একটু চোখ বুলিয়ে নিন
আমি যখন হাসপাতালে এসে পৌঁছলাম, সূর্য পশ্চিমে ঢলেছে। মনুমেন্টের ছায়া দীর্ঘতর হয়ে নামছে। রবীন্দ্রসদনের এদিকটাতে মানুষজন গাড়িঘোড়ার উৎপাত অধিক নয়।
মহানগর কলকাতার এই বিশেষ স্থানটি অপেক্ষাকৃত শান্ত নিরিবিলি । বিশেষ করে এই ক্ষণটিতে, যখন গোধূলির সঙ্গে বিদ্যুতের আলোর দৃষ্টি বিনিময় হয়।
ঝাকড়া গাছগুলোর ছায়া রাস্তার ওপর বাকা হয়ে পড়েছে। এখানে-সেখানে নগর কাকের কয়েকটি জলসা চোখে পড়ল। পরিবেশের প্রভাব বলতে হবে । বায়সকুলের সমবেত কাংসাধ্বনিও মোলায়েম কর্কশতাবর্জিত মনে হয়। ট্রাফিকের মোড়টা বায়ে রেখে পি. জি. হাসপাতালে ঢোকার পর মনে হল, লাল ইটের তৈরি কমপ্রেক্স বিল্ডিং আমাকে আন্ত গিলে খাওয়ার জন্য যেন উদ্যত হয়ে রয়েছে।
হাসপাতালে ভিজিটিং আওয়ারের সময় শেষ হয়ে আসছে । মানুষজন চলে ষেতে শুরু করেছে । আমার কর্তব্য কী ঠিক করতে না পেরে কম্পাউন্ডের প্রাচীরঘেষা নিমগাছটির তলায় দীড়িয়ে একটা চারমিনার জ্বালালাম। আমি একজনের খোজ করতে এসেছি। কিন্তু জানিনে কোন ওয়ার্ডে কত নম্বর বেডে আছে। তার ওপর নতুন জাগা
এবং আমি পরিশ্রান্ত । সুতরাং সিগারেট খেয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে নিরাপদ মনে হল।
এই যে দাদা আগুনটা দেবেন? একজন মানুষ আমার সঙ্গে কথা বলল। গায়ে হাসপাতালের ইউনিফরম । আমার যা অবস্থা মনে হল অকৃলে কূল পেয়ে গেলাম । মানুষটা লম্বাটে, বা চোখটা একটু ট্যারা ৷ দারোয়ান হতে পারে, ওয়ার্ডবয় হতে পারে. আবার মেল নার্স হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই । আমি ম্যাচ জ্বালতে যাচ্ছিলাম । বাধা
দিল লোকটি ৷ আহা শুধুশুধু একটা কাঠি নষ্ট করবেন কেন? দিন না সিগারেট” আমার হাত থেকে আধপোড়া সিগারেটটি নিয়ে লোকটি নিজের সিগারেট স্বালাল,
ভাগ্যটা যে ফর্সা একথা মানতেই হবে । না চাইতে হাসপাতালের একজন ঘণ্ম মানুষ পেয়ে যাওয়ায় মনে হল ঘাম দিয়ে জর ছাড়ল । আমি জিগগেস করলাম, আস্ই:……….
লেখক সম্পর্কে
আহমদ ছফা
জন্ম: ১৯৪৩ সাল
গাছবাড়িয়া, চট্টগ্রাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রী বিজ্ঞানে এম. এ গবেষক, বাংলা একাডেমী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন । গল্প. উপন্যাস, কবিতা, গান, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণ কাহিনী মিলিয়ে তিরিশটিরও অধিক গ্রন্থের প্রণেতা ।
সম্পাদকীয় উপদেষ্টা অধুনালুপ্ত দৈনিক গণকণ্ঠ ও প্রধান সম্পাদক সাপ্তাহিক উত্তরণ । বাংলাদেশ লেখক শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সভাপতি । একাধিক রচনা একাধিক ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং হওয়ার পথে। একাধিক সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। জার্মানির ভেৎসলার শহরের মহাকবি গ্যোতের
স্থৃতিবিজড়িত কিয়োঙ্কটি (পানশালা) আহমদ ছফার নামে নামকরণ করা হয়েছে।