তেল-গ্যাস- নব্য উপনিবেশবাদ - বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন (অব.)

তেল-গ্যাস: নব্য উপনিবেশবাদ – বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন (অব.)

বই রিভিউ: “তেল-গ্যাস-নব্য উপনিবেশবাদ” – বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন (অব.)

বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন (অব.) এর “তেল-গ্যাস-নব্য উপনিবেশবাদ” একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চিন্তাশীল গ্রন্থ যা বাংলাদেশের তেল-গ্যাস খাতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে। বইটি একটি বিশাল গবেষণার ফলস্বরূপ এবং এর মাধ্যমে লেখক বিশ্বের বৃহত্তম তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোর ভূমিকা, তাদের কর্পোরেট আধিপত্য, এবং বাংলাদেশে তাদের কর্মকাণ্ডের গভীর বিশ্লেষণ প্রদান করেছেন। এটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের নেপথ্য চিত্র এবং দেশের স্বাধীনতার প্রতি আগ্রাসী বিদেশি শক্তির প্রভাব সম্পর্কে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়।

বইয়ের পটভূমি: বইটি মূলত তেল ও গ্যাস খাতের উপর নিবদ্ধ হলেও এর প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ এবং তার অর্থনীতির উপর প্রভাব সৃষ্টি করা আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর কর্মকাণ্ডের আলোচনাকেও বিস্তৃত করে। লেখক এ বইয়ে তুলে ধরেছেন, কীভাবে বিদেশি কোম্পানিগুলি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে নিজেদের স্বার্থে শোষণ করছে এবং এর মাধ্যমে আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপদে ফেলছে। “নব্য উপনিবেশবাদ” শব্দটি লেখক ব্যবহার করেছেন বিদেশি শক্তির আধিপত্য এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ বোঝাতে।

লেখকের বিশ্লেষণ: বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেনের লেখনির ধরন অত্যন্ত তথ্যসমৃদ্ধ এবং বিশ্লেষণধর্মী। তিনি শুধুমাত্র তেল-গ্যাসের বাণিজ্যিক দিকগুলির আলোচনা করেননি, বরং এই খাতে সরকারের নীতিগত দুর্বলতা, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্বের দিকগুলোও তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলি বাংলাদেশের গ্যাস ও তেল খাতকে তাদের স্বার্থে পরিচালনা করছে এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ প্রায়শই উপেক্ষিত হচ্ছে। তাঁর বিশ্লেষণ গভীর ও চিন্তাশীল এবং তিনি কোনো তথ্য বা উদাহরণ উপস্থাপন করতে একটিও সঠিক মুহূর্ত মিস করেননি।

মূল বিষয়বস্তু: বইটির মূল বক্তব্য হচ্ছে, তেল ও গ্যাসের খাতটি বাংলাদেশের জন্য একটি বহুমুখী সুবিধার উৎস হতে পারতো, তবে সরকারের একাধিক ভুল নীতি, দুর্নীতি, এবং আন্তর্জাতিক শক্তির হস্তক্ষেপের কারণে এটি জনগণের প্রকৃত স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে। লেখক বিশ্বব্যাপী গ্যাস-তেল কোম্পানিগুলোর আধিপত্যের বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন এবং দেখিয়েছেন কীভাবে এই কোম্পানিগুলি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের সম্পদ শোষণ করছে।

এছাড়াও, বইয়ে ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের তেল-গ্যাস খাতের পরিস্থিতি, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে সম্পর্ক, এবং এসবের কারণে যে বিপর্যয় ঘটতে পারে, তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। লেখক অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তার মতামত তুলে ধরেছেন এবং সবদিক থেকে বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করেছেন—যাতে পাঠক তার বক্তব্যের গভীরে প্রবেশ করতে পারে এবং বুঝতে পারে, কেন এসব খাতের শোষণ বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

মানবিক দৃষ্টিকোণ: বইটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানবিক মূল্যবোধ এবং দেশের জনগণের স্বার্থের প্রতি লেখকের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। তিনি বারবার এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন যে, তেল ও গ্যাস খাতের ব্যবহার বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে হওয়া উচিত, কিন্তু বিদেশি শক্তি এবং তাদের আধিপত্য এই ক্ষেত্রে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লেখক দেশের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য একটি শুদ্ধ জাতীয় নীতি ও পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।

শেষ কথা: “তেল-গ্যাস-নব্য উপনিবেশবাদ” একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী গ্রন্থ যা বাংলাদেশের জনগণকে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে সচেতন করতে সাহায্য করবে। এটি শুধু তেল-গ্যাস খাতের বিষয় নয়, বরং একটি বৃহত্তর সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিষয়, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যত উন্নয়নের পথকে প্রভাবিত করবে। বইটি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের, অর্থনীতিবিদদের, এবং সাধারণ পাঠকদের জন্য একটি আদর্শ পাঠ্যগ্রন্থ। ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন (অব.) এর এই বই বাংলাদেশের তেল-গ্যাস খাতের ভবিষ্যত এবং দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।

আপনার কপি কিনুন রকমারি.কম থেকে–

এবং

বইটির ফ্রি সফট কপি ডাউনলোড করুন এখানে-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top