একটু চোখ বুলিয়ে নিন
১
সামনের গাড়িটি একই গতিতে এগিয়ে চলেছে। আহমদ মুসা গাড়ির গতি বাড়িয়েও দেখল সামনের গাড়ির গতির কোন পরিবর্তন হলো না। তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে টের পায়নি নাকি! রাস্তায় তেমন গাড়ি ঘোড়া নেই, শুন্যই বলা যায়। টের না পাওয়ার তো কথা নয়। লোকটি অমনোযোগী নাকি! নাকি খুব বেশি আত্নবিশবাসী যে তাদের গতিবিধি কারও নজরে পড়তে পারে না!
আহমদ মুসা গাড়ির গতি স্লো করে দিল। রাস্তায় তাকে ধরে লাভ নেই, ওদের ঠিকানায় পৌঁছা দরকার। আহমদ মুসা নিশ্চিত যে, বিজ্ঞানীদের হত্যা থেকে শুরু করে নবিয়েভের গাড়ি ধ্বংস পর্যন্ত সব কাজ যে ষড়যন্ত্রের ফল তার সাথে সামনের গাড়ির লোকটি অবশ্যই জড়িত। সুতরাং তাকে অনুসরণ করে তাদের ঘাটিতে পৌঁছাতে পারলে বড় একটা কাজ হবে।
এই চিন্তা আহমদ মুসার মনকে অনেক হাল্কা করে দিল। নবিয়েভের এই মৃত্যুর জন্যে সে নিজেকে অপরাধী মনে করছিল। কাগজে নিউজ দিয়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে না এলে ষড়যন্ত্রকারীরা এই আগমনের খবর জানতেও পারতো না, বিজ্ঞানী নবিয়েভকে হারানোর মত এই ক্ষতি হতো না। কারসাপকের বিজ্ঞানী নভিয়েভের আগমন সম্পর্কে নিউজ করা ও এই তোড়-জোড় করে আসার মাধ্যমে আহমদ মুসা চেয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীদের দৃশ্যপটে নিয়ে আসতে যাতে তাদের নাগাল পাওয়ার একটা সুযোগ হয়। সে সুযোগ এসেছে বিরাট এক ক্ষতির বিনিময়ে হলেও।
কারসাপক ছোট্ট শহর। মাত্র কয়েক লাখ লোকের বাস। রাস্তায় ভীড় কম। মুল শহরেও রাস্তা ফাকাই বলা যায়। সুতরাং সামনের গাড়িটাকে অনুসরণ করে এগুতে কোনই কষ্ট হলো না আহমদ মুসার।
শহরের পুরানো অংশ।
দু’পাশে পুরানো ধাঁচের বাড়ি। মাঝখানে এবড়ো-থেবড়ো রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলছে গাড়ি। সামনের গাড়িটা দু’শ গজ এর বেশী দূরে না। একই গতিতে এগিয়ে চলছে।
আহমদ মুসা ভেবে পাচ্ছে না গাড়িটার মধ্যে প্রতিক্রিয়া নেই কেন? এতক্ষণেও গাড়িটা কোন সন্দেহ করেনি, এটা স্বাভাবিক নয়। তাহলে কি বৃথাই সে কোন ভূয়া লোককে অনুসরণ করেছে যে কোন সাত-পাঁচে নেই এবং যাকে সন্দেহ করারও কিছু নেই! কিন্তু আহমদ মুসার চোখ তো মিথ্যা বলতে পারে না। লোকটি সম্পর্কে তার যে সন্দেহ, তার মধ্যে কোন খাদ নেই।
তাহলে গাড়িটি কি তার জন্যে কোন ফাঁদ পেতেছে। কথাটা মনে হওয়ার সাথে সাথে চকিতে একবার পেছনটা দেখে নিল। না, পেছনে যতদূর পর্যন্ত চোখ যায়, তাকে ফলো করার মত কোন গাড়ি তার চোখে পড়ছে না। সামনের গাড়িটা অয়্যারলেস মেসেজ পাঠিয়ে সাহায্য ডেকে আনতে এবং ফাঁদে আটকাতে পারে তাকে।
গাড়ি তখন অনেকটা শহরতলী এলাকায় বেরিয়ে এসেছে। দু’ধারে ইতস্তত বিক্ষপ্ত বাড়ি। মাঝখান দিয়ে ভাঙা-চুরা অমসৃণ রাস্তা।
রাস্তার চেহারা দেখেই আহমদ মুসা বুঝতে পারল, বেশিদূর এগোয়নি রাস্তাটা।
সামনেই একটা মোড়। আগের গাড়িটা মোড় পেরিয়ে গেছে।
আহমদ মুসা মোড় পেরিয়ে দেখল,কিছুদূর গিয়ে সামনের গাড়িটা রাস্তা থেকে নেমে যাচ্ছে সরু একটা রাস্তা ধরে। রাস্তাটি কিছুদূর এগিয়ে গাছ-পালা ঘেরা একটা বাড়িতে গিয়ে উঠেছে।
আহমদ মুসা গাড়ি থামল। তারপর গাড়ি ব্যাক করে একটু আড়ালে চলে এল। একটা ঝোপের ফাঁক দিয়ে রাস্তা ও বাড়ির একটা অংশ দেখতে পাচ্ছিল সে। দেখল,সামনের গাড়িটা বাড়িতে ঢুকে গেল। হারিয়ে গেল গাড়িটা গাছ-পালার আড়ালে।
আহমদ মুসা তাড়াতাড়ি গাড়িটা রাস্তার পাশে একটা ঝোপের আড়ালে রেখে নেমে এল গাড়ি থেকে।