একটু চোখ বুলিয়ে নিন
এক
এমন মুহূর্তেই বুঝি ক্লান্ত হয়ে পড়ে পৃথিবী । সূর্য চলে পড়েছে দিগন্তে, নরম লালচে আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রকৃতির বুকে।
শূন্য আকাশে এলোমেলো ভঙ্গিতে উড়ে বেড়াচ্ছে এক ঝাক পাখি। বাতাস নেই; ধুলো আর পেট্রোল পোড়া ধোয়ার মেঘ
যেন থমকে রয়েছে। তার মাঝ দিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে একটা ধূসর রঙের পন্টিয়াক স্টেশন: ওয়্যাগন- উপকূল থেকে
ইনল্যান্ডের দিকে চলেছে ওটা ।
গাড়িটা দেখতে কুৎসিত। আকারে যেমন বেঢপ, গায়ের রঙও ঔজ্জল্য হারিয়েছে বহু ‘আগে, চটে গেছে জায়গায়
জায়গায়। স্টিয়ারিং হুইলের ওপর ঝুঁকে রয়েছে চালক। মাত্র পাচশো ডলারে গাড়িটা কিনেছে সে। সেলসম্যান কসম কেটে বলেছিল, গ্যালনে চল্লিশ মাইল যাবে এ-গাড়ি, স্পীড উঠবে ঘন্টায় ঘাট মাইল | বলা বাহুল্য, কোনোটাই টিক নয়। পুরনো গাড়ির সেলসম্যানের সঙ্গে একজন ঠকবাজের পার্থক্য নেই। রাক্ষসের মত তেল খায় আশির দশকের এই স্টেশন ওয়্যাগন, স্পিড তুলতে পারে, কেবল ঢালু পথ ধরে নিচে নামতে গেলে… অথচ ভার্জিনিয়ার পুর্ব উপকূলে এ
এলাকায় ঢালু কোনও রাস্তা নেই। চারদিকে শুধুই সমতল ভূমি ।
বেশ ভারিক্কি চেহারা ড্রাইভারের ৷ তাকে দেখে প্রফেসর বা লাইব্রেরিয়ান বলে ভ্রম হতে পারে। ফ্যাকাসে চামড়া,
সারাদিন ঘরের ভেতরে থাকলে যা হয়… আঙ্গুলে নিকোটিনের দাগ, আর চোখে ভারী তার কারণ মাথার চুল পাতলা হয়ে এসেছে লোকটার, উন্মুক্ত হয়ে গেছে বিশাল কপাল- সেখানে ফুটে উঠেছে বলিরেখা । মানুষটার নাম জোসেফ ফিনিঙ্গা-বর্তমানে আমেরিকার নাগরিক হলেও জন্মসূত্রে সে জার্মান।
হুইল থেকে হাত না সরিয়েই চট করে হাতঘড়িটা দেখে নিল ফিনিঙ্গার ৷ গাড়ির মত ঘড়িটাও পুরনো, একটা পুরনো
ঘড়ির দোকান থেকে কেনা । ঘড়ি দেখে নিশ্চিন্ত হলো সে-ঠিকমতই এগোচ্ছে, পিছিয়ে পড়েনি। সামনে বাক দেখতে পেয়ে ইন্ডিকেটর জ্বালল, একটু কমাল গতি । ফুরফুরে অনুভব করছে, সবকিছু ঠিকঠাক চললে ঘন্টাখানেক পরেই অভাব-অনটন কেটে যাবে তার। হাতে চলে আসবে প্রচুর টাকা, যা দিয়ে ভাল গাড়ি, দামি ঘড়ি আর জীবনের সমস্ত
আরাম-আয়েশ কিনে নিতে পারবে সে।
খানিক পর একটা ডাইনারের সামনে গাড়ি থামাল ফিনিঙ্গার। রাস্তার ধারের ডাইনার যেমন হয়, এটাও তেমন। বিশেষত্বহীন। ছাতের উপরে একটা নিয়ন সাইন জ্বলজ্বল করছে- লুসি’জ। কী কী পাওয়া যায়, তাও লেখা
হয়েছে তলায়: হ্যামবার্গার, হট ‘ডগ, ফ্রাই আর শেকস্… আমেরিকার সনাতন ফাস্ট ফুড আর কী। ভেতর থেকে
আবছাভাবে ভেসে আসছে গানের আওয়াজ–জুকবক্স বাজছে। পুরনো এসব ডাইনার ছাড়া আর কোথাও দেখা
মেলে না প্রাচীন ওই গান শোনার যন্ত্রের ৷
গাড়ি থেকে নামতে নামতে নিজের অতীত নিয়ে ভাবল ফিনিঙ্গার । ছোটবেলা থেকে মহাশূন্যের প্রতি তীব্র আকর্ষণ
ছিল তার। সে-কারণেই স্কুল-কলেজের পাট চুকিয়ে ভর্তি হয়েছিল অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিঙয়ে। পাশও করেছিল বেশ ভাল মার্কস নিয়ে । কিন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জন্মভূমি জার্মানির ওপর রয়েছে মহাশুন্য-বিষয়ক গবেষণায় নানা ধরনের বিধি-নিষেধ । রকেট তৈরির নামে তারা যেন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে না বসে, সেজন্যেই আমেরিকা-সহ মিত্রবাহিনীর দেশগুলো আরোপ করেছে হাজারো নিয়ম-কানুন। ফলে সংকুচিত হয়ে পড়েছে আরোস্পেস সংক্রান্ত কর্মক্ষেত্র । অগত্যা দেশ ছেড়ে বছর বিশেক আগে আমেরিকায় পাড়ি দিতে হয়েছে ফিনিঙ্গারকে । বিদেশে এসেও শুরুর দিনগুলো খুব কঠিন গেছে তার। ট্যাক্সিচালক, আরও কত কী । কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছে । শেষে… বছর দশেক আগে, শিকে ছিড়েছে ভাগ্যে। ভার্জিনিয়ার ওয়ালপৃস্ আইল্যাণ্ডে ইউ. এস ন্যাভাল রিচার্চ ল্যাবরেটরিতে চাকরি পেয়েছে সে। সংস্থাটা নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি মহাকাশ-বিজ্ঞান নিয়েও কাজ করে। ওয়ালপৃস্ আইল্যান্ডের লঞ্চ সাইট থেকে মহাশূন্যে উৎক্ষেপণ করা হয় আমেরিকার বিভিন্ন স্যাটেলাইট | সেখানেই জেনারেল সুপারভাইজর হিসেবে এখন কাজ করছে ফিনিঙ্গার ৷
চুয়ান্ন বছর বয়স তার, ক্যারিয়ারের শেষ হতে চলেছে খুব শীঘ্রি। আর জীবনের এই মোড়ে এসে ফিনিঙ্গার উপলব্ধি
করছে, পছন্দের পেশাটাই সব নয়। ধনসম্পদেরও প্রয়োজন রয়েছে । কাজের পেছনে ছুটতে গিয়ে আজ পর্যন্ত টাকাপয়সার দেখা পায়নি বেচারা । আরাম-আয়েশ কাকে বলে, তা জানে না। অল্প-স্বল্প যা সঞ্চয় করেছিল শেষ জীবনের জন্যে, ডিভোর্সের সময় প্রথম স্ত্রী তার প্রায় পুরোটাই নিয়ে গেছে! ফলাফল, ধার-দেনায় এখন সে জর্জরিত। গোদের ওপর বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে দ্বিতীয় স্ত্রী-বছরচারেক আগে ঝৌকের বশে এক ককটেল ওয়েইট্রেসকে বিয়ে করেছিল, মেয়েটি তার অর্ধেক-বয়সী… ভেবেছিল নিঃসঙ্গ জীবনে একজন সঙ্গী হলে মন্দ হয় না… কিন্ত দারিদ্রের কশাঘাতে সমস্ত ভালবাসা উবে গেছে। স্ত্রীর কথার চাবুকে প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত হতে হচেছ তাকে । এক মুহূর্তের শান্তি নেই কোথাও । এমনকী অফিসেও এখন আর তাকে দাম দেয় না কেউ । দশটা বছর বিলিয়ে দিয়েছে এন.আর.এল.-এ, কিন্তু সেখানকার কারও মাঝেই বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতা নেই। বরং তাকে তাড়াবার জন্যে যেন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ওরা । নতুন একজন সুপারভাইজর ইতিমধ্যে নিয়োগ করা হয়েছে মাস বাকি তার রিটায়ারমেণ্টের! কীসের জন্যে তা হলে এতদিন খেটে মরল সে? অবসরকালীন সামান্য কিছু টাকার জন্যে কাজেই অফারটা যখন পেল, চরম সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়নি তার।
স্টেশন ওয়্যাগনের দরজা লক করে ডাইনারে ঢুকল ফিনিঙ্গার। যার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে, সে আগেই চলে
এসেছে। বসে আছে কোনার একটা টেবিলে ৷ বরাবরের মত তার পরনে কড়া ইস্তিরি দেয়া সুট । টেবিলের ওপর একটা
একটা খবরের কাগজ মেলে গভীর মনোযোগে ক্রসয়ার্ড পাজল মেলাচ্ছে। হ্যারি স্মিথ নামে তাকে চেনে ফিনিঙ্গার, তবে সেটা সম্ভবত লোকটার আসল নাম নয়। দরজায় আওয়াজ শুনে মুখ তুলে তাকাল স্মিথ ৷ আড়ষ্ট ভঙ্গিতে তার দিকে হাত নাড়ল ফিনিঙ্গার, তারপর এগিয়ে গিয়ে বসে পড়ল মুখোমুখি ।
“কেমন আছেন, মি. ফিনিঙ্গার?’ কুশল বিনিময়ের ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল স্মিথ ৷ কথায় ম্যানহাটনের টান ।
‘ভাল আছি, ধন্যবাদ,’ খসখসে গলায় বলল ফিনিঙ্গার।
তার চেয়ে অন্তত দশ-বারো বছরের ছোট স্মিথ, কিন্তু দেখতে অতটা মনে হয় না। লম্বাটে মুখ, গলার চামড়ায় ভাজ, আর দু’কানের ওপর ধূসর চুলের গোছা থাকায় তাকে আরও বয়স্ক দেখায় । আঙুলের ডগায় একটা বলপয়েণ্ট কলম নাচাচ্ছে সে, অনামিকায় শোভা পাচ্ছে একটা সোনালি আংটি।
‘ভেনিজুয়েলার রাজধানীর নাম জানেন?’ প্রশ্ন ছুড়ল লোকটা ।
“কী!’ থতমত খেয়ে গেল ফিনিঙ্গার এই আচমকা প্রশ্নে।
“ওপর-নিচে ছ’নম্বর ক্লু” পেপারের দিকে ইশারা করল স্মিথ। “সাত অক্ষরের শব্দ… শুরুটা সি দিয়ে। ভেনিজুয়েলার
রাজধানী।
“দুঃখিত, বলতে পারছি না,’ ফিনিঙ্গার বলল । “ক্রসওয়ার্ড পাজলে আমার আগ্রহ নেই ।’
“কোনও ব্যাপার না, হাসল ম্মিথ। ‘এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম ।’ সোজা হয়ে বসল এবার । “কাজের “কথা বলুন ।
হয়েছে তো?
এবারের প্রশ্নটা প্রত্যাশিত।
এই নিয়ে চতুর্থবার স্মিথের সঙ্গে দেখা করছে ফিনিঙ্গার | প্রথমটা ছিল নির্দোষ- স্যালিসবারির এক বারে অকস্মাৎ
সাক্ষাৎ হয়েছিল তাদের । ওর পাঁশের স্টুলেই বসেছিল স্মিথ । মদের গ্রাসে চুমুক দিতে দিতে দু’জনে মেতে উঠেছিল গল্পে । নিজেকে ব্যাবসায়ী বলে পরিচয় দিয়েছিল স্মিথ, কিন্তু কিসের ব্যবসা … তা আর জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠেনি। বরং ফিনিঙ্গারের পেশা শুনে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল লোকটা, তা নিয়েই ঘুরপাক খেয়েছে সব আলোচনা । সেধে সমস্ত ড্রিঙ্কের দাম পরিশোধ করেছে স্মিথ, আর ফিনিঙ্গারও বিনে পয়সার মদ গিলতে গিলতে উগরে দিয়েছে নিজের সবকিছু । টুকটাক প্রশ্ন করেছে স্মিথ, তবে সেগুলো সন্দেহজনক ছিল না, গোপন কোনও তথ্যও ফাস করতে হয়নি। এখন ফিনিঙ্গার জানে, দু’জনের দেখা হওয়াটা মোটেই কাকতালীয় ছিল না।
সাজানো ছক ছিল পুরোটা। ফিনিঙ্গারের আগ-পাশ-তলা জেনে তবেই মাঠে নেমেছিল স্মিথ ও তার পেছনের লোকেরা । প্রথম সন্ধার শেসে রীতিমত বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল দু’জনের । ক’দিন পর আবারও দেখা করার প্রস্তাব দেয় স্মিথ, ফিনিঙ্গার নির্দ্বিধায় রাজি হয়ে যায় তাতে । হবে না-ই বা কেন? সঙ্গী হিসেবে লোকটা চমৎকার, তা ছাড়া বিদায় নেবার আগে আলগোছে সে বলেছিল, “একটা কাজ করলে আপনি বেশ কিছু টাকা কামাতে পারেন… এইমাত্র মাথায় এল। এখন কিছু না বলি, আগামীদিন নাহয় বিস্তারিত আলাপ করা যাবে।
দ্বিতীয় সাক্ষাতে অবশ্য বিষয়টা নিয়ে কিচ্ছু বলল না স্মিথ। বরং রাজনীতি, সমসাময়িক পরিস্থিতি খেলাধুলা,
ইত্যাদি নিয়ে গল্প জুড়ল। পুরুষালি আড্ডা যেমন হয় আর কী। ফিনিঙ্গারও জদ্রতার কারণে কিছু করতে পারল
না। সেদিনও যথারীতি দেদারসে মদ্যপান চলল… এবং অবশ্যই সেটা স্মিথের টাকায়।
অবশেষে তৃতীয় সাক্ষাতে আসল কথা পাড়ল স্মিথ। ততদিনে মোটামুটি ঘনিষ্ঠতা হয়ে গেছে দু’জনের । স্মিথও
তার সুযোগ নিয়ে ভান-ভণিতা ছেড়ে সরাসরি পেশ করল তার প্রস্তাব। শুনে আতকে উঠল ফিনিঙ্গার, বুঝতে পারল
ওদের বন্ধুতের স্বরূপ… মিথ্যে খোলসের চেহারা । তক্ষুণি পুলিশে যাওয়া উচিত ছিল তার, কিংবা এন.আর.এল.-এর
সিকিউরিটি সেকশনে । কিন্ত্র কোথাও যায়নি সে। যাবে যে না, তা বুঝতে পেরেই ওকে প্রস্তাব দিয়েছিল স্মিথ । সন্দেহ
নেই, অনেকদিন থেকেই তার ওপর নজর রেখেছে এরা ৷ ভালমত বুঝে নিয়েছে ওর চরিত্র । তারপরেই বাড়িয়েছে পা।
ঠাণ্ডা মাথায় প্রস্তাবটা নিয়ে ভেবেছে ফিনিঙ্গার। কে এই স্মিথ? কাদের হয়ে কাজ করছে সে? না, এসবে কিছুই যায়- আসে না তার । দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায়, তখন ন্যায়-নীতি নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। ওদের গূঢ় উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তা করেও । একটাই লাভ দেখতে পেয়েছে ফিনিঙ্গার-বৈষয়িক লাভ। নগদ পাচ লাখ ডলার দেয়া হবে তাকে… আধ মিলিয়ন ডলার! কল্পনাতীত একটা ব্যাপার । এত টাকা কোনোদিন চোখে দেখেনি সে, কোনোদিন নিজের হবে বলে স্বপ্নও দেখেনি। এমন সুযোগ পায়ে ঠেলবে কেন? তা ছাড়া একটু-আধটু অন্যায় না করে দুনিয়ায় আজ পর্যন্ত কে-ই বা বড়লোক হতে পেরেছে? কাজেই প্রস্তাবে রাজি হতে দ্বিধা করেনি ফিনিঙ্গার ৷
কী করতে হবে তাকে? ছোট্ট একটা কাজ, তবে সেটা খুব সহজ নয়। এর জন্যে প্রথমেই চাই অ্যারোস্পেস মেকানিক্স ও টেনসিল স্ট্রেস বিষয়ক নিখুঁত জ্ঞান। সৌভাগ্যক্রমে দুটোতেই ফিনিঙ্গার অভিজ্ঞ। তবে কাগজে-কলমে অঙ্কের জটিল সমীকরণ মেলালেই চলছে না, মূল কাজটা আরও কঠিন। সেটার জন্যে বড়জোর চার-পাঁচ মিনিট পাবে সে | যথেষ্ট ঝুঁকিও আছে এতে। তবে ঝুঁকির বিনিময়ে রয়েছে অভাবনীয় পুরষ্কার। সেটাই তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল ।
“কী হলো?’ স্মিথের অধৈর্য কণ্ঠ শুনে সংবিৎ ফিরল ফিনিঙ্গারের । “হয়নি কাজটা?” যতটা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে সহজেই সারতে পেরেছি। ফায়ার ড্রিলের সময় ঢুকে পড়েছিলাম আ্যাসেম্বলি হ্যাঙারে।’ এটুকু বলে নিজেকে থামাল সে। নাহ্, সহজ বলে নিজের কৃতিত্বকে খাটো করা ঠিক হচ্ছে না। রীতিমত অসম্ভবকে সম্ভব করেছে সে। “আসলে… সময়টাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা । খুব অল্প সময়ে পুরো কাজ সারতে হয়েছে আমাকে । যে-কোনও লঞ্চিঙের আগেই সিকিউরিটি খুব কড়া করে দেয়া হয় কিনা। কাজটাও ছিল খুব সূক্ষ্ম। ঠিকমত যদি করতে না পারতাম, ফাইনাল চেকের সময় ধরা পড়ে যেত -ব্যাপারটা। মানে, এমনভাবে সেটা করতে হয়েছে, যা বিশেষজ্ঞদের চোখেও অদৃশ্য হয়ে থাকে ।’
“ইঞ্জিনটা ফেল করবে তো?”
“উহু । তবে কার্যক্ষমতা কমে যাবে । কমবাশচন চেম্বারে যতখানি ফুয়েল পাম্কপ করার কথা, তার চেয়ে অনেক কম করবে। এসব অবশ্য আগেই আপনাকে আমি জানিয়েছি । মোদ্দা কথা হলো, শেষ পর্যন্ত আপনারা যা চাইছেন, তা-ই ঘটবে।
কফিপট নিয়ে একজন ওয়েইট্রেস এগিয়ে আসায় চুপ হয়ে গেল দু’জনে । কফি পরিবেশন করল সে, দিয়ে গেল
দুটো মেনু কার্ড । তবে মেনুর দিকে ফিরেও চাইল,না ওরা ।
খেতে আসেনি এখানে।
‘লঞ্চের টাইমটেবল?’ মেয়েটা চলে গেলে জানতে চাইল স্মিথ ।
কফিতে চুমুক দিয়ে মুখ বাঁকাল ফিনিঙ্গার। ভাল বানায়নি। মগটা সরিয়ে রাখল একপাশে। তারপর বলল,
‘আজ থেকে বারো দিন পর শিডিউল করা হযেছে। ওয়েদার ফোরকাস্ট চেক করেছি আমি, আবহাওয়া অনুকূল থাকবে । তবে কিছুই বলা যায় না। বাতাসের তো আর মতি-গতির ঠিক নেই । একটু এদিক-সেদিক হলেই…” কথাটা শেষ করল না সে। অবশ্য ওসব আমার মাথাব্যথা নয় । আমার কাজ আমি করে দিয়েছি। টাকাটা এনেছেন তোঃ
কয়েক মুহূর্ত একদৃষ্টে তারদিকে তাকিয়ে রইল স্মিথ। যেন বুঝতে চাইছে, ফিনিঙ্গার সত্যি কথা বলছে কি না। সন্তুষ্ট
হয়ে পকেট থেকে সানগ্রাস বের করল সে। চোখে পরল। এর অর্থ, মিটিঙের এখানেই সমাপ্তি ।
“টেবিলের তলায় একটা ব্রিফকেস রাখা আছে, বলল সে। “ওটা আপনার ।’
“টাকা?
“ভেতরে পুরোটাই পাবেন ।’
উঠে যেতে চাইছিল’ স্মিথ, কিন্ত তাকে থামাল ফিনিঙ্গার। বলল, “এক মিনিট। জরুরি কয়েকটা কথা বলতে চাই,
আপনার শোনা প্রয়োজন ।
“কী বলবেন, তাড়াতাড়ি বলুন, স্মিথকে অধৈর্য দেখাল ।
বড় করে শ্বাস নিল ফিনিঙ্গার । কথাগুলো আগেই সাজিয়ে রেখেছে সে। এবার বলতে শুরু করল, “টাকাগুলো আমি গুনব না… আশা করছি পুরোটাই দিয়েছেন, ঠকাননি। তবে একই সঙ্গে আপনাকে সতর্ক করে দেয়াও প্রয়োজন মনে
করছি। শুনুন, কারা আপনাকে পাঠিয়েছে, আমি জানি না। জানার প্রয়োজনও মনে করি না। তবে তারা যে ভয়ঙ্কর
মানুষ, তাতে সন্দেহ নেই। আধ মিলিয়ন ডলার ও ছেলেখেলা নয়। নিজেদের নিরাপত্তার জন্যে আপনারা আমার মুখ বন্ধ করতে চাইতে পারেন, এমন আশঙ্কা করলে দোষ দেবেন না নিশ্চয়ই? সেটাই বরং স্বাভাবিক। এমন হতে পারে, ব্রিফকেসে বোমা রাখা আছে, আপনি চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে ফাটবে। কিংবা বাড়ি ফেরার রাস্তায় কোনও দুর্ঘটনায় পড়ব আমি। তবে আপনার জেনে রাখা প্রয়োজন- এখন পর্যন্ত যা যা ঘটেছে, সব লিখে রেখেছি
আমি। আপনার চেহারার বর্ণনা দিয়েছি ওতে । শুধু তা-ই নয়, শেষবার যখন দেখা করতে এসেছিলেন, তখন সেলফোনে আপনার ছবিও তুলে রেখেছি আমি । সেই ছবি রাখা আছে আমার স্বীকারোক্তির সঙ্গে । আপনার গাড়ি ও তার রেজিস্ট্রেশন প্লেটের নাম্বারও আমি উল্লেখ করে দিয়েছি । সব কিছু রাখা আছে আমার এক বন্ধুর কাছে। তাকে বলে দিয়েছি, আমার যদি কিছু হয়, ও যেন ওগুলো এন.আর.এল.-এ নিয়ে যায়। কী ঘটবে তা হলে, বুঝতে
পারছেন? আপনাদের মতলব বানচাল হয়ে যাবে। পুলিশও………………।
সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।