একটু চোখ বুলিয়ে নিন
মদীনা হিজরতের পরের ঘটনা ।
নবীজি (সা.) এখনও দুনিয়াতে বর্তমান ।
ঘোড়ায় চড়ে মক্কা-মদীনার মধ্যবর্তী বিস্তৃত মরু-অঞ্চল অতিক্রম করে মদীনার দিকে
এগিয়ে যাচ্ছে এক মুসাফির । লোকটা একা । সফরসঙ্গী বলতে আছে একমাত্র বাহন
ঘোড়াটা ৷
সেকালে কোনো মুসাফির একা সফর করত না। মানুষ কাফেলার আকারে পথ
চলত । দস্যু-তক্করের আশঙ্কা থাকত পায়ে-পায়ে । তা ছাড়া দলবন্ধভাবে পথ চললে
সফর অনেক সহজ ও আরামদায়ক হতো ৷ একজন আরেকজন থেকে সাহায্য
পেত । কারও অসুখ-বিসুখ হলে অপরের থেকে সেবা-সহযোগিতা পেত ।
কিন্ত তারপরও এই মুসাফির নিঃসঙ্গ কেন?
কোথায় যাচ্ছে সে?
এ-প্রশ্নের উত্তর তার ছাড়া আর কারও জানা নেই । তাকে কাফেলাছিন মুসাফির
কিংবা দিকহারা পথিক বলে মনে হচ্ছে । কিন্ত তার মুখে, তার হাব-ভাবে এমন
কোনো লক্ষণ তো দেখা যাচ্ছে না! দীর্ঘ সফরের ক্লান্তির ছাপ তার যুখাবয়বে
পরিস্ষুট । কিন্তু সে সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত ও ভাবলেশহীন । কখনও গুনগুন করে গান
গাইছে । কখনওবা মনে হচ্ছে, সে তার ঘোড়ার সঙ্গে এমনভাবে কথা বলছে, যেন
ঘোড়া তার কথা বুঝছে।
পথিক তার বাহনটাকে ক্রান্ত হতে দিচেহ না। ইতিমধ্যে দুবার যাত্রাবিরতি দিয়েছে।
সঙ্গে যেসব খাদ্য-খাবার আছে, পরিধানে যে-বন্ত্র আছে, তাতে অনুমিত হচ্ছে, এ
জীবিকার সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ানো কোনো বন্দু নয় এবং কোনো গরিব
লোকও নয় । তার চেহারার জৌলুস ও গান্তীর্যপূর্ণ দেহাবয়ব প্রমাণ দিচ্ছে, লোকটি
তার গোত্রের মান্যবর কোনো ব্যক্তিত্বই হবে।
তার সফরের আরও একটা সূর্য অস্তমিতপ্রায় । এই মুহুর্তে সে বালু-মাটির তৈরী
উচু-নিচু টিলা-টিপির পাকডন্ডি অতিক্রম করছে । তার বোধহয় জানা আছে, কাছেই
একস্থানে ছোট একটা খেজুরবাগান আছে। এমন প্রশাস্ত মনে পথ চলছে, যেন
নিজের উপর পুরোপুরি আস্থা আছে তার ।