বই রিভিউ: “ছায়াশ্বাপদ, মমি, রত্নদানো-ভলিউম-১, পার্ট-২”
লেখক: রকিব হাসান
বই সিরিজ: তিন গোয়েন্দা
প্রকাশনী: সেবা প্রকাশনী
ভূমিকা:
“তিন গোয়েন্দা” বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজ, যেখানে তিন কিশোর গোয়েন্দা কিশোর পাশা, মুসা আমান, এবং রবিন মিলford নানা অভিযানে অংশ নেয়। রহস্যের জগতে ঢুকে তারা নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় এবং তাদের বুদ্ধি ও সাহস দিয়ে তা মোকাবিলা করে। “ছায়াশ্বাপদ, মমি, রত্নদানো-ভলিউম-১, পার্ট-২” বইটিও সেই ধারাবাহিকতার অংশ, যেখানে তিনটি উত্তেজনাপূর্ণ গল্প একত্রে সংকলিত হয়েছে।
গল্পসমূহের পর্যালোচনা:
১. ছায়াশ্বাপদ
এটি বইটির প্রথম গল্প, যেখানে তিন গোয়েন্দা রহস্যময় এক ভয়ংকর প্রাণীর সন্ধান পায়। প্রাণীটি রাতের অন্ধকারে শহরে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে, এবং মানুষজন এর উপস্থিতি নিয়ে ভয় পেতে শুরু করেছে। কিন্তু তিন গোয়েন্দার মতে, এটি কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়, বরং এর পেছনে লুকিয়ে আছে কোনো গভীর রহস্য।
তাদের অনুসন্ধান শুরু হয়, এবং বিভিন্ন সূত্র সংগ্রহ করে তারা জানতে পারে যে এই “ছায়াশ্বাপদ” আদতে এক ধূর্ত ষড়যন্ত্রের অংশ। লেখক গল্পটিকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বর্ণনা করেছেন, যেখানে পাঠক একবার শুরু করলে শেষ না করে উঠতে পারবে না। প্রতিটি ঘটনার পরতে পরতে রহস্য জড়িয়ে রয়েছে, যা তিন গোয়েন্দাকে সত্য উদঘাটনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
২. মমি
এটি বইটির দ্বিতীয় গল্প, যেখানে তিন গোয়েন্দা একটি প্রাচীন মমির রহস্য উদ্ঘাটনে নিযুক্ত হয়। মিসরের মমি সাধারণত এক রহস্যময় প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়, যা প্রাচীন অভিশাপ, গুপ্তধন এবং অদ্ভুত ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে।
গল্পের শুরুতেই তিন গোয়েন্দা জানতে পারে, একটি প্রাচীন মমি নিয়ে অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটছে। অনেকেই বলছে, মমিটি অভিশপ্ত এবং তার আশপাশে যারা যায়, তারা রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায় কিংবা মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হয়।
তিন গোয়েন্দা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য আবিষ্কার করে, যা গল্পটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। অভিশাপ কি সত্যি নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে মানুষের ষড়যন্ত্র? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে পাঠককে গল্পের শেষ পর্যন্ত যেতে হবে।
৩. রত্নদানো
বইটির তৃতীয় গল্পটি মূলত গুপ্তধন ও মূল্যবান রত্নের সন্ধানের ওপর ভিত্তি করে লেখা। তিন গোয়েন্দা জানতে পারে, এক মূল্যবান রত্ন হারিয়ে গেছে, যা বহুদিন ধরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। এই রত্ন উদ্ধার করতে গিয়ে তারা ভয়ংকর এক চক্রের কবলে পড়ে, যারা যেকোনো মূল্যে এটি নিজেদের দখলে রাখতে চায়।
গল্পটি বেশ অ্যাডভেঞ্চারধর্মী এবং এতে বেশ কিছু উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত রয়েছে, যা পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখবে। লেখক গল্পের প্লট সাজিয়েছেন বেশ দক্ষতার সঙ্গে, যেখানে ধীরে ধীরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে এবং পাঠককে শেষ পর্যন্ত কৌতূহলী করে রাখে।
বিশ্লেষণ ও সমালোচনা:
“ছায়াশ্বাপদ, মমি, রত্নদানো-ভলিউম-১, পার্ট-২” বইটি তিন গোয়েন্দা সিরিজের অন্যতম সেরা সংকলনগুলোর মধ্যে একটি। প্রতিটি গল্পেই রহস্য ও উত্তেজনা রয়েছে, যা কিশোর পাঠকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করবে। লেখক রকিব হাসান খুব সহজ ও সাবলীল ভাষায় গল্পগুলো বর্ণনা করেছেন, যা কিশোর-তরুণদের জন্য উপযোগী।
তবে কিছু কিছু জায়গায় গল্পের গতি একটু ধীর মনে হতে পারে, বিশেষত রহস্য উন্মোচনের প্রাথমিক পর্যায়ে। তাছাড়া, তিন গোয়েন্দার চরিত্রায়নে নতুনত্ব কিছু না থাকলেও, তাদের দলগত কাজ, বুদ্ধিমত্তা এবং সাহসিকতা বরাবরের মতোই চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই বইয়ের আরেকটি শক্তিশালী দিক হলো, প্রতিটি গল্পের মধ্যে এক ধরনের শিক্ষণীয় বার্তা রয়েছে। সত্যের অনুসন্ধান, বন্ধুত্বের শক্তি, এবং অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো মূল্যবোধগুলো সুন্দরভাবে গল্পের মধ্যে উপস্থাপিত হয়েছে।
শেষ কথা:
এই বইটি তিন গোয়েন্দা সিরিজের ভক্তদের জন্য অবশ্যপাঠ্য। যারা রহস্য, অ্যাডভেঞ্চার এবং রোমাঞ্চ ভালোবাসেন, তারা এই সংকলনটি দারুণ উপভোগ করবেন। সহজ ভাষা, উত্তেজনাপূর্ণ প্লট, এবং আকর্ষণীয় চরিত্রায়নের কারণে এটি শিশু-কিশোরদের জন্য আদর্শ বই।
রেটিং:
⭐ ৪.৫/৫ – রহস্য ও রোমাঞ্চপ্রিয় পাঠকদের জন্য একটি দুর্দান্ত পছন্দ!
আপনার কপি কিনুন রকমারি.কম থেকে–
এবং
বইটির ফ্রি সফট কপি ডাউনলোড করুন এখানে-