Clone Sorojontro by Abul Asad-52

ক্লোন ষড়যন্ত্র – আবুল আসাদ (Clone Sorojontro by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

গৌরীর ডাইরীর পাতা উল্টিয়ে চলেছে আহমদ মুসা।
ডাইরির পাতার দুই-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত লেখা।
বিস্মিত্ আহমদ মুসা! স্বগত কন্ঠে বলল, তবে যে গৌরী বলল সুড়ঙ্গে আমাকে প্রবেশ করতে দেখে সে ডাইরি লিখেছে, যা পড়ার জন্যে আমাকে বলেছে। কিন্তু পনের বিশ মিনিটে কি কেউ এতটা লিখতে পারে!
ডাইরির পাতা উল্টিয়েই চলল আহমদ মুসা।
ডাইরির পাতার দুই-তৃতীয়াংশের মত শেষ হলো।
শেষের কয়েকটা পাতা লাল কালিতে লেখা।
আহমদ মুসার বুঝার বাকি রইল না নিশ্চয় এই লাল কালির লেখাগুলোই গৌরী তার জন্যে লিখে গেছে।
পড়া শুরু করল আহমদ মুসা:
‘আমার নিজের কথা শেষ করতে পারলাম না। তোমাকে সুড়ঙ্গে দেখে…, মনে কিছু করো না ‘তুমি’ বলেই সম্বোধন করলাম। তোমাকে সেদিন হোটেলে দেখার পর থেকেই কেন জানি মনে হচ্ছে, শত বছরের চেনা তুমি আমার, যাকে ‘আপনি’ বলে দূরে ঠেলে দেয়া সম্ভব নয়। যে কথা বলছিলাম, তোমাকে সুড়ঙ্গে দেখার পরেই আমার মনে হলো আমার সময় শেষ। তোমাকে আমার সাহায্য করতেই হবে। সেটা শুধু তোমার জন্যে নয়, আমার জন্যেও। আমার কথা, যা এ পর্যন্ত লিখেছি, পড়লে দেখতে পাবে, আমি আমাকে, আমার পরিবারকে মুক্ত করার জন্যে ব্ল্যাক সানে যুক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু এখানে এসে সবই হারিয়েছি। তুমি আর কি কি করবে সব আমি জানি না, কিন্তু তুমি আমার সেভিয়ার তা নিশ্চিত। তোমার দ্বারা মুক্তি ঘটবে আমার আত্নার, এই অন্ধকার জীবন থেকে। আমি আনন্দিত। দু:খ আমার একটাই আমার পরিবারকে আমি রক্ষা করতে পারলাম না। এই রক্ষা করতে না পারার দু:খ আমার, সে কথা তোমাকে বলার জন্যেই আমার এই লেখা।
সেটা আমার পরিবারের চরম দুর্ভাগ্যের কাহিনী, আমার আতংকের কাহিনী।
আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের আতংক আমার মাকে নিয়ে। আমার ২২ বছর বয়স পর্যন্ত মাকে নিয়ে আমার এই আতংক মনে জাগেনি। আমার মা আমাদের পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু। আমরা দু’বোন ও আমার বাবার প্রাণ যেমন আমাদের মা, তেমনি আমরাও তার প্রাণস্বরূপ। অত্যন্ত সুখী ছিল আমাদের পরিবার।
আমার নির্মেঘ এই সুখের আকাশে প্রথম কালো মেঘ মাথা তুলল, আমার ২২ বছর বয়সে, যা আগেই বলেছি। শিক্ষা জীবনের চৌকাঠ পেরিয়ে সবে বন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছি একজন জুনিয়র অধ্যাপক হিসাবে। শুরুর দিকে বাড়ি থেকে গিয়েই ক্লাস নিতাম, রাইন হাইওয়ে ও রাইন রেল কমিউনিকেশন এত সুন্দর যে, আমাদের বাড়ি থেকে বনকে ‘নেক্সট ডোর’ বলে মনে হতো। এর ফলে বাড়িতে অনেক বেশি সময় দিতে পারতাম। প্রথম ঘটনাটা ঘটল এই সময়ের এক রোববারে। দিনটা ছিল মেঘলা-যে কোন সময় বৃষ্টি আসবে এরকম অবস্থা। দু’তলায় আমার শোবার রুম থেকে নামছিলাম, নামতে নামতে দেখলাম সিঁড়ির জানালা খোলা। এগিয়ে যেয়ে জানালা বন্ধ করলাম। ঘুরে দাঁড়িয়ে সিঁড়ির ধাপের দিকে আসছিলাম। দেখলাম আমার আম্মার শোবার ঘরের পাশে তার ড্রেসিং রুমের ছোট ভেন্টিলেশনটা খোলা, যা সব সময় ভিতর থেকে বন্ধ থাকে। বুঝলাম, সাপ্তাহিক ক্লিনিং-এর সময় নিশ্চয় ক্লিনার বেচারা ভেন্টিলেশনটা বন্ধ করতে ভুলে গেছে।
আমি ভেন্টিলেটরের দিকে এগোলাম। ইচ্ছা ছিল, মাকে ডেকে দেখি, যদি তিনি ঘরে থাকেন, তাহলে ভেন্টিলেটর বন্ধ করতে বলব।
ছোট্ট জানালা দিয়ে আমি উঁকি দিলাম।
এ জানালা দিয়ে মা’র ড্রেসিং রুমটা দেখা যায়। এর পরেই মায়ের বেড রুম।
ভিতরে তাকিয়েই অপার বিস্ময় নামল আমার চোখে-মুখে! মায়ের মাথা ভরা কালো চুল খোলা, এলোমেলো। হেয়ার ড্রাইয়ে শুকাচ্ছেন। বিস্ময়ে আমার দুই চোখ ছানাবড়া- মায়ের মাথা থেকে সাদা চুল কোথায় গেল! তার মাথার সামনের দিকে অন্তত কয়েক গুচ্ছ চুল সাদা। তিনি চুলে কালার ব্যবহার কোন সময়ই করেন না। তাহলে সাদা চুল গেল কোথায়? কৌতুহল আমার তুংগে। জানালা থেকে সরে আসতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু হলো না আসা। মা ড্রেসিং টেবিলে বসে ছিলেন। দেখলাম, তিনি দ্রুত ড্রয়ারের লক খুলে ছোট একটা বক্স বের করলেন। বক্সটি দ্রুত খুললেন। সাদা কালারের মত কিছু বের করলেন। তারপর সাদা কলপটি তুলে নিয়ে খুব যত্নের সাথে নির্দিষ্ট কয়েকটা গুচ্ছের উপর সাদা রংয়ের স্প্রে শুরু করলেন। অবাক বিস্ময়ে আমি দেখলাম, তার মাথার সামনের নির্দিষ্ট কয়েক গুচ্ছ চুল সাদা হয়ে গেল, যেমনটা আমরা দেখে আসছি।
ডায়িংটা ধীরে ধীরে শেষ করার সংগে সংগেই মা ডায়িং উপকরণগুলো ড্রয়ারে তালাবদ্ধ করে দরজা খুলে ড্রেসিং রুমের বাইরে চলে গেলেন। কৌতুহল ও বিস্ময় আমাকে এতটাই বিব্রত করেছিল যে, আমি কিছু বলতে পারলাম না। আমিও নেমে এলাম সিঁড়ি দিয়ে। ডাইনিং-এ মায়ের সাথে আমার দেখা হলো। বিষয়টা নিয়ে তাকে কিছু বলতে গিয়েও গলায় আটকে গেল। মন যেন কোন কারণে প্রবল বাধা দিল!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top