একটু চোখ বুলিয়ে নিন
কই গন্তব্যের মুসাফির
হালবের উত্তরে আজকের সিরিয়া ও লেবাননের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত ক্ষুদ্র একটি শহর। নাম হেমস। যুদ্ধ এখনও গ্রাস করেনি বলে শহরটি শান্ত। খৃষ্টান সৈন্যরা মাঝে-মধ্যে তার আশপাশ দিয়ে অতিক্রম করছে। শহরটির কোল ঘেঁষে বয়ে চলছে ছোট্ট একটি নদী। সে কারণেই শহরটি সৈন্যদের বিচরণ থেকে নিরাপদ রয়েছে। অধিবাসীদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা এতো বেশি। ফলে এটি মুসলমানদের নগরী বলেই পরিচিত। অল্প কটি খৃষ্টান পরিবারও আছে। আছে কটি ইহুদী পরিবারও। তবে ব্যবসা বাণিজ্য ইহুদী-খৃস্টানদের দখলে। বাণিজ্যের সুবাদে তাদের দূর-দূরান্ত অঞ্চলে যাওয়া-আসা আছে। তারা বহিঃজগতের যে খবরাখবর নিয়ে আসে, হেসের মানুষ তা-ই সত্য বলে বিশ্বাস করে। তারা ক্রুসেডার ও ইসলামী বাহিনীর যুদ্ধের সংবাদ নিয়ে আসে। তাতে মুসলমানদের পরাজয়ের উল্লেখই বেশি থাকে। খৃষ্টান বাহিনী সম্পর্কে তারা ভীতিকর কথাবার্তাই শুনিয়ে থাকে।
তাদের উদ্দেশ্য, মুসলমানদের উপর খৃস্টান বাহিনীর আতঙ্ক বিরাজিত থাকুক এবং অন্তত এই নগরীর কোন মুসলমান ইসলামী বাহিনীতে অংশগ্রহণ না করুক। কিন্তু তার ক্রিয়া হচ্ছে উল্টো। মুসলমানগণ ীত হওয়ার পরিবর্তে উল্টো প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করেছে। আইন করে বা নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাদের এই সামরিক প্রস্তুতি রুখবার শক্তি কারো নেই। এখানে খৃস্টানদের শাসন চলে না।
হেমসের মুসলমানগণ অশ্বচালনা, বর্শা ছেঁড়া, তরবারীচালনা ও তীরন্দাজির প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন করছে। এই প্রশিক্ষণ মেয়েরাও গ্রহণ করছে। তাদের নেতা নগরীর বড় মসজিদের খতীব, যার সকল ইলম ও আমল জিহাদের জন্য নিবেদিত। তিনি প্রথম কেবলা বাইতুল মুকাদ্দাস শত্রুমুক্ত করার এবং খৃস্টানদেরকে আরব দুনিয়া থেকে বিতাড়িত করার লক্ষ্যে মুসলমানদের প্রস্তুত করছেন।
আর এই যুদ্ধটা কেন লড়া হচ্ছে?- খতীব তাঁর ভাষণে ব্যাখ্যা প্রদান করছেন- খৃস্টানরা আরব দুনিয়ার উপর দখলদারিত্ব কায়েম করে নিজেদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে আর আমরা পৃথিবীতে আল্লাহর রাজত্ব কায়েম করার জন্য জান-মালের কুরবানী দিয়ে চলেছি। তারা আরব দুনিয়াকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করলো কেন তার একমাত্র কারণ, মহান আল্লাহর মহান পয়গাম আরবদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেই বার্তা আরবদের উপর কর্তব্য আরোপ করে দিয়েছে যে, হেরা গুহায় বসে প্রিয়নবীর প্রাপ্ত এই বার্তা আমরা সমগ্র মানবতার নিকট পৌঁছিয়ে দেবদ। তারিক ইবনে যিয়াদ রোম উপসাগরের মিসরীয় তীরে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহকে বলেছিলেন- তুমি যদি আমাকে সাহস ও দৃঢ়তা দান করে, তাহলে আমি তোমার নাম সমুদ্রের ওপারে নিয়ে যাবে। সে সময় তার বক্ষ থেকে ঈমানী চেতনার যে শিখা উত্থিত হয়েছিলো, তা-ই তাঁর ঘোড়াকে সমুদ্রে নামিয়ে দিয়েছিলো। নৌকায় করে তার বাহিনী ইউরোপের কূলে পৌঁছে যায়। যিয়াদপুত্র তারিক আদেশ দিলেন- নৌকাগুলোতে আগুন ধরিয়ে দাও। আমরা ফিরে যাওয়ার জন্য আসিনি।
আর আজ খৃস্টানরা আল্লাহর ভূখণ্ডে এই প্রত্যয় নিয়ে এসেছে যে, তারা ফিরে যাবে না। এই ভূখণ্ডকে তারা করায়ত্ত্ব করার সিদ্ধান্ত নিলো কেন? তারা চাচ্ছে, আল্লাহ পাক যে ইসলামকে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট প্রেরণ করেছিলেন, তাকে এখানেই নিশ্চিহ্ন করে দেবে। মনে রেখো মুসলমান! ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যে পাথরকে মোমে পরিণত করে দেয়। আমাদের ধর্মের মূলনীতিগুলো সহজে মানুষের হৃদয়ে গেঁথে যায়। কারণ, এটি মানব স্বভাবের সম্পূর্ণ অনুকূল জীবনব্যবস্থা। হাক্কুল ইবাদ (মানবাধিকার) এমন একটি মৌল বিধান, মানবজাতিকে একমাত্র ইসলামই উপহার দিয়েছে। ইসলাম একটি ধর্মই নয়- এটি একটি মতবাদ। ইসলাম বিশ্ব মানবতার পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা।
ক্রুশের ধ্বজাধারীরা জানে, ইসলাম যদি বিস্তার লাভের সুযোগ পেয়ে যায়, তাহলে পৃথিবী নামক এই গ্রহটি ইসলামের ছায়াতলে চলে আসবে এবং ক্রুশের নাম-চিহ্ন মুছে যাবে। এ কারণেই ক্রুসেডাররা তাদের পূর্ণ সমর শক্তি নিয়ে এখানে এসেছে। তারা ইসলামের উৎসমুখ বন্ধ করে দিতে এসেছে। ইহুদীদের সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়েছে, বাইতুল মুকাদ্দাস জয় করে তাদের হাতে তুলে দেবে, যাতে ইহুদীরা আমাদের প্রথম কেবলা মসজিদে আকসাকে হাইকেলে সুলায়মানীতে পরিণত করতে পারে। এটি ইহুদীদের একটি প্রাচীন স্বপ্ন, যাকে বাস্তবায়িত করার জন্য তারা অস্থির হয়ে আছে। এই লক্ষ্য অর্জনে তারা তাদের রূপসী মেয়েদেরকে এবং তাদের ধন-সম্পদ খৃস্টানদের হাতে তুলে দিয়েছে। এই নারী আর অর্থই আমাদের সারিতে গাদ্দার জন্ম দিয়েছে।