুসুম সম্মত হয়; কিন্তু কুসুম সে কথা কানেও তোলে না। কেন তাহা বলিতেছি;_-ইহাদের বাপ-মা নাই । ভাই-বোন যে দুখানি
ক্ষুদ্র কুটারে বাস করে, তাহা গ্রামের ব্রাহ্মণপাড়ার ভিতরেই । শিশুকাল হইতেই কুসুম ব্রান্মণকন্যাদের সঙ্গেই বাড়িয়া উঠিয়াছে, একত্রে হর পপ্তিতের পাঠশালে
পড়িয়াছে, খেলাধুলা করিয়াছে । আজিও তাহারাই তাহার সঙ্গীসাথী | তাই এসব প্রসঙ্গেও তাহার সর্বাঙ্গ ঘৃণায় লজ্জায় শিহরিয়া উঠে। ম্যালেরিয়া এবং ওলাউঠা-
প্রপীড়িত বঙ্গদেশে বিধবা হইতে বিলম্ব হয় না। তাহার বাল্যসখীদের অনেকেই, তাহার মত হাতের নোয়া ও সিঁথির সিন্দুর ঘুচাইয়া, আবার জনুস্থানে ফিরিয়া
আসিয়াছে; ইহারা কেহ তাহার মকর-গঙ্গাজল, কেহ সই মহাপ্রসাদ । ছি, ছি, দাদার কথায় সম্মত হইলে, এ কালামুখ কি ইহজন্মে আর এ গ্রামে সে দেখাইতে
পারিবে!

কুঞ্জ কহিল, দিদি, রাজী হ। ধরতে গেলে বৃন্দাবনই তোর আসল বর।

কুসুম অত্যন্ত রাগিয়া জবাব দিল, আসল নকল বুঝিনে দাদা; শুধু বুঝি আমি বিধবা । কেন? একি কুকুর-বেড়াল পেয়েছ যে, যা-ইচ্ছে হবে, তাই করবে? এই

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top