Caribbeaner DwipDeshe by Abul Asad-26

ক্যারিবিয়ানের দ্বীপদেশে – আবুল আসাদ (Caribbeaner DwipDeshe by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

আহমদ মুসা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি সাগরে যাবার সময় ঘাটে যাদের দেখেছিলে, ফিরে এসেও আবার তাদেরই দেখলে?’
‘জ্বি হ্যাঁ।’ বলল আলী ওরমা।
আলী ওরমা ওকারী গ্রামের জেলে।
আহমদ মুসা তাকে নিয়োগ করেছিল দক্ষিণের মৎস্য ঘাটের উপর নজর রাখার জন্যে।
‘তুমি কটায় নৌকা নিয়ে সাগরে নেমেছিলে?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
‘তিনটায়।’
‘তখন ঐ দু’জনকে কি অবস্থায় দেখেছিলে?’
‘ওরা জেটিতে একটা নৌকায় বসে শশা চিবুচ্ছিল।’
‘নৌকাটা কার?’
‘আমার।’
‘তোমার নৌকায় ওরা বসেছিল?’
‘জ্বি হ্যাঁ।’
‘তারপর?’
‘আমি যখন নৌকার কাছে গেলাম। ওরা যখন বুঝল নৌকা আমার, তখন ওরা নেমে এল। বলল, সাগরে নামবেন বুঝি? ঠিক আছে। আমরা এখানে বসে একটা বোটের অপেক্ষা করছিলাম। আপনাদের বাড়ি কোথায়? আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম। কেন, নরফোকে। বলে ওদের একজন।’
নরফোক টার্কো দ্বীপের মধ্যাঞ্চলের একটি গ্রাম। উত্তর প্রান্তের টার্কো বন্দর থেকে যে সড়কটি দক্ষিণে চলে এসেছে, গ্রামটি তার পাশেই।
গ্রামটি চেনে আলী ওরমা। গ্রামের সবাই কৃষ্ণাংগ। গ্রামের অধিকাংশ লোক আফ্রিকী ধরনের স্থানীয় ধর্মের অনুসারী। অবশিষ্টদের কিছু খৃষ্টান, কিছু মুসলমান। গ্রামে শ্বেতাংগ খৃষ্টান মিশনারীরা একটি গীর্জা ও একটি ক্লিনিক তৈরি করছে।
‘ঘাটে আসা লোক দু’টি কৃষ্ণাংগ। কার বোট? কে আসবে? আমি ওদের জিজ্ঞেস করি। মাছ আসবে। আমাদের একটা আয়োজন আছে। জবাব দেয় ওদের একজন।’
‘তারপর?’ জিজ্ঞেস করল আলী ওরমাকে আহমদ মুসা।
‘আমি নৌকা নিয়ে চলে যাই সাগরে। একটু আড়ালে গিয়ে আমি নজর রাখি কোন নৌকা বা বোট ঘাটের দিকে যায় কিনা। কিন্তু সন্ধ্যার আগে আমি ফেরা পর্যন্ত কোন বোট ঘাটের দিকে আসেনি।’ থামল আলী।
‘বলে যাও।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আমি ঘাটে ফিরে দেখলাম লোক দু’টি নেই। ভাবলাম অপেক্ষা করে চলে গেছে। ঘাটের আশপাশ ভালো করে দেখে নিয়ে চিন্তা করলাম নিকটের কোন গ্রামে মাগরিবের নামায আদায় করে আবার চলে আসব। এই উদ্দেশ্যে ঘাট থেকে উঠে অল্প কিছু দূর আসতেই দেখলাম, নরফোক গ্রামের ঐ দু’জন ঘাটের দিকে আসছে। অবাক হলাম তারা আমাকে দেখে যেন চমকে উঠল। কিছুটা বিব্রত কণ্ঠে কৈফিয়তের সুরে বলল, এদিকটা একটু ঘুরে এলাম। দেখি বোটটা এসেছে কিনা। আমি কিছু বললাম না। ওরা চলে গেল। তবে আমি একটা গাছের আড়ালে এসে একটু দাঁড়ালাম। দেখলাম, আড়াল হবার পর ওরা আর এগুলো না। রাস্তার পাশেই একটু উঁচু টিলা ছিল। তারা ওখানে উঠে ঝোপের আড়ালে অদৃশ্য হলো। আমি আর অপেক্ষা না করে চলে এসেছি।’
আলী থামলেও আহমদ মুসা কোন কথা বলল না।
ভাবছিল আহমদ মুসা।
বলল একটু পর, ‘এ ধরনের ঘটনা আর তো ঘটেনি?’
‘জ্বি তাই।’ বলল আলী।
‘মাছের নৌকার জন্যে এত দূর আসবে, এইভাবে অপেক্ষা করবে এটাও বাস্তব নয়।’
‘জ্বি।’
‘ওদের আচরণ ও কথার মধ্যে সঙ্গতি নেই।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আমারও তাই মনে হয়েছে স্যার।’
আবার ভাবনায় ডুবে গেল আহমদ মুসা।
অল্প পরে মুখ তুলে জর্জের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘চল, আমরা ক’জন সেখানে যাই। লোক দু’জন যদি এখনও থাকে, তাহলে ওদের ধরলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
মিটিং মুলতুবি করে উঠল সবাই।
জর্জ, ইসহাক আব্দুল্লাহ ও আবু বকরকে নিয়ে আহমদ মুসা এগুলো ঘাটের দিকে। পায়ে হেঁটে। সাথে থাকল আলী।
কিন্তু সেই উঁচু টিলায়, যেখানে আলী নরফোকের দু’জন লোককে দেখে গিয়েছিল, কাউকে পাওয়া গেল না।
অন্ধকারে চুপি চুপি তারা ঘাট পর্যন্ত গেল, এদিক ওদিক খুঁজল। কিন্তু কাউকে পেল না। ফিরল তারা।
সেই টিলা পার হয়ে কিছুটা পথ এসে আহমদ মুসা থমকে দাঁড়াল। সবাউ দাঁড়াল আহমদ মুসাকে ঘিরে।
আহমদ মুসা কাছে টেনে নিল আলীকে। ফিসফিস করে তাকে বলল, ‘তোমাকে এখানে থেকে যেতে হবে। তুমি এখানে যে কোন স্থানে আত্মগোপন করে থেকে চারদিকে নজর রাখবে। সেই দু’জন কিংবা অন্য কাউকে পাও কিনা, সেটা খোঁজ করতে হবে। রাস্তা নয়, রাস্তার বাইরে দুর থেকে সব দিকে নজর রাখবে।’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top