একটু চোখ বুলিয়ে নিন
সকাল
০১,
দিমিত্রি বলল-মিঃ স্ট্যানফোর্ড আপনি কি বুঝতে পারছেন আমাদের অনুসরণ করা হচ্ছে?
হ্যাঁ জানি। গত চব্বিশ ঘণ্টা ধরেই ব্যাপারটি তিনি লক্ষ্য করছেন। দুজন পুরুষ এবং একটি মহিলা । অতি সাধারণ পোশাক । ঘরোয়া ধরনের । পর্যটকদের ভীড়ে মিশে যাবার চেষ্টা করছে তারা । কিন্তু সকালের হালকা আলগা ভীড়ে ব্যাপারটা কঠিন ও দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর এ জায়গাটা এমনিতেও তেমন কিছু পর্যটকসঙ্কুল নয়। হ্যারী স্ট্যানফোর্ড ওদের সহজেই খেয়াল করতে বা ধরে ফেলতে পেরেছিলেন । কারণটা হয়ত ওদের অতি বেশি রকম ক্যাজুয়াল থাকার আপ্রাণ চেষ্টা। সেটাই নজর কেড়ে নেয়। বড় বেশি রকম ছিল ওদের ওর দিকে না দেখার চেষ্টাটা। অথচ যতবারই তিনি মাথা ঘুরিয়েছেন বা আলতো তাকিয়েছেন, ওদের একজন না একজন কেউ ওর দিকেই তাকিয়েছিল। অনুসরণ করার পক্ষে হ্যারী স্ট্যানফোর্ড সহজ শিকার। তার ছয়ফুট উচ্চতার দীর্ঘ চেহারা । মাথা ভরা শুভ্র চুলের ঢেউ। আভিজাত্যময়, এবং প্রায় উদ্ধত দাম্ভিক প্রভূত্ব ব্যাঙ্গক শরীরী ভাষা । সবার নজর কাড়বার পক্ষে যথেষ্ট। এবং এর পরও তার সঙ্গী হিসেবে রয়েছে বিদ্যুত চমকময় এক রক্তকেশী সুন্দরী যুবতী। একটি ব্যাঘ্র সদৃশ জার্মান শেফার্ড এবং দিমিত্রি কামিনস্কি। সাড়ে ছয়ফুট লম্বা, পেশীময়। নাহ, সত্যিই চেষ্টা করলেও হারিয়ে ফেলা সম্ভব নয় এই দলটাকে। স্ট্যানফোর্ড ভাবলেন।
উনি জানে কে ওদের পাঠিয়েছে এবং তিনি আগত প্রায় এক ভয়ঙ্কর বিপদের গন্ধ স্পষ্ট টের পাচ্ছেন। বহুদিন ধরেই, নিজের সপ্তম ইন্দ্রিয়, লোকে যাকে বলে ইনসটিঙ্কট, তার ওপর প্রবল আস্থা তার। এই আঁচ করবার বহু আগে থেকে গন্ধ পাবার বিশেষ ক্ষমতাটিই তাকে সর্বশেষ্ঠ ধনীদের একজন বানিয়েছে। ফোর্বস ম্যাগাজিন তার সম্পত্তির আনুমানিক হিসাব দিয়েছে সত্তর বিলিয়ন ডলার।
ফরচুন-এর মতে এটা নব্বই বিলিয়ন। হ্যারী স্ট্যানফোর্ড জানেন দুটোর কোনটাই সঠিক নয়। তার সম্পত্তির আসল হিসাব অনেক অনেক বেশি। প্রকাশিত হিসাবগুলো হিমশৈলের চুড়োটুকুই শুধু। নিত্য দিনই দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ব্যারনস, দি ফিনানসিয়াল টাইমস কাগজ পত্রপত্রিকা গুলোয় তাকে নিয়ে ও তার কর্মজীবন নিয়ে অবিশ্বাস্য উত্থান বিষয়ে লেখা এবং ছবি প্রকাশিত হয়। বাণিজ্য জগতে হ্যারী স্ট্যানফোর্ড এক চুড়ান্ত বিস্ময়। তিনিই বাণিজ্য দৈত্য স্ট্যানফোর্ড এন্টারপ্রাইজ-এর একচ্ছত্র মালিক। বাণিজ্য জগতের কাছে নিজের কর্মদক্ষতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের কারণে তিনি এক বিস্ময়কর কিংবদন্তী ৷ লার্জার দেন লাইফ হয়ে ওঠা চরিত্র ।
হ্যারী স্ট্যানফোর্ড যেহেতু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, সংবাদ মাধ্যম তাই তার সব কিছুই জানে এবং জনগণকে জানায়। আবার সেই পাবলিক ফীগার ব্যবসায়ী হ্যারী স্ট্যনফোর্ডের আড়ালে আত্মগোপন করে আছে এক অন্যতর ঘরোয়া পারিবারিক হ্যারী স্ট্যানফোর্ড। সংবাদ মাধ্যম যাকে ছুঁতে পারে না। জনগণ সে হ্যারী স্ট্যানফোর্ড এর জীবন যাপন সম্পর্কে কিছুই জানতে পারে না, জানে না, সেই স্ট্যানফোর্ডই আসল । যার সবটুকুই আড়ালে গোপনে।
তোমরা কোথায় যাচ্ছ? সুন্দরী লালচুল যুবতীটি প্রশ্ন করে। হ্যারী উত্তর দেবার অবস্থায় ছিলেন না। তিনি তখন এক অন্য জগতে। রাস্তার অপর দিকের ফুটপাথে তখন অনুসরণকারী জুটিটির ওপর তার মনোনিবেশ। সারা শরীর জুড়ে থমকে রয়েছে এক রুদ্ধ বিরক্তি, বিপদের অনুভূতিটার সাথে সাথে তার মন জুড়ে এই যে ওরা তার পারিবারিক জীবনে নাক গলাচ্ছে। তিনি যেখানে যাচ্ছেন, তার ব্যক্তিগত স্বর্গোদ্যান, সেখানেও ওরা পিছন ধরে এসে হাজির হয়েছে। এর বিরুদ্ধেই প্রচন্ডতর এক রাগে সোচ্চার হয়ে উঠতে চাইছিলেন তিনি। কান আর নিসের মধ্যে আল্পস পর্বত চুড়ার পথে
অবস্থিত সেন্ট পলস ডি ভেনস এর মন জুড়াননা প্রকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্যবলী সত্যিই মনোমুগ্ধকর। উচ্চতর অবস্থান থেকে চারপাশে যে দিকে তাকানো যায় রঙবেরঙের ফুল আর বিভিন্নতর অর্কিড। পাইন সারির বন। সেন্ট পল-ডি ভেনস যেন কোন প্রাকৃতিক শিল্পীর স্টুডিও নাকি ভোলা ক্যানভাস? যে রঙীনতর ক্যানভাসের উচ্ছল চুম্বক টানে সারা পৃথিবী থেকে ছুটে আসেন পর্যটকের দল।
এখন স্ট্যানফোর্ড এবং তার দলবল দাঁড়িয়ে আছেন রু গ্র্যান্ডে। স্ট্যানফোর্ড তার সঙ্গিনীর দিকে ফিরে তাকালেন । সোফিয়া তুমি কি মিউজিয়াম পছন্দ করো? হা নিশ্চয়ই । যুবতীটি হ্যারীর পছন্দে বা যে কোন কথায় সায় দিয়ে তাকে খুশি করতেই সদা উৎসুক । তার জীবনে সে আগে কখনো হ্যারী স্ট্যানফোর্ডের মত কোন পুরুষের সাথে মিলিত হয়নি,
আলাপ করেনি । কথা বলার সুযোগ পায়নি। দীর্ঘযাত্রার সঙ্গিনী হওয়া তো অনেক দূরের কথা। আমি ভাবতাম যৌনতার ব্যাপারে সবকিছুই আমি জেনে ফেলেছি। আর কিছু বাকি নেই। হে ভগবান, হ্যারীর সাথে বিছানায় না গেলে আমি কোনদিন জানতেই পারতাম না
সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।