একটু চোখ বুলিয়ে নিন
১
রামলালের বয়স কম ছিল, কিন্তু দুষ্টবুদ্ধি কম ছিল না। গ্রামের লোকে তাহাকে ভয় করিত। অত্যাচার যে তাহার
কখন্ কোন দিক দিয়া কি ভাবে দেখা দিবে, সে-কথা কাহারও অনুমান করার যো ছিল না। তাহার বৈমাত্র বড়
ভাই শ্যামলালকে ঠিক শান্ত-প্রকৃতির লোক বলা চলে না, কিন্তু সে লঘু অপরাধে গুরুদণ্ড করিত না। গ্রামের
জমিদারী কাছারীতে সে কাজ করিত এবং নিজের জমিজমা তদারক করিত। তাদের অবস্থা স্বচ্ছল ছিল। পুকুর,
বাগান, ধানজমি, দু-দশ ঘর বাগদী প্রজা এবং কিছু নগদ টাকাও ছিল। শ্যামলালের পত্বী নারায়ণী যেবার প্রথম
ঘর করিতে আসেন-সে আজ তের বছরের কথা-সে বছরে রামের বিধবা জননীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তিনি
আড়াই বছরের শিশু রাম এবং এই সমস্ত সংসারটা তাহার তের বছরের বালিকা পুত্রবধূ নারায়ণীর হাতে তুলিয়া
দিয়া যান।
এ বৎসর চারিদিকে অত্যন্ত জর হইতেছিল। নারায়ণীও জুরে পড়িলেন। তিন-চারিটা গ্রামের মধ্যে
একমাত্র খানিকটা-পাশকরা ডাক্তার নীলমণি সরকারের একটাকা ভিজিট দুণ্টাকায় চড়িয়া গেল এবং তাহার
কুইনিনের পুরিয়া, আযারারুট-ময়দা সহযোগে সুখাদ্য হইয়া উঠিল। সাতদিন কাটিয়া গেল নারায়ণীর জুর ছাড়ে
না। শ্যামলাল চিন্তিত হইয়া উঠিলেন।
হবে_সেখানে চার টাকা ভিজিট-আসতে পারবেন না।
শ্যামলাল ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, আমিও না হয় চার টাকাই দেব, টাকা আগে না প্রাণ আগে ? যা, তুই
চামারটাকে ডেকে আন্ গে।
নারায়ণী ঘরের ভিতর হইতে সে-কথা শুনিতে পাইয়া ক্ষীণস্বরে ডাকিয়া বলিলেন, ওগো, কেন তুমি এত
ব্যস্ত হচ্ছ ? ডাক্তার না হয় কালই আসবে, একদিনে আর কি ক্ষেতি হবে।
রামলাল উঠানের একধারে পিয়ারা তলায় বসিয়া পাখীর খাচা তৈরী করিতেছিল, উঠিয়া আসিয়া বলিল,
তুই থাক নেত্য, আমি যাচ্ছি।
দেবরটির সাড়া পাইয়া উদ্বেগে নারায়ণী উঠিয়া বসিয়া বলিলেন, ওগো রামকে মানা কর। ও রাম, মাথা
খাস্ আমার, যাস্নে-লম্ষ্্ী ভাইটি আমার, ছি দাদা, ঝগড়া করেতে নেই।
রাম কর্ণপাতও করিল না-বাহির হইয়া গেল। পাচ বছরের ভ্রাতুষ্পুত্র তখনও কাঠিগুলো ধরিয়া
বসিয়াছিল, কহিল খাচা বিনবে না কাকা ?
বুনবো অখন, বলিয়া রাম চলিয়া গেল।
নারায়ণী কপালে করাঘাত করিয়া কাদ কাদ হইয়া স্বামীকে উদ্দেশ করিয়া বলিলেন, কেন তুমি ওকে
যেতে দিলে ? দেখ কি কাণ্ড বা করে আসে।
শ্যামলাল ক্রুদ্ধ ও বিরক্ত হইয়াই ছিলেন, রাগিয়া বলিলেন, আমি কি করব ? তোমার মানা শুনলে না
আমার মানা শুনবে ?