একটু চোখ বুলিয়ে নিন
১
তেষট্টি লিভিংস্টোন রোড।
আহমদ মুসা বাইবেল সোসাইটির সামনে দাঁড়িয়ে সামনের অংশটার উপর নজর বুলাল।
গেট পার হলেই প্রশস্ত একটা কম্পাউন্ড। তারপরে কম্পাউন্ডের উত্তর প্রান্ত বরাবর দীর্ঘ বারান্দা। চার ধাপের সিঁড়ি ভেঙে বারান্দায় উঠতে হয়। লম্বা বারান্দার মাঝখানে একটা বড় দরজা। বড় দরজার দু’পাশে বারান্দায় আরও কয়েকটা দরজা আছে। বিল্ডিং-এর মাথায় একটা সাইনবোর্ড। লেখা আছে, বাইবেল সোসাইটি স্কুল।
বাইবেল সোসাইটি স্কুলের পুব পাশে একটা গীর্জা। গীর্জা এবং স্কুল একই বাউন্ডারী প্রাচীরের ভেতরে। আহমদ মুসা বেলাল ম্যাকাকোর কাছ থেকে বাইবেল সোসাইটির যে বিবরণ পেয়েছে, তাতে এখানে বাইবেল স্কুল ও গীর্জা ছাড়াও একটা আবাসিক এলাকা ও গোডাউন এলাকা রয়েছে। সব নিয়েই বাইবেল সোসাইটি কমপ্লেক্স।
আহমদ মুসা বাইবেল সোসাইটির সামনে দিয়ে লিভিংস্টোন রোড ধরে হাঁটতে হাঁটতে ভাবল, গোডাউন ও আবাসিক এলাকা তাহলে গীর্জা ও স্কুলের পেছনে হবে।
আহমদ মুসা দেখেছে, স্কুল ও গীর্জার মাঝে উভয়কে বিভক্তকারী একটা প্রাচীর আছে।
সকালের আমেজ কেটে যাচ্ছে। রাস্তায় লোক চলাচল দু’একজন করে শুরু হয়েছে। কিন্তু গেটের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়েও বাইবেল সোসাইটির ভেতরে কাউকে আনাগোনা করতে দেখা পেল না আহমদ মুসা। হয় সকলে ঘুমচ্ছে অথবা স্কুল ও গীর্জার কাজ শুরু হয়নি বলে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। আহমদ মুসা মনে করল, ভেতরে ঢুকার এটাই সময়।
কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল, স্কুল ও গীর্জার অফিস খুললে ভেতর ও বাইরের লোকের আনাগোনা বাড়বে, সেই সুযোগে প্রবেশ করাটা সবচেয়ে সুবিধাজনক। সে আরও ভাবল, ভেতরে ঢোকার আগে চারদিকটা একবার ভাল করে দেখা দরকার। এতে ভেতরে ঢুকে জরুরী মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয়া তাঁর পক্ষে অনেক সহজ হবে।
ঠিক করল আহমদ মুসা, স্কুল ও গীর্জা খুলুক, ততক্ষণে সে বাইবেল সোসাইটি কমপ্লেক্সের চারদিকটা ঘুরে আসবে।
সোসাইটি কমপ্লেক্সের পুব দিক দিয়ে গীর্জার পাশ বরাবর বেশ ফাঁকা। তারপরে সীমানা প্রাচীর। প্রাচীরের পাশ দিয়ে পায়ে চলার মত রাস্তা।
আহমদ মুসা এগুলো সেই রাস্তা ধরে। পায়ে চলা রাস্তাটা উত্তর দিকে নদীর ধার পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়েছে।
আহমদ মুসা নদীর ধারে বাইবেল সোসাইটির সীমানা প্রাচীরের পূর্ব-উত্তর কোণ ঘেঁষে দাঁড়াল।
সেখান থেকে নদীর ধারটা ঢালু হয়ে নেমে গেছে নদীতে।
আহমদ মুসা বাইবেল সোসাইটির দিকে নজর ফেরাল। দেখল, হাত কয়েক দূরে উত্তর দিকের সীমানা প্রাচীরের গায়ে একটা বড় গেট। গেট থেকে একটা পাকা ঘাট নেমে গেছে নদীতে। গেটটা বন্ধ।
আহমদ মুসা বুঝল, নদী পথে এদের যোগাযোগ এ ঘাট পথেই। মুসলিম নেতৃবৃন্দকে কিডন্যাপ করে সম্ভবত এ ঘাট পথেই বাইবেল সোসাইটিতে ঢুকিয়েছে।
উত্তর সীমানার পশ্চিমে বেশ কিছুদূর এগিয়ে নদীর দিকে বেড়ে আসা বিল্ডিং এর মূল দেয়ালের সাথে মিশে গেছে। অর্থাৎ বিল্ডিং-এর পশ্চিম অংশের উত্তর প্রান্তটা, বলা যায়, পানির উপর দাঁড়িয়ে আছে।
আহমদ মুসা স্মরণ করল, বিল্ডিং-এর এই অংশটা বেলাল ম্যাকাকোর বিবরণ অনুসারে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার হয়।
আহমদ মুসা ভাবল, পণবন্দি মুসলিম নেতৃবৃন্দকে নিশ্চয় গীর্জা ও স্কুল অংশে রাখা হয় নি। কারন ১২ জনের একটা বিরাট দলকে গীর্জা ও স্কুলের মত জনসমাবেশের স্থানে রাখা সম্ভব নয়। তাহলে নিশ্চয় রাখা হয়েছে আবাসিক অথবা গোডাউন এলাকায়। এ দু’য়ের মধ্যে কোথায় তাদের রাখা হতে পারে? মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ ও সম্মানিত নেতাদের আরামদায়ক আবাসিক এলাকায় রাখাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যাদের জীবনের সীমা পনের দিনে সীমিত করা হয়েছে, তাদের সুখ-সুবিধার কথা নিশ্চয় ওদের বিবেচনার কথা নয়।
কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারল না আহমদ মুসা।
ভেতরে ঢুকেই সন্ধান করতে হবে, ভাবল আহমদ মুসা। তবে দিনের বেলা এই সন্ধান করা খুবই বিপজ্জনক। কিন্তু সামনে একটা রাত মাত্র তার হাতে আছে। তারপরেই ১৫তম দিন। কে জানে পনের তারিখের সূর্যোদয়কেই যদি ওরা বন্দীদের শেষ সময় ধরে থাকে। সুতরাং শেষ রাতের ঝুঁকি সে নিতে পারে না। তাই সকালেই সে ছুটে এসেছে।
কিন্তু দিনের এই ঝুঁকিপূর্ণ মিশন তার কেমন হবে? বন্দী নেতৃবৃন্দকে খুঁজে পাবার আগে সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেলে ওদের কাছে ঠিক সময়ে পৌঁছা এবং যথাসময়ে উদ্ধার করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। অতীতে কখনই সময় তার কাছে এত মুল্যবান মনে হয় নি। শত্রুর এমন ‘ডেডলাইন’- এর মোকাবিলাও তাকে করতে হয়নি কখনও।
আহমদ মুসার দু’চোখ নিবদ্ধ ছিল বাইবেল সোসাইটির উত্তর প্রান্ত বরাবর নদী তীরের উপর। সংঘ নদীর স্বচ্ছ পানি ঢেউয়ে সোয়ার হয়ে এসে আছড়ে পড়ছে পাথর বাধানো তীরে। সেই ঢেউয়ে নাচছিল মাঝারি সাইজের একটা মটর বোট। মটর বোটটি আহমদ মুসার আগেই নজরে পড়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই এবার মটর বোটটির অবস্থান আহমদ মুসার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। বোটটি ঘাট থেকে অতদূরে কেন?