একটু চোখ বুলিয়ে নিন
১
আহমদ মুসার চোখ পটোম্যাক নদীর উপর নিবদ্ধ। কিন্তু তার দৃষ্টি পটোম্যাক নদীর কিছুই দেখছে না।
আহমদ মুসার শূন্য দৃষ্টিতে ভাসছে উদ্বেগের এক অশরীরী ছবি। লায়লা জেনিফার ও ডাক্তার মার্গারেট কেমন আছে? ওদের প্রতি দায়িত্বে হয়তো সে অবহেলা করেনি, কিন্তু যতটা তৎপর হওয়া উচিত ছিল তা কি সে হতে পেরেছে? পারেনি হয়তো। কিন্তু আহমদ মুসার করার কিছুই ছিল না। ঘটনা প্রবাহ তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আহমদ মুসা একে আল্লাহর ইচ্ছা বলেই মনে করেছে। লায়লাদের নিশ্চয়ই কোন ক্ষতি হবে না এবং তাদের উদ্ধারে আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করবেন।
আহমদ মুসা তার ফ্লাটের সাউথ ব্যালকনিতে বসে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে।
জর্জ ওয়াশিংটন মনুমেন্টের পুবে ও মার্কিন পার্লামেন্ট হাউসের দক্ষিণে পটোম্যাকের তীরে এই ফ্ল্যাটটি। যোগাড় করেছ বেঞ্জামিন বেকন জর্জ আব্রাহামের সাহায্যে। ফ্ল্যাটটি অফিসিয়াল এলাকায়। এই দিক থেকে অনেক নিরাপদ জায়গাটা।
একটা গাড়ির হর্নের শব্দ এল আহমদ মুসার কানে। শব্দটি এল নিচের গাড়ি বারান্দা থেকে। হর্নের শব্দ আহমদ মুসাকে চিন্তার জগত থেকে ফিরিয়ে আনতে পারল না।
হঠাৎ আহমদ মুসার অনুভব করল একটা হাত তার ঘাড়ে এসে থেকে গেল।
প্রথমটায় চমকে উঠেছিল আহমদ মুসা। ফিরে এসছিল চিন্তার আচ্ছন্নতা থেকে। চমকে উঠলেও পরক্ষণেই অনুভব করল হাতটি বেঞ্জামিন বেকনের। পেছন দিকে না তাকিয়েই আহমদ মুসা বলল, ‘মি. বেঞ্জামিন বেকন, এই অসময়ে যখন, নিশ্চয় কোন খবর এনেছেন?’
‘হ্যা, একটা ভাল খবর।’
‘কি সেটা?’
‘আমার সাথে আপনাকে এখনি বেরুতে হবে।’
‘কোথায়?’ পেছন ফিরে বেঞ্জামিন বেকনের দিকে তাকিয়ে বলল আহমদ মুসা।
‘শোনার দরকার নেই, উঠুন।’
‘সত্যিই উঠব?’
‘সত্যি না হলে এই সাত সকালে এভাবে আসি?’
আহমদ মুসা উঠল। বেঞ্জামিন বেকনের উপর তার আস্থা আছে। অকাজে সে সময় খরচ করে না।
আহমদ মুসা তৈরী হয়ে বেঞ্জামিন বেকনের সাথে বেরিয়ে এল।
তারা গাড়িতে উঠল। গাড়ি ছুটল উত্তর ওয়াশিংটনের দিকে।
গাড়ি গিয়ে থামল সুন্দর একটা বাড়ির সামনে।
লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নামল বেঞ্জামিন বেকন। বলল, ‘আসুন মি. আহমদ মুসা।’
আহমদ মুসাও নামল।
চত্ত্বর থেকে এক ধাপ পেরিয়ে করিডোরে উঠে সামনে দরজার উপর নজর ফেলতেই দেখল, দরজা দিয়ে সান ওয়াকার ও জর্জ বেরিয়ে এল।
টার্কস দ্বীপের এই জর্জ ডা. মার্গারেটের ভাই ও লায়লা জেনিফারের স্বামী।
বিস্মত আহমদ মুসা দাঁড়িয়ে পড়েছিল।
ওরা এসে দুজনেই জড়িয়ে ধরল আহমদ মুসাকে।
আহমদ মুসা দুজনের পিঠ চাপড়ে বলল, ‘সালাম দিতে বুঝি এভাবে ভুলে যায়?’
দুজনে আহমদ মুসাকে ছেড়ে দিয়ে হেসে উঠল। বলল দুজনেই, ‘আসসালামু আলাইকুম।’
আহমদ মুসা সালাম নিল। সে কিছুই বলতে যাচ্ছিল।
তার আগেই বেঞ্জামিন কথা বলে উঠল। তার চোখে-মুখে বিস্ময়। বলল, ‘মি. জর্জ, মি. সানওয়াকার আপনাদের এই নতুন ধর্মীয় পরিচয়ের কথা আমাকে বলেননি?’
‘পরিচয় অনেক পুরানো হয়ে গেছে।’ বলল সানওয়াকার।
‘মি. আহমদ মুসা আপনি দেখছি যাদুকর! মনে করেছিলাম মাত্র আমরা এখানকার কজনই আপনার দলে ভিড়েছি। কিন্তু দেখছি, ওরা অনেক আগেই আপনার শিকার হয়ে গেছে।’ বলল বেঞ্জামিন বেকন।
‘মি. বেঞ্জামিন, সত্যের শক্তি যাদুর চেয়ে লক্ষ কোটি গুণ বেশি।’ বলল আহমদ মুসা।
‘সত্য যদি সত্য হয়।’ বেঞ্জামিন বলল।
‘কিন্তু সত্য একটা বিমূর্ত জিনিস। সত্য মূর্ত হয়ে ওঠে সত্যের যারা সাক্ষ্য দেন বা সত্যের যারা বাহক তাদের মাধ্যমে। সত্য মূর্ত হয়ে ওঠা বা সত্যকে মূর্ত করে তোলার বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং সত্য সত্য হওয়াই যথেষ্ট নয়।’
‘সত্যিই তাই মি. আহমদ মুসা। সত্য যদি গুণের নাম হয়, তাহলে সত্যের বাহক হবেন গুণী। গুণীকে বাদ দিলে গুণ দৃশ্যমান হয়না।’
‘ধন্যবাদ মি. বেঞ্জামিন। আপনার উদাহরণটা খুবই সুন্দর।’
বলে আহমদ মুসা মুহূর্তকাল থেমেই বেঞ্জামিনের দিকে চেয়ে বলল, ‘মি. বেঞ্জামিন আপনার ভাল খবর যে জর্জ ও সানওয়াকারদের সাথে সাক্ষাত করিয়ে দেয়া, তা কল্পনাতেও আমার আসেনি। সত্যিই আমার জন্যে এটা একটা অসম্ভব ভাল খবর। কিন্তু এদের সাথে পরিচয় হলো আপনার কেমন করে?’