একটু চোখ বুলিয়ে নিন
তারা চার জন সাইকেলে ভারত পরিক্রমায় বেরিয়েছিল । সুজদ্র, অমিত, দীপঙ্কর আর তার্থঙ্কর । তিনজনের যাত্রা অব্যাহত আছে । পড়ে আছে অমিত । কলকাতা থেকে যখন যাত্রা শুরু করেছিল তখন তাদের ক্লাব থেকে একটা বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল ঘটা করে । গলায় ফুলের মালা পরিয়ে ফটো তোলা হয়েছিল । একজন এমপি বক্তৃতা দিয়েছিলেন । ভারতের যুবসমাজকে দুঃসাহসিক অভিযানে উদ্বুদ্ধ করতে তিনি অনেকগুলো বাক্য ব্যয় করেন। ফ্ল্যাগ অফ করার পর যখন চারজন সত্যিই যাত্রা শুরু করেছিল তখন স্বস্তিবোধ করেছিল অমিত । পাশাপাশি সে আর সুজ্দ্র। একটু পিছনে দীপু তার তীর্ক্কর, ওরা খুব বন্ধু। অমিত বলল, এসব বিদায় সংবর্ধনার কোন মানে হয়? সুভদ্র বুদ্ধিমান এবং টিমের ক্যাপ্টেন। বলল, মানে একটু হয়। আমরা যাচ্ছি পাবলিকের চাদার টাকায় । আমরা যে সত্যিই যাচ্ছি তার একটা প্রমাণ থাকা দরকার ।
অমিত কথাটার জবাব দিতে পারল না। তবে সে লক্ষ্য করেছে, খবর দেয়া সত্তেও টিভির ক্যামেরাম্যান আসেনি । আসেনি খবরের কাগজের কোন লোকও । বেহালার একটি অখ্যাত ক্লাবের চারজন সদস্যের এই অভিযানকে গুরুত্ব দেয়ার কথাও নয় তাদের তাহলে প্রচারটাই বা হবে কি করেঃ প্রচার মাধ্যমই যে
অনুপস্থিত! দিলি রোড ধরে তাদের প্রথম উত্তর ভারতের দিকে যাওয়ার কথা । বেশ যাচ্ছিল তারা, ঘটনাবিহীন মসৃণ গতিতে, একটু আগুপিছু হয়ে । সাইকেলের পিছনে মস্ত ব্যাগ, সামনের হ্যান্ডেলেও আর একটা ব্যাগ, প্রয়োজনীয় জিনিসের বহর তো কম নয়, ভাড়া করা শ্লিপিং ব্যাগ থেকে শুরু করে ওষুধ-বিষুধ অবধি । বর্ধমান পর্যন্ত চমতকার চলে এল তারা, এখানে নাইট হল্ট । হোটেলে থাকার মত বাড়তি পয়সা তাদের নেই। যা টাকা আছে তাতে খুব হিসাব করে না চললে অভিযান মাঝপথে বন্ধ করে দিতে হবে । বর্ধমানে সুভ্দ্রর কাকা থাকেন। তার বাড়িতেই রাব্রিবাস। এরপর রানিগঞ্জ, যশিডি এবং পাটনায় তাদের এরকমই আত্মীয় বা বন্ধুর বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা আছে। বাদবাকি হল্ট-এ রাব্রিবাস করতে হবে । পলিথিনের তাবুতে বা স্পিনিং ব্যাগে। যদি অবশ্য আশ্রয় না মেলে। ঘোর অনিশ্চয়তা । আর যে কোন অভিযানের আসল মজাই তো
এখানে । অনিশ্চয়তা না থাকলে মজাই বা কি? অমিতকে অবশ্য অনিশ্চয়তার সন্ধান করতে হয় না। অনিশ্চয়তাই তাকে খোজে । অমিত ঘরের অনেকগুলো
সোফার একটাতে বসতে যাচ্ছিল, সুজদ্র চাপা গলায় বলল, কাকার সামনে আমরা বসি না, বসতে বললে বসবি। অমিত বুঝে গেল লোকটার প্রচণ্ড দাপট । প্রায় মিনিট পনের অপেক্ষা করার পর কাকার সময় হলো । একে একে তিন জন আগন্তুককে হেড টু ফুট খুব খুঁটিয়ে দেখলেন তিনি । হঠাৎ অমিতের দিকে চেয়ে বললেন, তুমি কি করো? অমিত অপ্রতিভ হয়ে বলল, আমিঃ সুভদ্র তাড়াতাড়ি বলল, কিছু করে না কাকা, বেকার ।
লেখক সম্পর্কে
জন্ম ২ নভেম্বর, ১৯৩৫ ।
দেশ__ঢাকা জেলার বিক্রমপুর ৷ মোক্তার দাদু আইন ব্যবসা জমাতে দেশ ছেড়ে গিয়েছিলেন ময়মনসিংহে । সেখানে ব্রহ্মপুত্র নদীর ধারে জন্ম । শৈশব কেটেছে নানা জায়গায় । পিতা রেলের চাকুরে | সেই সূত্রে এক যাযাবর জীবন । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতায় । এরপর বিহার, উত্তরবাংলা, পূর্ববাংলা, আসাম ।
পঞ্চাশ দশকের গোড়ায় কুচবিহার | মিশনারি স্কুল ও বোর্ডি-এর জীবন | ভিকটোরিয়া কলেজ থেকে আই-এ । কলকাতার কলেজ থেকে বি এ। স্নাতকোত্তর পড়াশুনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে । স্কুল-শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবনের শুরু | এখন বৃত্তি-সাংবাদিকতা । আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত । ছাত্রজীবনের ম্যাগাজিনের গণ্ডী পেরিয়ে প্রথম গল্প-দেশ পাত্রকায় । প্রথম উপন্যাস “ঘুণপোকা? । “দেশ’ শারদীয়া সংখ্যায় প্রকাশিত | প্রথম কিশোর উপন্যাস__“মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’ । কিশোর সাহিত্যে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিরূপে ১৯৮৫ সালে পেয়েছেন বিদ্যাসাগর পুরস্কার । ১৯৮৯ সালে পেয়েছেন সাহিত্য আকাদমি পুরস্কার । আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন দুবার ।
খেলায় তাঁর উৎসাহ অদম্য । বকসিং, টেনিস, ক্রিকেট, ফুটবল, টেবিল টেনিস সম্পর্কে যেমন, আযাথলিটক্সেও তেমনই আগ্রহী । জীবনের এক সংকটময় মুহুর্তে তিনি
জীবনের প্রতি আস্থা ফিরে পান শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সান্নিধ্যে এসে | নিরামিষাশী । ঠাকুরের মন্ত্রশিষ্য । তাঁর রচনাতেও ঘুরে-ফিরে আসে আধ্যাত্মিক অন্বেষণ । পাঠক হিসেবে সর্বপ্রাসী | ধর্মবিষয়ক গ্রন্থ প্রিয়, প্রিয় গ্রিলার এবং কল্পবিজ্ঞানও ।