Bosphoruser Ahban by Abul Asad-45

বসফরাসের আহ্বান – আবুল আসাদ ( Bosphoruser Ahban by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

কিংরোডের এক জায়গায় এসে রাস্তার পূর্ব পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন। ঘুরে দাঁড়িয়ে আহমদ মুসাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘স্যার, এবার আমাদের কিংরোড ছাড়তে হবে। কাতান পাহাড়কেও। এখন পূর্ব দিকে এগোতে হবে।’
আহমদ মুসা এগোলো রাস্তার পূর্ব পাশের দিকে। পূর্ব দিকের ল্যান্ড স্পেসের দিকে তাকিয়ে দেখল আহমদ মুসা, যা চিন্তা করেছিল তাই। কিংরোডের চার-পাঁচ গজ পরেই এক খাড়া খাদ। খাদের মুখ তিরিশ-চল্লিশ গজের মতো প্রশস্ত।
‘গিরিখাদের গভীরতা কেমন আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
‘স্যার, থাই-মালয়েশিয়া পর্বতমালার এটাই সবচেয়ে বড় ক্যানিয়ন (গিরিখাদ)। এটা শুধু কাতান পর্বত শ্রেণী থেকে তেপাং পর্বতকেই আলাদা করেনি, কাতানকেও প্রায় বিভক্ত করে উত্তরে বহুদূর এগিয়ে গেছে। গভীরতাও স্যার দেড় হাজার ফুটের কম হবে না।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘তাহলে ক্যানিয়নটা পার হয়ে তেপাংগে পৌঁছার কোনো প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ক্যানিয়নের কোথাও আছে নিশ্চয়?’ বলল আহমদ মুসা।
‘ঠিক ধরেছেন স্যার। ক্যানিয়ন বেয়ে একশ’ ফিটের মতো নামলেই অদ্ভুত একটা জায়গা পাওয়া যাবে যেখানে কাতান থেকে বেরিয়ে যাওয়া ও তেপাং থেকে বেরিয়ে আসা দু’টি বারান্দা পরস্পরের দিকে এগিয়ে একটা সেতুর সৃষ্টি করেছে। ওটা পার হয়ে ওপারের ক্যানিয়নের দেয়াল বেয়ে আবার তেপাং-এর মাথায় উঠতে হবে।’ আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন বলল।
আহমদ মুসারা ক্যানিয়নের দিকে এগোলো। ক্যানিয়নের ধারে পৌঁছে নিচের দিকে উঁকি দিয়ে বলল, ‘তোমার সে বারান্দা তো দেখা যায় না। ও, এখানে ক্যানিয়নের এপার-ওপার দুই ধারকেই পরস্পরের দিকে একটু ঝুঁকে যেতে দেখা যাচ্ছে। এতেই আড়াল হয়ে গেছে বারান্দাটা।’
‘এটাও আল্লাহর একটা কুদরত স্যার। এর ফলে বারান্দাটা আড়াল হয়ে গেছে এবং আগন্তুকদের জন্যে এই ক্যানিয়নটা অনতিক্রম্য হয়ে গেছে।’ আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন বলল।
‘হাবিব হাসাবাহরা জানে না?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘হাবিব হাসাবাহই শুধু জানে স্যার, দলের আর কেউ জানে না। তবে মি. হাবিব হাসাবাহও এটা দেখেনি, বর্ণনা শুনেছে মাত্র। সে এদিক দিয়ে আসা-যাওয়ায় আগ্রহী নয় সময়সাপেক্ষ ও কষ্টকর বলে। এজন্যেই সম্ভবত তার টেপাংগো ঘাঁটি থেকে এদিকে আসার একমাত্র সংকীর্ণ গিরিপথটি পাথরের দেয়াল তুলে বন্ধ করে দিয়েছে।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘আসতে চায় না এ পথে, এর চেয়ে তোমরা যাতে তোমাদের ইচ্ছেমতো পেছন দরজা দিয়ে তাদের টেপাংগো ঘাঁটিতে না যেতে পার, এটা নিশ্চিত করা ছিল তার কাছে বেশি জরুরি।’ আহমদ মুসা বলল।
আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন ও সরদার জামাল উদ্দিন দু’জনেই হাঁ করে তাকাল আহমদ মুসার দিকে। তাদের চোখে-মুখে বিস্ময়। বলল সরদার জামাল উদ্দিন, ‘ঠিক বলেছ ভাই। একবার এ পথ দিয়ে আমি অনাহূতভাবেই গিয়েছিলাম তাদের টেপাংগো ঘাঁটিতে। মুখে কিছু না বললেও খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন। তারপরই ঐ পথে দেয়ালটা ওঠে। তখন আমরা বুঝিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তোমার কথাই শতভাগ ঠিক।’
‘এ থেকে এটাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তারা আমাদের একটুও বিশ্বাস করে না, ব্যবহার করে মাত্র।’ আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন বলল।
‘বিশ্বাসের তো প্রশ্নই ওঠে না, যাদের ধ্বংস করাই লক্ষ্য, তাদের ওরা বিশ্বাস করবে কেন? ঠিক আছে। চল, এবার ক্যানিয়নের বারান্দার দিকে নামি।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ঠিক আছে স্যার, আসুন।’ বলে আবদুল কাদের বিশেষ স্থান দিয়ে ক্যানিয়নের গা বেয়ে নিচে নামতে শুরু করল।
দুই ঘণ্টা লাগল ক্যানিয়ন পার হয়ে ওপারে তেপাং পর্বতের উপরে পৌঁছতে।
আহমদ মুসা তেপাং-এ পৌঁছে সামনে তাকিয়ে দেখল, ছোট-বড় অসংখ্য চূড়ায় আকীর্ণ এবড়ো-থেবড়ো পাহাড়ের বুক। বলল আহমদ মুসা, ‘আবদুল কাদের, সামনে তো চলার মতো ট্র্যাক নেই কিংরোডের মতো?’
আবদুল কাদের কিছু বলার আগেই তার দাদা সরদার জামাল উদ্দিন বলল, ‘সামনে চেয়ে দেখ, সব চূড়ার ওপর দিয়ে প্রায় পিরামিডের মতো একটা চূড়া দেখা যাচ্ছে। ওটাই তেপাং পর্বতের প্রাণকেন্দ্র। ওটার গোড়াতেই সেই পুরানো ঘাঁটি, যেখানে এখন হাবিব হাসাবাহরা আড্ডা গেঁড়ে বসেছে। ঐ চূড়ার গোড়াতেই ঘাঁটিতে একটা সুড়ঙ্গ পথ রয়েছে। পথটার বাইরের মুখ পাথরের দেয়াল তুলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চূড়াটিকে আমাদের নাক বরাবর রেখে পথ ডিঙিয়ে টিলা এড়িয়ে আমাদের অগ্রসর হতে হবে।’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top