একটু চোখ বুলিয়ে নিন
ইউহাওয়া বলে – “লাঈছ বিন মোশান উপস্থিত হয়ে ব্যাপারটা খুলে বললে ভাল হয় না? এ ব্যাপারে ঐ শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তির অবদানই বেশি।” “ঐ বৃদ্ধ যাদুকরকে এখন কি করে ডেকে পাঠাব?” কা’ব বিন আসাদ অসন্তুষ্টির একটু ভাব নিয়ে বলে– “তুমি বলতে থাক। তোমার উপর আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে।”
বৃদ্ধ ইহুদী নড়েচড়ে বসে বলে– “এখানেই তিনি আছেন। আমরা তাকে সঙ্গে করে নিয়েই এসেছি। শুধু তাই নয়, মুহাম্মাদকে যে কতল করবে তাকেও নিয়ে এসেছি। আর এখন আমরা বিলম্ব করতে পারি না। আমাদের একান্ত আশা ছিল, কুরাইশ, গাতফান এবং অন্যান্য সহযোগী গোত্রগুলো সম্মিলিতভাবে ইসলামের নাম-নিশানা দুনিয়া থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিবে। কিন্তু আশায় গুড়ে বালি হয়েছে। প্রতিটি রণাঙ্গনে তারা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। আমরা তাদেরকে মদীনা আক্রমণে প্ররোচিত করেছিলাম। তারা এ পর্যন্ত এসেও চরম কাপুরুষতার পরিচয় দিয়ে পালিয়ে গেল। ইহুদীদের খোদার কসম। কা’ব! মুসলমানদের উপর পেছন দিক থেকে আক্রমণ না করে খুবই অনুচিত কাজ করেছ।”
কা’ব বিন আসাদ কিছুটা বিব্রত হয়ে বলে– “ইতোপূর্বে তার কারণ ব্যাখ্যা করেছি। কারণ সঠিক ছিল না ভুল?” বৃদ্ধ বলে– “সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে গেছে এখন আমরা কুরাইশদের বিজয়ের অপেক্ষা করতে পারি না।” সাথে সাথে ইউহাওয়াকে উদ্দেশ করে বলে– “লাঈছ বিন মোশানকে ডাক। অপরজন আপাতত বাইরে থাকুক।”
ইউহাওয়া রূম থেকে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই লাঈছ বিন মোশানকে নিয়ে ফিরে আসে। সে ছিল ৭০ থেকে ৮০ বছরের মাঝামাঝি বয়সের এক বৃদ্ধ। তার চুল-দাড়ি দুধের ন্যায় সাদা হয়ে গিয়েছিল। দাড়ি ছিল বেশ লম্বা। চেহারা লাল টুকটুকে। লাল-সাদায় মিশ্রিত গোধুমবর্ণ। পৌরুষদীপ্ত উজ্জ্বল কান্তি শরীর। তবে শরীরের ভাঁজে ভাঁজে বার্ধ্যকের ছাপ। উষ্ট্র রঙ্গের আলখেল্লা পরিহিত ছিল সে। হাতে ছিল বৃদ্ধকালের সাথি ‘লাঠি’। লাঠির উপরাংশ কারুকার্য খচিত ছিল। লাঠি মাটিতে রেখে দিলে মনে হত যেন জীবিত একটি সাপ ফনা তুলে আছে।
ইহুদী জগতে লাঈছ বিন মোশান একজন জাদুকর হিসেবে সুপরিচিত ছিল। নযরবন্দী এবং জাদু প্রদর্শনে সে খুব দক্ষ ছিল। মক্কা-মদীনার মধ্যবর্তী কোন এক গ্রামে তার বাসস্থান। সমাজে তার সম্পর্কে অনেক ধরনের কথা প্রচলিত ছিল। মৃতকে স্বল্প সময়ের জন্য জীবিত করতে পারত। যে কোন পুরুষ কিংবা মহিলাকে মুহূর্তে আয়ত্ত করা ও ভক্ত করার ক্ষমতা তার ছিল। ইহুদীরা তাকে বিশপ ও পাদ্রী বলে মান্য করত। সে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব ছিল।
সে কক্ষে প্রবেশ করা মাত্রই সবাই দাঁড়িয়ে যায়। সে আসন গ্রহণ করলে এক এক করে সকলেই বসে পড়ে।
“মোশানের বংশ-মর্যাদা সম্পর্কে কে না জানে?” কা’ব বিন আসাদ বলে– “হুদীদের খোদার কসম! আমাদের মধ্য হতে কেউ আপনাকে ডেকে পাঠানোর সাহস করতে পারে না। মনে হয় ইউহাওয়া আপনাকে নিয়ে এসেছে।”
“আমি কোন পয়গম্বর নই কা’ব!” লাঈছ বিন মোশান বলে– আমি এ জাতীয় আকর্ষণীয় শব্দ শুনতে চাইনা। সম্মান এবং মর্যাদা দেখানোর সময়ও নেই। কেউ না ডাকলেও আমি আসতাম। তোমরা গুরুদায়িত্ব পালন করতে সময় নষ্ট করে ফেলেছ বহুত। তোমাদের চেয়ে এই মেয়েটি শতগুণে ভাল। কারণ যে কাজ তোমাদের করার কথা সে তা নিজেই সম্পন্ন করেছে।”
কা’ব বিন আসাদ বলে–“শ্রদ্ধাভাজন ইবনে মোশান! আমরা এখনও এমন চুড়ান্ত পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তা করিনি। মুহাম্মদকে হত্যার মত ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিলেও কোনক্রমেই ইউহাওয়াকে এ কাজে ব্যবহার করতাম না। এমন অসাধারণ সুন্দরী এবং যুবতী মেয়েকে আমরা ব্যবহার করতে পারি না।”
লাঈছ উদ্বেগের সাথে জানতে চায় –“কেন পারনা? সারা দুনিয়ার ইহুদীদের খোদার রাজত্বের কথা কি ভুলে গেছ?… দাউদের তারকার শপথ, গোটা মানব জাতির উপর বনী ইসরাঈলের রাজত্ব কায়েম করতে আমাদের বিরাট কুরবানী করতে হবে। মানুষের স্বভাবজাত দুর্বল বিষয়গুলো চিহ্নিত করে করে নিশানা করতে হবে। একজন পুরুষ কি চায় জান?… একদিকে ইউহাওয়া আর অন্যদিকে উন্নতজাতের বিশটি ঘোড়া এবং বিশজন গোলাম দাঁড় করিয়ে দিয়ে কাউকে যদি ইচ্ছামত গ্রহণ করার অধিকার দেয়া হয়, তাহলে দাউদের তারকার শপথ করে বলতে পারি, সে ঘোড়া এবং গোলামের পরিবর্তে ইউহাওয়াকেই গ্রহণ করবে।”
কক্ষে কিছুক্ষণের জন্য সুনসান নীরবতা নেমে আসে। কারো মুখে কোন কথা নেই। বিস্ফোরিত চোখগুলো চেয়ে থাকে লাঈছের দিকে।