একটু চোখ বুলিয়ে নিন
কফির কাপটা মুখে ভুলতে গিয়ে থমকে গেলেন চীফ এজিনিয়ার আর.টি. লারসেন। সামনে দীড়ানো লোকটার মুখের দিকে চাইলেন ডুরু-কুঁচকে । তারপর ভাঙা বাংলায় বললেন, ‘বলো কি, আবদুল! এটা সম্ভব?
ফ্রিন্টয়ারের আবদুর রহমান উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, ‘হামি নিজে তিন দিন দেখছি, স্যার । কেউ হামার কোথা বিশওয়াস কোরে না। আখুন আপনার কাছে আইছি, হুজুর, কসম খোদার……’
‘আামাকে দেখাতে পারবে? ওকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন লারসেন। ‘আলবৎ! আর আধা ঘোন্টা পর আইবো তারা । উও স্পীভডবোট হামাদের না, ফিশারীরও না। আজহি দেখাতে পারি, হাজুর!’
“বেশ, তুমি যাও। ঠিক সাতটায় আসছি আমি ভ্যামের ওপর ।’
খুশিমনে সাহেবের বাংলো থেকে বেরিয়ে এল আবদুর রহমান। একবার ভাবল, আজ যদি ওরা না আসে? বোকা বনতে হবে সাহেবের কাছে। তারপর মাখা ঝাকিয়ে মনে মনে বলল–রোজ আসছে, আজ আসবে না কেন, নিশ্চয়ই আসবে।
কাপ্তাই বাধের কাজ শেষ, পাওয়ার হাউজ তৈরির শেষ পর্বের কাজ চলছে জোরেশোরে। তুমুল ব্যস্ততা, চারদিকে সাজ-সাজ রব, প্রেসিডেন্ট আসবেন ভ্যাম ওপেন করতে । এরই মধ্যে এই ফ্যাকড়া ।
আজ আট বছর ধরে প্রজেক্টের সার্ভে ডিপার্টমেন্টে কাজ করছে আবদুর রহমান।
কাপ্তাইকে সে ভালবেসে ফেলেছে সমস্ত হৃদয় দিয়ে । ওর চোখের সামনেই তিল তিল করে বছরের পর বছর ধরে তৈরি হয়েছে এই বাধ । প্রজেক্টের খুঁটিনাটি ওর নখদর্পণে । ড্যামের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গলের দিকে লক্ষ রাখার গুরু দায়িত্ব ওর ধারণা খরই উপর ন্যস্ত আছে। সীমান্ত প্রদেশের আবদুর রহমান এখানে এসে সবার প্রিয় আবদুল হয়ে গেছে। সাহেব সুবোরা স্পীড বোটে করে বেড়াবেন, কি পাহাড়ী গ্রাম দেখতেই যাবেন কিংবা বা ষাট মাইল উত্তরে যাবেন হরিণ শিকারে, সঙ্গে যাবে কে-ওই আব্দুল । সবকিছুতেই ওর অক্লান্ত উৎসাহ। এই পার্বত্য চট্টগ্রামের কোথায় “সে যায় নি? চল্লিশ মাইল পায়ে হেঁটে দুর্গম লুসাই হিলেও গিয়েছে সে সাহেবদের সঙ্গে।
সঙ্গে।
ক’দিন ধরে একটা ব্যাপার লক্ষ করে বড় উৎকন্টিত হয়ে উঠেছে আবদুল ভিতর ভিতর । আর দু’দিন পর প্রেসিডেন্ট আসছেন প্রজেক্ট ওপেন করতে | ছোট শহরটায় তাই অস্বাভাবিক চাঞ্চল্য । চারদিকে সাজ সাজ রব পড়ে গিয়েছে। প্রচুর আই.বি., সি.আই.ডি. ঘুরঘুর করছে শহরের আনাচেকানাচে । কিন্তু আই.বি. কর্মতৎপরতা বলে এই ঘটনাকে হালকা করে দেখতে পারেনি সে। তাই যদি হয় তবে ভুড়্ভুড়ি কিসের?
এক টিপ খইনি নিচের ঠোট আর দাতের ফাঁকে যত্নের সাথে ছেড়ে দিয়ে সেটাকে ঠিক জাযনগামত বসিয়ে নিল আবদুল। তারপর স্পিলওয়ের গার্ডরূমে ঢুকে দোনলা বন্দুকধারী দেশোয়ালী ভাইয়ের সাথে অনর্গল পশতু ভাষায় কিছুক্ষণ বাতচিত করল।
ঠিক সাতটায় দূর থেকে লারসেন সাহেবকে আসতে দেখে এগিয়ে গেল| সন্ধ্যার আর দেরি নেই।
কিছুক্ষন চেয়ে থাকার পর রিজারভয়েরের মধ্যে দূরে একটা স্পীভ-বোট দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠলেন মি. লারসেন। উঁচু একটা টিলার আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেল সেটা । আরও আধ ঘণ্টা পর আবদুলের কথামত সত্যিই পানির উপরে ছোট ছোট বুদ্ধদ দেখা গেল। শক্তিশালী টর্চ জ্বেলে দেখা গেল সেই টিলার দিক থেকে বুদবুদের একটা রেখা ক্রমেই এগিয়ে আসছে বাধের দিকে । গজ পনেরো থাকতে এগোনোটা থেমে গেল- এবার এক জায়গাতেই উঠতে থাকল বুদুদ ।
মি, লারসেন উত্তেজিত হয়ে বললেন, “মাই গড! আশ্চর্য! ॥ তুমি ছুটে যাও তো স্টোর খেকে আমার নাম করে দুটো আাকুয়া ল্যাঙ (ডুবুরীর পোশাক) নিয়ে এসো এক্ষুণি। আর যাওয়ার পথে লোকমানকে বলে যাও আমাদের স্পীড- বোট রেডি করে ঘর থেকে যেন আমার রাইফেলটা নিয়ে আসে। যাও) কুইক ।’ দৌড় দিল আবদুল । ঠিক সেই সময়ে দূর থেকে একটা এঞ্জিন স্টার্ট নেয়ার শব্দ শোনা গেল । সেই টিলার দিক থেকেই এল শব্দটা । ক্রমে দূরে মিলিয়ে গেল সেই শব্দ–ফিরে চলে গেল স্পীউ-বোট।
কাপ্তাইয়ের পাঁচ মাইল উত্তর-পশ্চিমে হাতের বামদিকে একটা মাটির টিলা-এখন বিজারভয়েরের পানি বেড়ে ওঠায় ডূবু-ডুবু। তারই ডিতর দামী আসবাবপত্রে সুসজ্জিত একটা প্রশস্ত ঘর। একটা সোফায় বসে আছেন গৃহস্বামী কবীর চৌধুরী আর অপর একখানায় ভারতীয় গুপ্তচর বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ মাদ্রাজী কর্মকর্তা মি. গোবিন্দ রাজলু। পাশের টিপয়ের উপর চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে গোবিন্দ রাজলু বলল, অসামান্য প্রতিভা আপনার, মি. চৌধুরী । এই পাহাড়ের মধ্যে এত বড় একটা গবেষণাকেন্দ্র তৈরি করলেন কি করে? এতসব যন্ত্রপাতি, এত রকম ব্যবস্থা ! অথচ
বাইরে থেকে কিছুই বুঝবার উপাই নেই।
এই অকুন্ঠ প্রশংসায় কিছুমাত্র বিচলিত না হয়ে চৌধুরী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার চাইল রাজলুর চোখের দিকে, তারপর বলল, আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি আছি, মি. রাজলু। শুক্রবারেই ঘটবে ঘটনাটা।
দেয়ালের গায়ে দুটো তাকের উপর থরে থরে সাজানো আছে বই । চৌধুরী উঠে গিয়ে একটা বোতাম টিপতেই দেয়ালের খানিকটা অংশ ঘুরে গেল। বইসুদ্ধ সামনের দিকটা অদৃশ্য হয়ে গেল পিছনে, আর পিছন দিক থেকে সামনে চলে এল
একটা সি-সিটিভি, অর্থাৎ ক্লোজড সাকিট টেলিভিশন সেট । সেটা চালু করে দিয়ে নিজের আসনে গিয়ে বসল চৌধুরী। গোবিন্দ রাজলু অবাক হয়ে দেখল পরিষ্কার কাপ্তাই ড্যামের ছবি দেখা যাচ্ছে টেলিভিশনে । এক আধটা গাড়ি সা করে চলে যাচ্ছে বাধের ওপরের রাস্তাটা দিয়ে। সামনে থৈ থৈ করছে জল, অল্প বাতাসে ছোট ছোট চেউ উঠছে সে জলে।
“রিজারভয়েরের জল এখন কতখানি জিজ্দেস করল রাজলু।
সী-লেভেনথেকে ৯ ফুট । এটা সার্ভে অভ পাকিস্তানের হিসাব। ড্যামের হিসাব অবশ্য আলাদা-ওরা সী লেভেলের নয় ফুট নিচ থেকে ধরে। ওরা বলবে এখন ১০৮ ফুট ।’
“আচ্ছা, পুরো ড্যামের ফিল্ ম্যাটেরিয়াল কতখানি? মাত্র তিনটেতেই কাজ হয়ে
যাবে বলে মনে করেন?
*ফিল্ ম্যাটেরিয়াল হচ্ছে পনেরো কোটি ছেষর্টি লক্ষ আশি হাজার সি.এফ.এস। হ্যা, আমার মতে তিনটেই যথেষ্ট । মেইন ড্যামটা দু’হাজার দু’শো ফুট লম্বা। আর চওড়া হচ্ছে ওপরটা বাইশ ফুট-নিচটা একশো পয়তাল্লিশ ফুট । তিনটে জায়গা ভেঙে দিতে পারলে বাকিটা আপনিই উড়ে যাবে। তাছাড়া দেখুন, ম্পিলওয়ের ষোলোটা গেট–প্রতিটা বত্রিশ বাই চল্লিশ ফুট-আমার লোক সব কটা
লক গেট সম্পূর্ণ খুলে দিয়ে সরে পড়বে সবাই যখন প্রেসিডেন্টের ওপেনিং নিয়ে ব্যস্ত, সেই সুযোগে । এছাড়াও পাওয়ার হাউসের টানেল ডায়ামিটার হচ্ছে বত্রিশ ফুট হব্দৃশ্-সেখান দিয়েও বেরোচ্ছে পানি । সবটা মিলে মোট এফেস্ট হচ্ছে এক কথায় যাকে বলে ডিভাসটেটিং, ভয়ঙ্কর। পুরো রিজারভয়ের অর্থাৎ দু’শো তেপ্লান্ন বর্গ মাইলের এতদিনকার জমা পানি একসাথে বেরোবার চেষ্টা করছে- কল্পনা করুন একবার। আপনি নিশ্চিস্ত থাকুন মি. রাজলু, এই তোড়ের মুখে প্রেসিডেন্টের
চিহ্নমাত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না। পাক-চীন প্যাক্ট নিয়েও ভারতকে আর মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হবে না।
আমাকে আপনি আশ্চর্য করে দিচ্ছেন, মি. চৌধুরী। ভয়ানক নিষ্টুর লোক আপনি, মশাই। এত সাংঘাতিক একটা কাজ এমন ঠাণ্ডা মাথায় কি করে করছেন আপনি? এতটুকু বিকার নেই। লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিশ্চিত মৃতুর মুখে ঠেলে দিতে একবারও কি দ্বিধা হচ্ছে না, কিংবা হচ্ছে না একবিন্দু বিবেক-দংশন?'”
“দেখুন, সে অনেক কথা । আমাদের কারও হাতেই অত সময় নেই যে এ নিয়ে আলাপ করব । তবু এটুকু আপনাকে বলতে পারি যে এমন হঠাৎ করে যদি প্রয়োজন হয়ে না পড়ত তাহলে হয়তো এত প্রাণ নষ্ট না করে অন্য উপায় অবলম্বন করতাম আমি। কেবল মাত্র আকস্মিক প্রয়োজনের তাগিদেই আপনাদের সাহায্য নিতে হচ্ছে আমাকে- এবং কেবলমাত্র এই জন্যেই প্রজেক্ট ওপেনিং-এর দিন ড্যাম ভাঙার গর্হিত প্রস্তাব আমাকে অনিচ্ছাসত্তেও মেনে নিতে হলো ।’
কথার ফাঁকে ফাঁকে বাকা পাইপটায় টোবাকো ভরা হচ্ছিল, এবার সেটা ধরিয়ে নিয়ে টেলিভিশন সেটের একটা নব সামান্য ঘুরিয়ে ছবিটা আরও পরিষ্কার করে দিল মি. চৌধুরী। তারপরই কী দেখে চমকে উঠে ‘এক্সকিউজ মি, বলে একপাশে টেবিলের উপর রাখা ওয়ায়্যার-লেস্ ট্রান্সমিটারের সামনে গিয়ে বসল ।
হঠাৎ চৌধুরীকে এমন ব্যস্ত হয়ে উঠতে দেখে বিশ্মিত গোবিন্দ রাজলু টেলিভিশনের দিকে চেয়ে দেখল তাতে একজন মার্কিন সাহেবকে দেখা যাচ্ছে। হাত নেড়ে কাউকে কিছু নির্দেশ দিচ্ছে সে- বাধের কাছেই জলের মধ্যে কিছু লক্ষ করছে সাহেব টর্চ জেলে।
কানে এয়ার ফোন লাগিয়ে ইলেভেন মেগাসাইকেল্সে সিগন্যাল দিল চৌধুরী । “এক্স ওয়াই জেড কলিং এস বি টু, ক্যান ইউ হিয়ার মি?’ দু’বার কথাটা বলল চৌধুরী ।
“এস বি টু স্পীকিং। হিয়ার ইউ লাউড এন্ড ক্লিয়ার সাথে সাথেই উত্তর এ্ল স্পীড-বোট থেকে। |
“তেরো নম্বরকে বোটে ফিরিয়ে আনো–সিগন্যাল দাও।
খানিকক্ষণ চুপচাপ থাকার পর উত্তর এল, “আমাদের সিগন্যাল পাচ্ছে না তেরো নম্বর- অনেকদূর চলে গেছে। এগিয়ে যাব সামনে?
একমুহূর্ত চিন্তা করে চৌধুরী বলল্, “না, ফিরে চলে এসো এক্ষুণি।
চিন্তিত মুখে আবার কী-বোর্ডে কিছুক্ষণ আঙুল চালিয়ে বলল, “এক্স ওয়াই জেড কলিং কে পি ফাইভ, এক্স ওয়াই জেড—এক্স ওয়াই জেড–.এক্স ওয়াই জেড । ক্যান ইউ হিয়ার মিঃ’ বার কয়েক কথাটা উচ্চারণ করল সে। তারপর উত্তর এল।
“দিস ইজ’কে পি ফাইভ । হিয়ার ইউ লাউড এন্ড ক্রিয়ার, স্যার ।’ কাপ্তাই ভি আইপি রেস্ট হাউসের একটা কামরায় ট্র্মটারের ট্রান্সমিটারের সামনে বসে শুনছে কে পি ফাইভ।
‘ড্যামের গায়ে আন্লাকি থারটিন কাজ করছে, মিনিট পাচেকের মধ্যে ধরা পড়বে ও । তুমি গিয়ে পানিতে নামবে সবার আগে। যন্ত্রপাতি মাটি চাপা দিয়ে দেবে, এবং তেরো নম্বরের মৃতদেহ নিয়ে ওপরে উঠবে । বুঝতে পেরেছ? তেরো যেন জ্যান্ত পানির ওপর না ওঠে ।’
“বুঝেছি, স্যার, যাচ্ছি এখুনি।’
সিক্সটি মডেলের একটা কালো শেভ্রোলে চীফ এঞ্জিনিয়ার লারসেনের পাশে এসে থামল জোরে ব্রেক কষে। জানালা দিয়ে মুখটা বের করে আরোহী বলল, হ্যালো লারসেন, কি করছ, এখানে?
‘হ্যালো, ইসলাম । তৃমি কোথেকে? নেমে এসো, একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস
দেখাচ্ছি তোমাকে!
কি ব্যাপার? বলে গাড়ি থেকে নেমে এল রাফিকুল ইসলাম। অফিসার্স্ ক্লাবের হিরো এই ইসলাম! ক্লাবে মোটা স্টেকে ব্রিজ, ফ্ল্যাশ, পোকার খেলে এবং প্রতিবার প্রচুর টাকা হেরে, প্রচুর পরিমাণে ড্রিঙ্ক পরিবেশন করে অত্যন্ত প্রিয় হয়ে উঠেছে সে সবার কাছে । বছর তিনেকের নিয়মিত যাতায়াতে সবার সাথেই খাতির জমিয়ে নিয়েছে এই সদালাপী সুদর্শন ধনী যুবক। লারসেন সাহেবও একে খুব স্রেহের চোখে দেখেন।
ওই দেখো। ওখানে বুদ বুদ কিসের বলতে পারো?
টর্চের আলোয় পানির উপর অনেকগুলো বুদু বুদ দেখল ইসলাম । বলল, “আশ্চর্য!
এ তো আ্যাকুয়া লাঙ-এর ভূড়ভুড়ি । ওখানে কাউকে নামিয়েছ নাকি নিচে?”
না। ওই টিলার কাছ থেকে কেউ পানির নিচ দিয়ে এসেছে বাধের গায়ে। লোকটা কি করছে জানা দরকার ।’
“কাল গিয়েছিলাম কক্সবাজারের সী-তে রেয়ার কিছু শঙ্খ তুলতে । গাড়ির
পেছনে আকুয়া-লাঙটা বোধ হয় রয়ে গেছে। নেমে দেখব নাকি?
দাঁড়াও, আব্দুলকে স্টোরে পাঠিয়েছি- ও আসুক , দু’জন একসাথে নেমো। পানির নিচে একাধিক লোক থাকতে পারে, অস্ত্রশস্তও থাকতে পারে হেসে উড়িয়ে দিল ইসলাম কথাটা। তারপর গাড়ির পিছন থেকে কম্প্রেস্ড এয়ারের সিলিন্ডার ফিট করা কিন্তুতকিমাকার ডুবুরী-পোশাক বের করে পরে নিল আধমিনিটের মধ্যে । কাটাতারের বেড়া টেনে ধরলেন মি. লারসেন, বাঁধের গায়ে সাজিয়ে রাখা বড় বড় কালো পাথরগুলোর উপর পা ফেলে ফেলে তরতর করে নেমে গেল ইসলাম পানিতে ।
কিছুদুর নেমেই কাঁচের মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার দেখা গেল প্রায় সত্তর-আশি ফুট নিচে একটা উজ্জ্বল আণ্ডারওয়াটার জ্বেলে কি যেন করছে আন্লাকি থারটিন। আনলাকিই বটে! হাসল ইসলাম।
প্রায় পনেরো ফুট কাছে যেতেও যখন লোকটা টের পেল না তখন পকেট থেকে সরু একটা টর্চ বের করল ইসলাম। ওর ভয় কেবল লোকটার পাশে মাটিতে রাখা
হার্পূন বন্দুকটাকে।
আর তিন হাত এগোতেই হঠাৎ তেরো নম্বর কাজ বন্ধ করল, তারপর চট করে ঘুরে ইসলামের দিকে টর্চের আলো ফেলেই একটানে হার্পূন তুলে নিলা হাতে। টর্চের তীব্র আলো পড়ায় মস্তবড় একটা কাতলা মাছ সড়াৎ করে সরে গেল সামনে দিয়ে।
সাথে সাথেই হাতের পেন্সিল-টর্চ জেলে সিগন্যাল দিল ইসলাম। হার্পূনের ট্রিগার থেকে আঙুলটা সরে গেল তেরো নম্বরের । প্রত্যুত্তরে সেও সিগন্যাল দিয়ে সেফটি-ক্যাচটা আবার তুলে দিল উপরে । তারপর সেটা নামিয়ে রেখে একটু বিশ্রাম নেয়ার জন্যে বসে পড়ল মাটিতে । এতক্ষণ একটানা পরিশ্রমে রাবারের ভিতরে দর দর করে ঘাম ঝরছে ওর দেহ থেকে । ভাবল, বোধহয় তার কাজ তদারক করবার জন্যে এল কেউ। কিন্তু কেন জানি বুকের ভিতরটা একবার কেঁপে উঠলু ওর।
বরফে গর্ত করবার একটা ফিন-বোর দিয়ে বাধের গায়ে গর্ত খুড়ছে তেরো নম্বর । ফিনল্যান্ডে এই যন্ত্রের ব্যবহার খুব বেশি । হাতে তুলে নিয়ে দেখল ইসলাম। প্রায় সাড়ে তিন ফুট লম্বা আর পানির নিচে সের দুয়েক ওজনের এই যন্ত্র অনায়াসে বারো ইঞ্চি ব্যাসের গর্ত তৈরি করতে পারে মাঠিতে ৷ মিনিয়াপ্যোলিসের রাপালা কোম্পানির তৈরি এই ফিনবোর। ইচ্ছে করলে অনেক লম্বা করা যায় একে রড জুড়ে জুড়ে।
বন্দুকটা হাতে তুলে নিল ইসলাম । দেখল ফ্রান্সের নাম করা “চ্যাম্পিয়ান হার্পূন গান ওটা । সমুদ্রে হাঙ্গর, ব্যারাকুডা, এমনকি তিমি মাছ পর্যন্ত মারতে এ জিনিস অদ্ভিতীয়।