একটু চোখ বুলিয়ে নিন
১
আহমদ মুসা, আলি আজিমভ ও ওসমান এফেন্দী মেরীদের ঘরের সামনে আসতেই মেরী, মেরীর মা এবং সভেৎলানা দরজা খুলে বেরিয়ে এল।
ওদের চোখে-মুখে আনন্দ।
আহমদ মুসা মেরীদের দিকে তাকিয়ে বলল, হোয়াইট ওলফের কেউ আর এ ঘাটিতে বেঁচে নেই। এখন নিরাপদ তোমরা। তোমরা আর একটু অপেক্ষা কর এখানে। আলি আজিমভ ও ওসমান এফেন্দী ঘাটিটা একবার সার্চ করে আসুক। আমার বন্দীখানায় একটু কাজ আছে।
বলে আহমদ মুসা পা তুলল যাবার জন্যে।
সভেৎলানা আহমদ মুসাকে লক্ষ্য করে বলল, একটু দাঁড়ান জনাব, ফাষ্ট এইডের ব্যাগ একটা পেয়েছি। আপনার আহত স্থানটা বেধে দেবে, এখনও রক্ত ঝরছে ওখান থেকে।
সভেৎলানা ফাষ্ট এইডের ব্যাগটি তুলে দিল আলি আজিমভের হাতে।
আলি আজিমভ সভেৎলানার হাত থেকে ব্যাগটি নিয়ে তাকে শুকরিয়া জানাল। তারপর আহমদ মুসাকে টেনে পাশের বিল্ডিং এর আড়ালে নিয়ে গেল। খুলে ফেলল তার সোয়েটার, জামা। দেড় ইঞ্চি পরিমাণ গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে কাঁধের নিচে বাম বাহুর সামনের উপর।
ব্যান্ডেজ হয়ে গেলে আহমদ মুসা ছুটল সেই দেয়াল ঘেরা একতলা বন্দীখানার দিকে।
বন্দীখানার চারিদিক দিয়ে দেওয়াল। উঁচু দেয়ালের উপর কাটাতারের বেড়া। বন্দীখানায় ঢোকার উঁচু গেট। ইস্পাতের দরজা।
আহমদ মুসা দরজার সামনে দাড়িয়ে প্রথমে পরীক্ষা করল দরজা বিদ্যূতায়িত কিনা? বিদ্যূতায়িত নয় নিশ্চিত হবার পর দরজা খোলার চেষ্টা করল। বুঝল দরজা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার অধীন। কন্ট্রোল রুম থেকেই দরজা খোলা-বন্ধ করা হয়। কিন্তু কন্ট্রোল রুমে যাবার এখন সময় নেই আহমদ মুসার। সে পকেট থেকে লেসার কাটার বের করল। কাটারের লাল সুইচটি চেপে তা দরজার চারদিকে একবার ঘুরিয়ে নিল। ইস্পাতের ভারি পাল্লাটি পড়ে গেল সশব্দে।
ভেতরে প্রবেশ করল আহমদ মুসা। তিন দিকে ঘুরানো একতলা বিল্ডিং।
উত্তরদিকের একটা কক্ষ থেকে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ শব্দ শুনতে পেয়েছিল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসা এগিয়ে গেল উত্তর দিকের ঘর গুলোর দিকে। সবগুলো ঘরের দরজা বন্ধ, মাত্র একটা ঘরের দরজা দেখতে পেল আধ-খোলা অবস্থায়। সে দরজার দিকে এগুলো আহমদ মুসা।
দরজা ঠেলে ধীরে ধীরে ঘরে প্রবেশ করল সে।
ছোট্ট ঘর। কোন আসবাব পত্র নেই। ঘরের এককোণে একটা প্লাষ্টিক বেদির উপর বড় ধরনের একটা পানির ফ্লাক্স। আর ঘরের এক পাশে ষ্টিলের খাটিয়া।
ঘরে ঢোকার পরেই খাটিয়ার উপর নজর পড়ল আহমদ মুসার। একজন যুবক কম্বল মুড়ি দিয়ে পড়ে আছে খাটিয়ার উপর।
আহমদ মুসা কাছে এগিয়ে গেল।
যুবকটির গলা পর্যন্ত কম্বলে ঢাকা। চোখ বন্ধ তার। ঘুমিয়ে পড়েছে। একেবারে তরুণ যুবক। সাদা ইউরোপীয় চেহারা। কিন্তু ঘন কালো কোকড়ানো চুল দেখতে এশিয়ানদের মত। গভীর কালো ভ্রু। মুখে প্রচন্ড ক্লান্তির ছাপ। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে উঠেছে তার মুখের আকর্ষণীয় আভিজাত্য।
দেখেই আহমদ মুসা বুঝল, দেহে কিছু তুর্কি বৈশিষ্ট থাকলেও লোকটা ইউরোপীয়। আগে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ শব্দ শুনেছে, এখন তার কপালে সিজদার চিহ্ন দেকে বুঝল লোকটা মুসলমান।
আহমদ মুসা কিছুটা বিস্মিতই হলো। বিশ-বাইশ বছরের ইউরোপীয় মুসলিম যুবক আর্মেনীয় হোয়াইট ওলফের হাতে কেন?
আহমদ মুসা আরও কাছে এগিয়ে গেল।
যুবকটির সরল-নিষ্পাপ মুখচ্ছবি আহমদ মুসার মনে মায়ার সৃষ্টি করল।
আহমদ মুসা আস্তে আস্তে হাত রাখল তার মাথায়। কপালে হাত ঠেকতেই চমকে উঠল আহমদ মুসা’- কপাল ভীষণ গরম, যুবকটির গায়ে জ্বর। মাথায় হাত রাখতেই যুবকটি চমকে উঠে চোখ মেলল।