একটু চোখ বুলিয়ে নিন
১
বিদ্যুৎ বিভাগের লাইন চেকিং কাজের লক্কড় মার্কা একটা গাড়ি ড্রাইভ করে আহমদ মুসা বার্বারোস বুলেভার্ড থেকে ১০১ নম্বর বাড়ির সংযোগ রাস্তায় প্রবেশ করল।
আহমদ মুসার পরনেও বিদ্যুৎ বিভাগের লাইনম্যানদের পোশাক। মাথার চুল অগোছালো। চেহারায় রোদ পোড়া, ক্লান্ত ভাব। পায়ে পুরানো ময়লা বুট।
বিদ্যুৎ বিভাগের গাড়িটি ১০১ নম্বর বাড়ির সংযোগ রাস্তায় ঢুকতেই দু’জন লোক এসে হাত তুলে গাড়ির সামনে দাঁড়াল।
গাড়ি দাঁড় করাল আহমদ মুসা।
‘কোথায় যাও?’ বলল একজন।
‘একশ’ এক নম্বর বাসা থেকে টেলিফোন করেছে। জরুরি।’ স্থানীয় টার্কিস ভাষায় বলল আহমদ মুসা। এ ধরণের প্রয়োজনীয় কয়েকটি বাক্য সে গত আধা ঘন্টা ধরে মুখস্থ করেছে।
উত্তর শুনে লোক দু’জন একটু দ্বিধায় পড়ে গেল। পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। একজন আরেকজনকে বলল, ‘নিশ্চয় লাইনে কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে, জরুরি টেলিফোন করেছে।’
অবশেষে তারা সামনে থেকে সরে গেল। হাত দিয়ে ইশারা করে যেতে বলল।
হাঁফ ছেড়ে বাঁচল আহমদ মুসা। ওদের দু’জনের পকেটে রিভলবার আছে, তাদের পকেটের ওজন দেখেই তা বুঝতে পেরেছে আহমদ মুসা। সেই সাথে আরও বুঝতে পারল, বাড়িটাকে তারা কড়া পাহারায় রেখেছে।
আহমদ মুসার লক্কড় মার্কা পিকআপ গাড়িটা গিয়ে বাড়ির গাড়ি বারান্দায় থামল।
হাতে প্লাস্টিকের ছোট্ট থলে নিয়ে লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নামল আহমদ মুসা।
গাড়ি বারান্দার পরেই তিন ধাপের সিঁড়ি পেরিয়ে ওপরে উঠলেই মূল বারান্দা। মূল বারান্দাতেই বড় দরজা। এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করা যায় বাড়ির ড্রইং রুমে।
কিন্তু আহমদ মুসা এ দরজার দিকে না এগিয়ে বারান্দাটির পাশ দিয়ে বাড়িটিতে প্রবেশের আরেকটি বড় দরজার দিকে এগোলো।
বাড়িতে প্রবেশের এটাই প্রধান দরজা।
দরজায় দ্রুত নক করল আহমদ মুসা, কাজের তাড়া থাকলে যেমনটা হয়।
দরজা খুলে গেল।
দরজায় দাঁড়িয়ে গুন্ডাকৃতির একজন মানুষ। কঠোর মুখে ভীষণ বিরক্তি প্রকাশ করল আহমদ মুসাকে দেখে।
কিছু বলতে যাচ্ছিল লোকটি। তার আগেই আহমদ মুসা ‘আমি ইলেকট্রিসিয়ান, ভেতর থেকে জরুরি কল করেছে’ বলে অনুমতি না নিয়েই ভেতরে ঢুকে গেল।
লোকটি এমনটা আশা করেনি। সে দু’ধাপ পিছিয়ে গিয়ে দু’হাত প্রসারিত করে বাঁধা দিয়ে বলল, ‘দাঁড়াও, যেতে পারবে না এখন। আমি জিজ্ঞেস করে দেখি, তোমাকে কেউ ডেকেছে কিনা?’
‘যাও, জিজ্ঞেস করে এসো।’ বলল আহমদ মুসা।
লোকটির দু’দিকে প্রসারিত হাত নেমে এলো নিচে।
‘তুমি এখানে দাঁড়াও। আমি ভেতরের লোকের সাথে কথা বলছি।’ বলে লোকটি পকেট থেকে মোবাইল বের করে পেছন ফিরে দাঁড়াল কথা বলার জন্যে।
আহমদ মুসার বাম হাতে ঝুলছিল একটা টুলস ব্যাগ, ডান হাত খালি ছিল।
লোকটি ঘুরে দাঁড়াতেই আহমদ মুসার ডান হাত দ্রুত তার ডাক পকেটে চলে গেল, আর বাম হাতের টুলস ব্যাগ বাম কাঁধে তুলে নিয়ে হাতটি মুক্ত করল।
আহমদ মুসার ডান হাত বেরিয়ে এলো একটা ভাঁজ করা ছোট্ট রুমাল নিয়ে।