একটু চোখ বুলিয়ে নিন
মিসির আলির ধারণা ছিল, তিনি সহজে বিরক্ত হন না। এই ধারণাটা আজ ভেঙে
যেতে শুরু করেছে। ঠিক এই মুহূর্তে তিনি অসম্ভব বিরক্ত। যে রিকশায় তিনি
উঠেছেন, তার সীটটা ঢালু। বসে থাকা কষ্টের ব্যাপার। তার চেয়েও বড় কথা, দু”
মিনিট পরপর রিকশার চেইন পড়ে যাচ্ছে।
এখন বাজছে দশটা তেইশ। সাড়ে দশটায় থার্ড ইয়ার অনার্সের সঙ্গে তাঁর একটা
টিউটরিআল আছে। এটা কোনো ক্রমেই ধরা যাবে না। যে-হারে রিকশা এগুচ্ছে, তাতে
ইউনিভার্সিটিতে পৌছতে তাঁর আরো পনের মিনিট লাগবে। এ কালের ছাত্ররা এতক্ষণ
তাদের টিচারদের জন্যে অপেক্ষা করে না। ..
মিসির আলি তাঁর বিরক্তি ঢাকবার জন্যে একটা সিগারেট ধরালেন। ঠিক তখন
পঞ্চম বারের মতো রিকশার চেইন পড়ে গেল। রিকশাওয়ালার ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে
হচ্ছে চেইন পড়ার ব্যাপারটায় সে আনন্দিত। গদাইলশকরী চালে সে নামল এবং
সামনের চাকাটা তুলে ঝাঁকাঝাকি করতে লাগল!
চেইন পড়ে গেলে কেউ চাকা তৃলে ঝীঁকাঝাকি করে বলে তাঁর জানা ছিল না। রক
গলায় বললেন, ‘এ রকম করছ কেন?
রিকশাওয়ালা জবাব দিল না। গরম চোখে তাকাল এবং মিসির আলিকে সম্পূর্ণ
উপেক্ষা করে একটা বিড়ি ধরাল। মিসির আলি রাগ সামলাবার চেষ্টা করতে লাগলেন।
কুড়ি থেকে এক পর্যন্ত উল্টো দিকে গুনলেন। জীবনানন্দ দাশের “মনে হয় একদিন’
কবিতার প্রথম চার লাইন মৃদু স্বরে আওড়ালেন। মিসির আলির ধারণা, কিছু কিছু
কবিতা মানুষের অস্থিরতা কমিয়ে দেয়। “মনে হয় একদিন” এমন একটি কবিতা।
কিন্তু আজ তাঁর রাগ কমছে না। রিকশাওয়ালা কঠিন মুখ করে নির্বিকার ভঙ্গিতে
বিডি টানছে। মিসির আলির দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।
মিসির আলি নিজেকে সামলাবার জন্যেই ভাবতে লাগলেন–তিনি নিজে যদি
সিগারেট ধরাতে পারেন, তাহলে এই লোকটি পারবে না কেন? জুন মাসের প্রচন্ড
লেখক সম্পর্কে
বাংলাদেশের লেখালেখির ভুবনে প্রবাদ পুরুষ। গত ত্রিশ বছর ধরেই তাঁর তুঙ্গস্পর্শী
জনপ্রিয়তা । এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপক ছিলেন । অধ্যাপনা
ছেড়ে হঠাৎ করেই চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের
‘দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, আমার আছে জল, … ছবি বানানো চলছেই।
ফাঁকে ফাঁকে টিভির জন্য নাটক বানানো। মানুষ হিসেবে তাঁকে তাঁরই সৃষ্ট চরিত্র হিমু এবং মিসির আলি মতোই রহস্যময় বলে
মনে হস্ত । তার বেশিরভাগ সময় কাটে নিজের তৈরি নন্দনকানন “নুহাশ পল্লী’তে ।