Andaluciar Prantore by Abul Asad-13

আন্দালুসিয়ার প্রান্তরে – আবুল আসাদ (Andaluciar Prantore by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

গ্রানাডা থেকে দু’মাইল দূরে ‘মুরের শেষ দীর্ঘশ্বাস’ পাহাড়, স্প্যানিশ ভাষায় ‘Eultimo suspiro del Moro’। স্প্যানিশরা একে এই নামেই ডেকে থাকে স্পেনের শেষ মুসলিম সুলতান আবু আব্দুল্লাহর শেষ বিলাপকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য। পরাজিত ও আত্ম – সমর্পিত সুলতান আবু আব্দুল্লাহ গ্রানাডা নগরীর চাবি বিজয়ী ফার্ডিন্যান্ডের হাতে তুলে দেয়ার পর নিঃস্ব হয়ে নগরী ত্যাগ করে চলে আসেন। এই পাহাড়ে এসে ফিরে দাঁড়ান তিনি অতি সাধের গ্রানাডা কে শেষ বারের মত এক নজর দেখার জন্য। যে কান্না, যে অশ্রুকে সুলতান এই পর্যন্ত রোধ করে রেখেছিলেন, গ্রানাডার উপর শেষ নজরটি পড়ার পর তা আর কোন বাধ মানল না। শিশুর মত অঝোর ধারায় অশ্রু বর্ষণ করতে লাগলেন তিনি। আর তিনি বলতে লাগলেন, ‘আল্লাহু আকবর, আমার মত দুর্ভাগ্য কার!’ এই ঘটনা থেকে মুসলিমরা এই পাহাড়ের নাম দেয়, ‘ফেজ আল্লাহু আকবর।’ আর স্পেনীয় খ্রিষ্টানরা বলেন, ‘মুরের শেষ দীর্ঘশ্বাস।’
মুরের দীর্ঘশ্বাস পাহাড়ের আহমদ মুসা যখন পৌঁছেছিল, তখন সাড়ে তিনটা। আসরের নামাযের তখনও অনেক দেরি। শোয়া চারটায় আসরের নামায এখানে।
আহমদ মুসা নামেনি গ্রানাডায়, সোজা চলে এসেছে মুরের দীর্ঘশ্বাস পাহাড়ে।
কর্ডোভা থেকে যে আন্দালুসিয়ান হাইওয়ে বেরিয়ে এসেছে, সেটা গ্রানাডার বুকের উপর দিয়ে মুরের দীর্ঘশ্বাস পাহাড়ের গিরিপথটি অতিক্রম করে চলে গেছে দক্ষিণে জিব্রালটার প্রণালীর দিকে। গ্রানাডা প্রবেশের অনেক আগেই আহমদ মুসা সিয়েরা নিবেদা পাহাড়ের পাদদেশে, দাঁড়ানো ‘আল হামরার দৃষ্টি মনোহর লাল প্রাসাদের একটা অংশ এবং তার ১২টি অভ্রভেদী চুড়ার একটির একটা ভাঙ্গা অংশ দেখতে পেয়েছিল। বুকে একটা প্রচন্ড খোঁচা লেগেছিল আহমদ মুসার। চোখের সামনে ভীড় করে উঠেছিল অতীতের হাজারো দৃশ্য এবং বুক ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছিল হাজারো কথা।
ভারী হয়ে উঠেছিল আহমদ মুসার চোখ। হঠাৎ নিরব হয়ে গিয়েছিল আহমদ মুসা। গ্রানাডায় পৌঁছে রবার্তো একবার বলেছিল আহমদ মুসা ভাই, গ্রানাডায় আমরা কি দাঁড়াব?
কোন উত্তর আসেনি আহমদ মুসার কাছ থেকে। রবার্টও পেছনে ফিরে আহমদ মুসার মুখের দিকে তাকিয়ে আর কোন প্রশ্ন করেনি।
মুরের দীর্ঘশ্বাস পাহাড়ের শীর্ষদেশের নিচেই প্রশস্ত একটা চত্বর আছে এখানে দাঁড়িয়েই স্পেনের শেষ মুসলিম সুলতান আবু আবদুল্লাহ, তার পরিবার এবং তার সাথীরা গ্রানাডাকে শেষবারের মত দেখেছিল। এই জায়গাটা স্প্যানিশ খ্রিস্টানদের জন্যে গৌরবের জায়গা। প্রতিবছর ২রা জানুয়ারী যখন খ্রিস্টানরা গ্রানাডা বিজয়ের উৎসব করে, তখন এখানে তারা আবু আবদুল্লাহর দু’শ পুত্তলিকা দাঁড় করিয়ে তার চোখে একটা পানির নল লাগিয়ে দেয় যেখান থেকে অঝোর ধারায় ঝরতে থাকে পানি। আর এই জায়গাটা মুসলিমদের জন্য কাঁদার জায়গা।
আহমদ মুসা মুরের দীর্ঘশ্বাস পাহাড়ে উঠে এই চত্বরটিতে এসে দাঁড়াল।
মুরের দীর্ঘশ্বাস পাহাড়টি গ্রানাডার সোজা দক্ষিণে। তার চত্বরটি থেকে ভেগা প্রান্তরে দাঁড়ানো গ্রানাডা নগরীকে অত্যন্ত সুন্দর লাগে। দেখা যায়, গ্রানাডার গা ছুয়ে সেনিল নদী সবুজ ভেগা প্রান্তরের বুক চিরে রুপালী ফিতার মত এগিয়ে গেছে।
চত্বরটিতে উঠে উত্তর দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠল গ্রানাডা। কিন্তু লাল পাথরের নিরাভরণ আলহামরা (যাকে সারাজিনী নাইডু বলেছেন তাজমহলের চেয়ে অধিকতর অনিন্দসুন্দর এবং ঐতিহাসিক স্যার আমীর আলী যার সম্পর্কে বলেছেন আলহামরার দৃশ্য বর্ণনা অত্যন্ত শক্তিশালী কলমের দ্বারাই শুধু সম্ভব) যেন বৈধব্যের পোষাক পরে মুখভার করে দাড়িয়ে আছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top