একটু চোখ বুলিয়ে নিন
১
আহমদ মুসার গাড়ি যখন চলছিল ক্যামেরুন ক্রিসেন্টের অফিসের দিকে, সেই সময় আহমদ মুসার কানে আযানের শব্দ ভেসে এল ‘ক্যামেরুন ক্রিসেন্ট’ –এর মসজিদ থেকে।
আহমদ মুসা ব্রেক কষল গাড়ির।
‘আমাদের সবাইকে এখানে নামতে হবে?’ বলল ওমর বায়া।
‘হ্যাঁ। তবে আমরা শুধু নামায পড়ব এখানে’। বলল আহমদ মুসা।
‘সময় আছে, গন্তব্যে পৌঁছে আমরা নাময পড়তে পারতাম না?’ ওমর বায়া বলল।
‘পারতাম। কিন্তু নামাযের আহবান যে কানে এল?’
‘যেখানে এ আহবান কানে আসবে, সেখানে নামাযের জন্যে দাঁড়ানো কি অপরিহার্য?’
‘অপরিহার্য নয়, কিন্তু এই মুহূর্তে অপরিহার্য মনে হচ্ছে’।
‘এই মুহূর্তে? কেন?’
‘এমন একটা বিজয় হাতে নিয়ে ফিরছি, যা চাওয়ার চেয়ে বেশী। যিনি এ বিজয় দিয়েছেন, তার ইবাদতের আহবান উপেক্ষা করে এগুতে পারছি না। তাঁর কাছে হাজির হওয়ার এ সুযোগ আমার কাছে অমূল্য মনে হচ্ছে’।
বলল আহমদ মুসা ডঃ ডিফরজিস-এর দিকে চেয়ে বলল, ‘প্লিজ ডক্টর, একটু কষ্ট করুন’। তারপর ওকোচার দিকে চেয়ে বলল, একটু বস কেমন?’
আহমদ মুসা ও ওমর বায়া গাড়ি থেকে নামল।
পুরো ৪৫ মিনিট সময় লাগল আহমদ মুসাদের ফিরে আসতে।
মুসল্লিদের অনেকেই, যারা খবর জানে, বিস্মিত হয়েছে এবং মৌমাছির মত ছেঁকে ধরেছে আহমদ মুসাকে। তাদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে ফিরতে সময় আরও বেশী খরচ হলো।
গাড়িতে উঠতে উঠতে আহমদ মুসা ডঃ ডিফরজিসকে বলল, ‘মাফ করবেন, বেশ দেরী হয়ে গেল’।
‘একটি সম্মিলিত প্রার্থনার জন্যে ৪৫ মিনিট সময় কি বেশী?’ বলল ডঃ ডিফরজিস।
‘ধন্যবাদ। তবে প্রার্থনার জন্যে সময় বেশী লাগে না। কিন্তু ‘আযান’ বা আহবানের পর প্রার্থনায় যোগদানের জন্যে আধাঘন্টার মত সময় দেয়া হয়। এতেই সময় বেশী যায়’। আহমদ মুসা বলল।
‘তোমার অবিশ্বাস্য ধরনের কাজ এবং সাহস আমাকে বিস্ময়বিমূঢ় করেছে, কিন্তু তার চেয়েও বিস্মিত হয়েছি ইশ্বরের প্রতি তোমার ভালোবাসা দেখে। আজ তো আধুনিকতা ও ধার্মিকতা পরস্পর বিরোধী হয়ে দাঁড়িয়েছে’। বলল ডঃ ডিফরজিস।
‘আধুনিকতা যদি হয় আধুনিক জ্ঞানে সজ্জিত হওয়া, তাহলে সে আধুনিকতা স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করে। আর আধুনিকতা বলতে যদি বুঝানো হয় জ্ঞান ও বুদ্ধির দুয়ারে তালা মের আধুনিক পণ্য-সম্ভারের মধ্যে নিমজ্জিত থাকা, তাহলে এই আধুনিকতা অবশ্যই স্রষ্টাকে ভুলিয়ে দেবে’। আহমদ মুসা বলল।
‘সুন্দর বলেছ’। বলে একটু থামল ডঃ ডিফরজিস। তারপর আবার বলল, ‘তুমি আমার ছেলের বয়সের। শুরু থেকেই একটা তীব্র কৌতুহল মনে জাগছে। জিজ্ঞেস করব?’
‘ছেলের মতও বলতে পারেন। কুমেটে আপনর ছেলে এবং আপনার বৌমা ডেবরার সাথে আমার দেখা হয়েছে’।
‘দেখা হয়েছে? তাদের সাথে? কিন্তু ওরা তো ব্ল্যাক ক্রস-এর হাতে বন্দী’।
‘ক্যামেরুনে আসার আগে তাদের সাথে আমি একই রেষ্টহাউসে ছিলাম কয়েকদিন’।
বলে আহমদ মুসা তাদেরকে কিভাবে উদ্ধার করে তার কাহিনী বলল।
বিস্ময়ে প্রায় বাকরোধ হয়ে গেল ডঃ ডিফরজিসের। কিছুক্ষণ পর বলল, ‘তুমি… তুমি উদ্ধার করেছ তাদেরও! কবে?
আহমদ মুসা তারিখ বলল।
ডঃ ডিফরজিস বলল, ‘আমি তো ঐ তারিখেই কিডন্যাপ হই’।
‘আমরা জানি। কিড্ন্যাপ ঠেকাবার জন্যে আমরা বিমান বন্দরে গিয়েছিলাম। কিন্তু দেরী হয়েছিল। যখন ওরা কিডন্যাপ করে পালাচ্ছিল, তখন আমরা রাস্তায়। আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম’।
‘আমার কিডন্যাপ হওয়ার বিষয় আগেই জানতে?’
‘অনুমান করেছিলাম’।
‘কিভাবে’?’
‘সে অনেক কথা’।
‘আমার ছেলে ও বৌমাকে উদ্ধার করার পর কি করলে?’
আহমদ মুসা সংক্ষেপে কাহিনী বর্ণনা করল। তারপর বলল, ‘উদ্ধারের পর যখন ওদের কিডন্যাপ করার কারণ জানতে পারলাম এবং যখন জানলাম আপনি কুমেটে আসছেন, তখন নিশ্চিত হয়েছিলাম আপনার ছেলে ও বৌমা ওঁদের হাতছাড়া হবার পর ওরা আপনাকে কিডন্যাপ করবে’।
‘অসাধারণ বুদ্ধি তোমার। প্রশংসা করে তোমাকে খাটো করবো না। আমার ছেলে ও বৌমা কেমন ছিল? ওদের কোন প্রকার ক্ষতি হয়নি তো? শয়তানরা যে বার বার বলেছে আমার ছেলে ও বৌমা ওদের হাতে রয়েছে?’
‘আপনাকে দুর্বল করার জন্যে মিথ্যা কথা বলেছে। আপনার ছেলে ও বৌমা ভালই ছিল’।
‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন। তোমার এসব কথা শুনে আমার কৌতুহল আরও বেড়েছে। আমার প্রশ্নের কি জবাব দেবে?’
‘কি প্রশ্ন?’