একটু চোখ বুলিয়ে নিন
এক
আমাদের কিছু জমিজমা ছিল। আমার বাবা নিজে করেননি । তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলেন। সম্পত্তির সঙ্গে একখানা মেজাজও তাঁকে পূর্বপুরুষেরা দিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর তেজ বিশেষ ছিল না, তবে বঝাঁঝটা ছিল খুব কড়া রকমের ।
সময়টা বাবার জন্য যথেষ্ট ভালো ছিল না। শহর বন্দর অফিস আদালত কলকারখানায় ব্যক্তির আত্মসত্তা লোপের সময় তখন। বাবা পূর্বপুরুষের গরিমায় নিজের শোণিত উষ্ণ রাখতে চেষ্টা করতেন। ঈষদুষ নয়, কিছুদিন রীতিমতো উষ্ণই রাখতে পেরেছিলেন। তার কারণ বাবা সে পিতৃপুরুষদের সঞ্চিত বিত্তে আত্মশোণিতের হিমোগ্লোবিন কণা উজ্ভ্বল রাখতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি । কিন্তু, হায়রে । কবে কেটে গেছে সে কালিদাসের কাল!
আমার বাবা যেভাবে দিনাতিপাত করতেন তাকে কিছুতেই একজন সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক জীবন ধারণ বলা যাবে না। তাঁর স্বপ্ন কল্পনা চিন্তা বাসনার বাগানে পিতৃপুরুষদের প্রেতাত্মারা দলে দলে হানা দিতো। এই প্রেতাত্মারাই তাঁকে নেশাগ্রস্ত করতো। তিনি একজন নেশাগ্রস্ত মানুষের মতোই জীবন যাপন করতেন।
বলতে ভুলে গেছি। আচারে ব্যবহারে তিনি উগ্র রকমের পরহেজগার মানুষ ছিলেন। তাঁর বিশ্বেস সংস্কার নিয়ে ঠাট্টা করবো অন্তত তেমন কুসন্তান আমি নই। বাবা ধর্মপরায়ণ মানুষ ছিলেন। শরীয়তের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতেন। চুড়ান্ত দুঃখের দিনেও আল্লাহর ওপর ভর করে নির্বিকার থাকতে পারতেন।
অতি ছোটো বয়সে তাঁকে হাতীর দাঁতে খোদাই করা ব্যক্তিত্বের অনুপম স্তম্ভ মনে করতাম। এখন বুদ্ধি বিবেচনা পেকেছে। দুনিয়াদারীর যাবতীয় বস্তু বিবসনা করে ভেতরের ব্যাপার জানার মতো দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে চেতনা।
লেখক সম্পর্কে
আহমদ ছফা
জন্ম: ১৯৪৩ সাল
গাছবাড়িয়া, চট্টগ্রাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রী বিজ্ঞানে এম. এ গবেষক, বাংলা একাডেমী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন । গল্প. উপন্যাস, কবিতা, গান, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণ কাহিনী মিলিয়ে তিরিশটিরও অধিক গ্রন্থের প্রণেতা ।
সম্পাদকীয় উপদেষ্টা অধুনালুপ্ত দৈনিক গণকণ্ঠ ও প্রধান সম্পাদক সাপ্তাহিক উত্তরণ । বাংলাদেশ লেখক শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সভাপতি । একাধিক রচনা একাধিক ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং হওয়ার পথে। একাধিক সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। জার্মানির ভেৎসলার শহরের মহাকবি গ্যোতের
স্থৃতিবিজড়িত কিয়োঙ্কটি (পানশালা) আহমদ ছফার নামে নামকরণ করা হয়েছে।