Iman Dipto Dastan by Enayetullah Altamash -4

ঈমানদীপ্ত দাস্তান ৪ – এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ (Iman Dipto Dastan 4 by Enayetullah Altamash)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

সর্পকেল্লার ঘাতক

সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবী যখন দামেস্কে প্রবেশ করেন, তখন তার সঙ্গে ছিল সাতশ অশ্বারোহী যোদ্ধা। সকল ঐতিহাসিক এ সংখ্যা-ই লিখেছেন। কিন্তু ইতিহাস সুলতান আইউবীর সেই জানবাজদের ব্যাপারে বে-খবর, যাদের কেউ বণিকের বেশে, কেউ সাধারণ পর্যটকরূপে এবং কেউ সিরীয় সাধারণ সৈনিকের পোশাকে- একজন, দুজন, চারজন- এভাবে দলবদ্ধ হয়ে দামেস্কে প্রবেশ করেছিল। তাদের অধিকাংশই সুলতান আইউবীর নীরব হামলার আগেই এখানে এসে পৌঁছেছিল। আর কতিপয় প্রবেশ করেছিল তখন, যখন সুলতান আইউবীর জন্য দামেস্কের দ্বার খোলা হয়েছিল। এরা সবাই ছিল জানবাজ গোয়েন্দা। তারা সর্বপ্রকার লড়াই, সব ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার ও নাশকতামূলক কাজে পারঙ্গম ছিল। মানসিক দিক থেকে তারা ছিল অত্যন্ত দৃঢ়, বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান। তাদের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, তারা জীবনের পরোয়া করত না। তারা এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে ফেলত, যার কল্পনা করলে সাধারণ সৈনিকরা শিউরে ওঠত। এ কাজের জন্য এমন যুবকদের বেছে নেয়া হত, যাদের অন্তর দ্বীনি চেতনা ও দুশমনের ঘৃণায় পরিপূর্ণ থাকত। কাজকর্ম দেখলে এ জানবাজদের উন্মাদ মনে হত। সুলতান আইউবী এমন জানবাজদের কয়েকটি ইউনিট প্রস্তুত করে রেখেছিলেন।

সাতশ অশ্বারোহী নিয়ে সুলতান আইউবী যখন দামেস্কের উদ্দেশ্যে রওনা হন, তার আগেই তিনি একদল জানবাজ গোয়েন্দাকে জরুরী নির্দেশনা প্রদান করে দামেস্কে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের প্রতি নির্দেশ ছিল, দামেস্কের ফৌজ যদি মোকাবেলায় অবতীর্ণ হয়, তাহলে তোমরা নগরীতে নিজেদের বুঝ ও প্রয়োজন অনুপাতে নাশকতা পরিচালনা করবে এবং ভিতর থেকে নগরীর ফটক খুলে দেয়ার চেষ্টা করবে। তারা ছিল জনমনে ত্রাস সৃষ্টি ও গুজব ছড়ানোর কাজে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এই জানবাজদের সংখ্যা ছিল দু থেকে তিনশর মত। সে সময়কার ঐতিহাসিকগণ এদের সুনির্দিষ্ট কোন সংখ্যা উল্লেখ করেননি। শুধু লিখেছেন যে, সুলতান আইউবীর আগমনের সময় দামেস্কে দু-তিনশ গোয়েন্দা ও নাশকতাকারী অবস্থান করছিল।

একজন ফরাসী ঐতিহাসিক ক্রুসেড যুদ্ধের পরিস্থিতি ও ঘটনাবলী সম্পর্কে লিখতে গিয়ে সুলতান আইউবীর লড়াকু গোয়েন্দাদের সম্পর্কে অনেক কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি সুলতান আইউবীর এই জানবাজদের ইসলামী চেতনাকে ধর্মীয় উন্মাদনা আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, এই গোয়েন্দাগুলো মানসিক রোগী ছিল। তারা ধর্মীয় উন্মাদনাকে মানসিক ব্যাধি বলে নিন্দা করেছেন।

প্রকৃতপক্ষে সেটি একটি মানসিক অবস্থাই ছিল বটে। একজন মুসলমান তখনই প্রকৃত ঈমানদার বলে পরিগণিত হয়, যখন ধর্ম তার মনন ও মানসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়। সুলতান আইউবীর এই জানবাজদের গুপ্তচরবৃত্তি ও নাশকতার প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন আলী বিন সুফিয়ান এবং তার দুনায়েব হাসান বিন আব্দুল্লাহ ও জাহেদান। আর যুদ্ধের প্রশিক্ষণ পেয়েছিল অভিজ্ঞ সৈন্যদের হাতে।

সুলতান আইউবী দামেস্কে প্রবেশ করলেন। আলী বিন সুফিয়ানকে রেখে এসেছেন কায়রো। ওখানকার আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ভালো নয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন আলী। সুলতান আইউবীর অনুপস্থিতি, তাঁর দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ ও খেলাফতের পতন- সবমিলে অরাজকতার আশংকা বেড়ে গেছে কায়রোতে। এসব কারণেই সুলতান আইউবী আলী বিন সুফিয়ানকে রেখে এসেছেন। দামেস্কে এসেছেন আলীর এক নায়েব হাসান বিন আব্দুল্লাহ। তিনিই লড়াকু জানবাজদের কমান্ডার।

সুলতান আইউবী দামেস্ক কজা করার পর সেখানকার অধিকাংশ ফৌজ সালার তাওফীক জাওয়াদের নেতৃত্বে সুলতানের সঙ্গে যোগ দেয়। অবশিষ্ট ফৌজ, খলীফার দেহরক্ষী বাহিনী, খলীফা ও তার অনুচর আমীরগণ দামেস্ক ছেড়ে পালিয়ে যায়। ধারণা ছিল, গ্রেফতার করার জন্য সুলতান তাদের পেছনে ফৌজ প্রেরণ করবেন।

কিন্তু না, তিনি এমন কিছু করলেন না। দু-তিনজন সালার সুলতানকে এমনও বলেছিলেন যে, এই আমীর-ওমরাদের গ্রেফতার করা আবশ্যক। অন্যথায় তারা কোথাও গিয়ে সংগঠিত হবে এবং আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।

আর আমি এ-ও জানি যে, তারা খৃষ্টানদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবে এবং পেয়েও যাবে- সুলতান আইউবী বললেন- কিন্তু আমি অন্ধকারে পথ চলি না। আমাকে প্রথমে জানতে হবে, তারা কোথায় যাচ্ছে এবং কোথায় জড়ো হচ্ছে। আপনারা অস্থির হবেন না। আমার চোখ-কান পলায়নকারীদের সঙ্গে লেগে আছে। তারা এত তাড়াতাড়ি হামলা করার জন্য প্রস্তুত হতে পারবে না। আমি দেখছি, খৃস্টানরা কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা মিশরে আক্রমণ চালাতে পারে। পারে সিরিয়ায় হামলা করতে। তারা সম্ভবত আমি কি করি, দেখার অপেক্ষায় আছে। তারা হয়ত আমার পদক্ষেপের উপর ভিত্তি করে নিজেরা পদক্ষেপ নিতে চাইছে। আপনারা আমার নির্দেশনা মোতাবেক সেনা প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধ মহড়া অব্যাহত রাখুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top