একটু চোখ বুলিয়ে নিন
দু-হাজার বছর আগের কথা
নিউইয়র্ক : ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯।
আজ থেকে প্রায় দু-হাজার বছর আগের কথা। সে সময় রোমে একধরনের নিষ্ঠুর প্রাণসংহারী খেলা চলতো বিভিন্ন সার্কাস প্রতিষ্ঠানে। এই খেলা হতো মনুষ্যরূপী অসহায় শিকারদের সঙ্গে ক্ষুধার্ত নেকড়ে বা সিংহদের। শিকারীরা অত্যন্ত সতর্কভাবে শিকারের ওপর নজর রাখত। তারপর ধীর অথচ স্থির পদক্ষেপে এগিয়ে যেত এবং ঝড়ের গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়তো নিরীহ শিকারদের ওপর । মুহূর্তের মধ্যে, নির্মমভাবে তাদের ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলতো। এইভাবে অনুষ্ঠিত হত মল্লভূমির হত্যা পর্ব।
কিন্তু মানুষ বিংশ শতাব্দীতে পদার্পণ করেছে। সে এখন আগের তুলনায় অনেক সুসভ্য ও আধুনিক মনস্ক হয়েছে। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অতীতের সেই প্রাণসংহারী খেলার গতি-প্রকৃতি পাল্টেছে। শিকার ও শিকারীর চেহারার মধ্যে এসেছে পরিবর্তন । অতীতের মল্লভূমির একচ্ছত্র নায়ক সুয়েতোমিয়াসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আদালতের স্টেনোগ্রাফার, যার কাজ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঘটনার আনুপূর্বিক বিবরণ নথীভুক্ত করা।
সুদুর অতীতের রোমের সেই মল্লভূমির উদ্ভব ঘটেছে একালের ম্যানহাটানের ফৌজদারী আদালতের ষোলো নম্বর এজলাসে। এখানে এসেছেন বিভিন্ন সংবাদপত্রের ডজন খানেক সাংবাদিক ও বেশ কিছু দর্শনার্থীরা । এরা সকাল সাতটা থেকে এজলাসের বাইরে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছিলেন-যাতে এজলাসের ভেতরে বসতে পারেন এবং খুনের
মামলার চাঞ্চল্যকর বিবরণ পরিষ্কারভাবে জানতে পারেন। দৈনিক পত্রিকার শিরোনামে এই খুনের ঘটনাটি প্রকাশিত হয়েছে। এই ঘটনাটি সব মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে।
এই প্রাণসংহারী খেলায় যাকে শিকার হিসাবে প্রতিপন্ন করা হয়েছে তিনি বছর বত্রিশের এক যুবক । নাম মাইকেল মোরেটি। মোরেটি শান্ত স্বভাবের, ভদ্র, মার্জিত চেহারার ব্যক্তি। তার মুখশ্রী সুন্দর হলেও এক ধরনের বন্যতা ও হিংস্রতার ছাপ সেই মুখে স্পষ্ট। মাইকেলের মাথায় একরাশ কালো চুল। পরিপাটি করে আঁচড়ানো। তার দুচোখের
তারায় গভীর দৃষ্টি। তার পরনে হালকা নীল রঙের শার্টের ওপর ধুসর রঙের স্যুট । গলায় নীল রঙের রেশমী টাই বাঁধা। আর পায়ে পালিশ করা ঝকঝকে চামড়ার জুতো । মাইকেল মোরেটি শান্তভাবে : বিবাদীর টেবিলে বসে আছেন। তার দুচোখে চঞ্চলতা ও উদ্বেগ ফুটে উঠেছে। তিনি এজলাসের চারদিকে বার বার দৃষ্টিপাত করছেন।
এই খেলায় আরেক চরিত্র হলেন রবার্ট ডি সিলভা । তিনি মাইকেল মোরেটির প্রতিপক্ষ। অর্থাৎ শিকারী সিংহের ভূমিকায় তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন। এই আদালতে তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে এসেছেন। তিনি পেশায় নিউইয়র্ক কাউন্ট্রির দুদে ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি। সারা জীবন তিনি কাজের পেছনে ছুটে বেড়িয়েছেন । উচ্চতায় তিনি যদিও খুব বেশি নন
তবে তার দৈহিক গঠনশৈলী খুবই আকর্ষণীয়। ডি সিলভা মুষ্টিযুদ্ধে পারদর্শী। তিনি যৌবনে একাধিক মুষ্টিযুদ্ধে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার মুখের ক্ষত চিহ্গুলি এখনও তার প্রমাণ স্বরূপ বিরাজ করছে।
রবার্ট ডি সিলভা একজন উচ্চা উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষ । যেকোনো ভাবে উচ্চাকাঙখ পূরণ করতে তিনি বদ্ধ পরিকর। তিনি আজ যে জায়গায় এসে পৌঁছেছেন, সেখানে আসতে হলে টাকা বা খুঁটির জোরের প্রয়োজন হয়। কিন্তু তিনি এ দুটোকে সাহায্যের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেননি । সকলের ধারণা ডি সিলভা অসহায় জনগণের সেবায় ব্রতী হয়েছেন।
যে কোনো কাজে জনগণ তাকে পাশে পাবার আশা করেন। তাই তিনি অনায়াসে উন্নতির শিখরে উঠতে পেরেছেন। কিন্তু মানুষের ধারণা ছিল ভুল। ওটা ছিল ডি সিলভার বাইরের মুখোশ। এই ছদ্মবেশের আড়ালে তিনি ছিলেন এক ভয়ংকর নিপুণ যোদ্ধা, ক্ষমা করা বা ভুলে যাওয়া কথাগুলি তার অভিধানের পাতা থেকে মুছে গেছে।
সাধারণত তিনি ছোটো খাটো মামলায় ফৌজদারী আদলতে আসেন না। মামলায় সওয়াল করার মতো তার অধীনে প্রচুর কর্মচারী আছেন। তাদের কাউকে কিংবা ইচ্ছে করলে সিনিয়ার সহকারীদের যে কাউকে পাঠাতে পারতেন। এটা মাইকেল মোরেটির মামলা। এ এক অসাধারণ জটিল মামলা, তাই তিনি নিজেই এই মামলার তদারকির দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি নিজেই এই মামলায় সওয়াল করবেন বলে স্থির করেছেন।
মাইকেল মোরেটির কেসটি নিয়ে গোটা দেশ তোলপাড় হয়েছে। তার সম্পর্কে দেশের সবকটি দৈনিক সংবাদপত্রে নানারকম চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। নিউইয়র্কের পূর্বাঞ্চলে পাঁচটি কুখ্যাত মাফিয়া পরিবারের বসতি। সেখানকার সমস্ত অপরাধ সংঘটিত হয় ওইসব মাফিয়াদের অঙ্গুলি হেলনে। এদের মধ্যে একটি হল গ্র্যানেলি। এই দলটির বিশাল প্রভাব প্রতিপত্তি আছে। এই দলে কর্মীর সংখ্যাও অনেক । গ্রানেলির ডন বা নেতা হলেন আন্তোনিও গ্র্যানেলি। ইনি হলেন মাইকেল মোরেটির শ্বশুর। আন্তোনিও…
সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।