বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান -ড. মরিস বুকাইলি বাইবেল, আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ (অনুবাদক)

বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান -ড. মরিস বুকাইলি বাইবেল, আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ (অনুবাদক)

বই রিভিউ: “বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান – ড. মরিস বুকাইলি”

ড. মরিস বুকাইলি রচিত “বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান” বইটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাঞ্জল রচনা যা ধর্ম, বিজ্ঞান এবং পবিত্র গ্রন্থের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গভীর আলোচনা করেছে। এই বইটি শুধু ইসলামিক দর্শন বা কোরআন নয়, বরং বাইবেলও কীভাবে বিজ্ঞান ও প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত, তা ব্যাখ্যা করেছে। বইটির মাধ্যমে ড. বুকাইলি ধর্মীয় গ্রন্থের বৈজ্ঞানিক দিক এবং এই গ্রন্থগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সত্যতার সম্পর্ক তুলে ধরেছেন।

বইয়ের বিষয়বস্তু:

বইটি মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে: বাইবেল, কোরআন এবং বিজ্ঞান। ড. বুকাইলি প্রথমে বাইবেল এবং কোরআনের মধ্যে পার্থক্য এবং সাদৃশ্য বিশ্লেষণ করেছেন, তারপর এই গ্রন্থগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণা তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে কোরআনে যেসব বৈজ্ঞানিক তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, অথচ বাইবেল এবং অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থগুলো তেমনভাবে বৈজ্ঞানিক তথ্য সরবরাহ করেনি।

ড. বুকাইলি কোরআনে আল্লাহর সৃষ্টি, মহাবিশ্ব, মানব সৃষ্টি, পুষ্টি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো যে রকমভাবে বর্ণিত হয়েছে, তা আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, আর এটি কুরআনের বিশালত্ব এবং সত্যতার প্রমাণ দেয়। বইতে তিনি বাইবেল এবং কোরআনের মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে তুলনামূলক আলোচনা করেছেন, যেখানে কোরআন অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

লেখনীর শৈলী:

ড. মরিস বুকাইলি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে অত্যন্ত সহজ ভাষায়, কিন্তু গভীরভাবে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন। তিনি জটিল বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো সাধারণ পাঠকদের জন্য পরিষ্কার করে দিয়েছেন। বইটি পড়তে গিয়ে পাঠক সহজেই বৈজ্ঞানিক এবং ধর্মীয় দিকগুলোকে সম্পর্কিত এবং পারস্পরিক সংযোগে দেখতে পারবেন। ড. বুকাইলি অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে প্রমাণ করেছেন যে, কোরআনে যা বলা হয়েছে তা শুধু ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক নয়, বরং তা বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক সত্যও।

তিনি যেসব বৈজ্ঞানিক ধারণার কথা বলেছেন, সেগুলোর পেছনে যুক্তি ও প্রমাণ রয়েছে। বইটি পড়তে গিয়ে পাঠকরা কোরআনের বৈজ্ঞানিক সঠিকতা এবং বাইবেলের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হতে পারবেন। লেখকের লেখনীর গতি এবং ভাষার বোধগম্যতা বইটির আকর্ষণীয়তা বাড়িয়েছে।

পাঠকের প্রতি প্রভাব:

বইটি পড়ার পর পাঠকরা কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও কোরআন এবং বাইবেলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবেন। যারা কোরআন এবং বাইবেল নিয়ে আগ্রহী, তারা বইটির মাধ্যমে দুটি পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থের বৈজ্ঞানিক দিকগুলো সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন। বইটি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিকোণ দিবে।

এছাড়া, যারা বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্ত, তাদের জন্য বইটি খুবই সহায়ক হবে। বইটি বুঝিয়ে দেবে কিভাবে কোরআন বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে একটি শক্তিশালী সংযোগ সৃষ্টি করেছে, যা আজকের দিনে আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত।

সামাজিক গুরুত্ব:

“বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান” বইটি মুসলিম ও খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আন্তঃধর্মীয় আলোচনা ও সমঝোতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই বইটি দেখায় যে, ধর্ম এবং বিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক হতে পারে। বইটি শুধু ইসলামী দর্শন এবং কোরআনের সঠিকতা নিয়ে আলোচনা করেনি, বরং খ্রিস্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেল এবং বৈজ্ঞানিক সত্যগুলোর মধ্যে সম্পর্কের উপরও আলোকপাত করেছে।

বইটির মাধ্যমে ড. বুকাইলি ইসলাম এবং খ্রিস্টান ধর্মের মধ্যে সংলাপের একটি সেতুবন্ধন গড়তে চেয়েছেন, যা আজকের বৈষম্যপূর্ণ পৃথিবীতে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বিজ্ঞান, ধর্ম এবং মানবতার মধ্যে সমঝোতা গড়ে তুলতে বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

শেষকথা:

“বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান” একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী বই যা ধর্মীয় গ্রন্থ এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার সম্পর্ককে সুন্দরভাবে তুলে ধরে। ড. মরিস বুকাইলি তাঁর গভীর গবেষণার মাধ্যমে এটি প্রমাণ করেছেন যে কোরআন আধুনিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। বইটি যেকোনো পাঠকের জন্য যারা ধর্ম, বিজ্ঞান, এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য এক অমূল্য রিসোর্স। এটি কেবল মুসলমানদের জন্য নয়, বরং খ্রিস্টান এবং অন্য ধর্মের অনুসারীদের জন্যও একটি অমূল্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

আপনার কপি কিনুন রকমারি.কম থেকে–

এবং

বইটির ফ্রি সফট কপি ডাউনলোড করুন এখানে-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top