একটু চোখ বুলিয়ে নিন
ভাদ্র মাসের সন্ধ্যা । আকাশে মেঘ আছে। লালচে রঙের মেঘ । যে মেঘে বৃষ্টি হয়
না, তবে দেখায় অপূর্ব । এই গাঢ় লাল, এই হালকা হলুদ, আবার চোখের নিমিষে
লালের সঙ্গে খয়েরি মিশে সম্পূর্ণ অন্য রঙ । রণ্ডের খেলা যিনি খেলছেন মনে হয়
তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভূগছেন।
শফিক চা খেতে খেতে আকাশের রঙের খেলা দেখছে। সে চা খাচ্ছে ধানমণ্ডি
দশ নম্বর রোডের মাঝখানে একটা চায়ের দোকানে তস্থায়ী দোকান ছিল, এখন
মনে হয় স্থায়ী হয়ে গেছে। হালকা-পাতলা শিরি র পাশে দোকান। শিরিষ
হা
হচ্ছে। (6১৯
শফিক চা শেষ করে পকেটে হুর ্ন দেখে মানিব্যাগ আনে নি। এরকম
ভুল তার সচরাচর হয় না। তারক কাপ চা খেতে ইচ্ছা করছে। চায়ের সঙ্গে
সিগারেট । শফিক মনস্থির বৃট৬ পারছে না। সঙ্গে মানিব্যাগ নেই-_এই তথ্য
দোকানিকে আগে দেবে, সরকি চা-সিগারেট খেয়ে তারপর দেবে!
শফিকের হাতে বিভূতিভূষণের একটা উপন্যাস। উপন্যাসের নাম ইছামতি।
বইটির দ্বিতীয় পাতায় শফিক লিখেছে__’অবন্তিকে শুভ জন্মদিন” । বইটা নিয়ে
শফিক ব্বিত অবস্থায় আছে। বইটা অবস্তিকে সে দিবে, নাকি ফেরত নিয়ে যাবে ?
এখন কেন জানি মনে হচ্ছে ফেরত নেওয়াই ভালো ।
অবন্তির বয়স ষোল । সে ভিকারুননিসা কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে।
শফিক তাকে বাসায় অংক শেখায় । আজ অবস্তির জন্মুদিন। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে
শফিককে বলা হয় নি। অবস্তি শুধু বলেছে, তের তারিখ আপনি আসবেন না।
ওইদিন আমাদের বাসায় ঘরোয়া একটা উৎসব আছে। আমার জন্মদিন
শফিক বলেছে, ও আচ্ছা!
লেখক সম্পর্কে
কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ‘নন্দিত নরকে’র মাধ্যমে আত্নপ্রকাশ। এই উপন্যাসে নিম্নমধ্যবিত্ত এক পরিবারের যাপিত জীবনের আনন্দ-বেদনা, স্বপ্ন, মর্মান্তিক ট্রাজেডি মূর্ত হয়ে উঠেছে। নগর জীবনের পটভূমিতেই তার অধিকাংশ উপন্যাস রচিত। তবে গ্রামীণ জীবনের চিত্রও গভীর মমতায় তুলে ধরেছেন এই কথাশিল্পী। এর উজ্জ্বল উদাহারণ ‘অচিনপুর’, ‘ফেরা’, মধ্যাহ্ন। মুক্তিযুদ্ধ বারবার তার লেখায় ফুঠে উটেছে। এই কথার উজ্জ্বল স্বাক্ষর ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘১৯৭১’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নির্বাসন’ প্রভৃতি উপন্যাস। ‘গৌরিপুর জংশন’, ‘যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ’, চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক’ -এ জীবন ও চারপাশকে দেখার ভিন্ন দৃষ্টিকোণ মূর্ত হয়ে উঠেছে। ‘বাদশা নামদার’, ‘মাতাল হাওয়া’য় অতীত ও নিকট-অতীতের রাজরাজরা ও সাধারণ মানুষের গল্প ইতিহাস থেকে উঠে এসেছে।
গল্পকার হিসেবেও হুমায়ূন আহমেদ ভিন্ন দ্যুতিতে উদ্ভাসিত। ভ্রমণ কাহিনি, রূপকথা, শিশুতোষ, কল্পবিজ্ঞান, আত্নজৈবনিক, কলামসহ সাহিত্যের বহু শাখায় তার বিচরণ ও সিদ্ধি।
হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ এবং মৃত্যু ১৯ জুলাই ২০১২।