একটু চোখ বুলিয়ে নিন
মিঃ মেহর্ন চশমাটাকে নাকের ওপর ঠিক করে বসালেন। তারপর অভ্যাস মতো একটু কেশে গলাটা
৩ পরিষ্কার করে গভীর চোখে সামনে উপবিষ্ট ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার সামনে
বোকার মতো মুখ করে চুপচাপ বসে থাকা এই লোকর্টিই ইচ্ছাকৃত হত্যার অপরাধে অভিযুক্ত।
মিঃ মেহর্নের বয়স ষাট পেরিয়ে গেছে। মাথার চুলগুলো ধবধবে সাদা। গোলগাল ফোলা মুখে
একটা গোবেচারী ভাব। বেশবাসও মোটের ওপর সাদাসিদে। বাইরে থেকে তাকে দেখলে কোনরকমে ধারণাই
করা যায় না যে তিনি একজন ডাকসাইটে জাদরেল সলিসিটার।
মেহর্নই সর্বপ্রথম ঘরের নীরবতা ভঙ্গ কবলেন। তার কণ্ঠস্বরে অস্বস্তির আভাস কান এড়াবার নয।
“মিঃ ভোল, একথা বলাই বাহুল্য যে আপনি গভীর বিপদের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। তাই এ ব্যাপারে সবকিছু
পরিষ্কার ভাবে আলোচনা হওয়াই বাঞ্নীয়। আমি আশা করবো, কোনকিছু গোপন না করে আমায় সমস্ত
ঘটনাটাই খুলে বলবেন।’
মিঃ লিওনার্ড ভোল এতক্ষণ বোবা চোখে সামনের দেওয়ালে দিকে তাকিয়েছিলেন। মেহর্নের কথায়
এবার একটু নড়েচড়ে বসলেন। তার গলার স্বরও ঘন বিষাদে আচ্ছন্ন।
“আমি জানি. আমি জানি মিঃ মেহর্ন, আপনি আমায় বিশ্বাস করতে পারবেন না। আপনি কেন,
পৃথিবীর কোন লোকই আজ আমার কথায় বিশ্বাস কববে না। কী ভীষণ মিথ্যার জালেই যে আমি পড়েছি!
কী জন্য অপরাধের অভিযোগ আমার মাথায ঝুলছে! কথা বলতে বলতে অপরিসীম হতাশা ডুবে গেলো
তাব কণ্ঠস্বর।
অবশ্য আবেগে দুলে ওঠবার পাত্র মিঃ মেহর্ন নন। সবকিছু খোলা চোখে বিচার বিবেচনা করে
দেখাই তার এতদিনের অভ্যাস। মিঃ ভোলেব কথা শুনতে শুনতে তিনি তার চশমাটাকে চোখ থেকে টেনে
নামালেন। তারপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে কাচ দুটোকে ঘষে-মেজে পালিশ করে আবার তাকে নাকের ওপর
বসালেন।
“ঠিক ঠিক; আপনি যা বলেছেন তাতে বেণণও ভুল নেই কিন্তু আমবাও একদম হাল ছেড়ে বসে
থাকবো না। আমাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে চেষ্টা চালাতে হবে। এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস পবিশেষে আমরাই
সফল হবো। তার আগে পরিষ্কার ভাবে আমাকে সবকিছু জানতে হবে। সেটা বিশৈষ প্রয়োজন। আগে আমাকে
খতিয়ে দেখতে হবে কেসটা আপনার বিপক্ষে কতদূব যেতে পারে। তারপর এর থেকে বেরিয়ে আসবাব
উপায় ভাবতে হবে।’
মিঃ ভোল কিন্তু তখনো বোকার মতো মুখ করে চুপচাপ তাকিয়ে রইলেন। তার বয়স বেশি নয।
পয়ত্রিশের মধ্েই। দেখতে শুনতেও সুদর্শন। তবে হতাশার কালো মেঘ জমাট হয়ে থমকে আছে সে মুখে।
মিঃ মেহর্ন মোটের ওপর সমস্ত বৃত্তান্তই জানতেন। তার মক্কেলের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগগুলোই দিনের
আলোর মতো পরিষ্কার। তবু এবার যেন ক্ষণেকের জন্যে তার মনে হলো- না, পুরো ব্যাপারটার মধ্যে
কোথাও কোনও ভুল থাকতেও পারে! মিঃ ভোল হয়তো সত্যি কথাই বলেছেন।
“আপনি নিশ্চয়ই আমাকে অপরাধী বলে ভাবছেন!” অস্পষ্ট কাপা কাপ! গলায় মিঃ ভোল বললেন,
‘আমি জানি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ কত সুদৃঢ়…কিন্তু ঈশ্বরের নামে শপথ নিয়ে বলছি, আমি নিরপরাধ ।
আমি…আমি একটা জালে জড়িয়ে পড়েছি।’ হতাশভাবে মাথা নাড়লেন মিঃ ভোল। “কি করে যে আপনাকে
বোঝাব!…
এমন অবস্থায় পড়লে সকলেই নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে চেষ্টা করবে। মেহর্নও যে এটা
জানেন না তা নয়। তবু, তা সত্তেও তার মনে হলো সত্যিই হয়তো মিঃ ভোল নিরপরাধ।
“আপনি হয়তো ঠিকই বলেছেন, গভীর দুঃখের সঙ্গে ঘাড় নাড়লেন মিঃ মেহর্ন। “তবুও সমস্ত ঘটনাটাই…………
লেখক সম্পর্কে
বিখ্যাত ব্রিটিশ উপন্যাসিক ড্যাম আগাথা মেরি ক্লারিসা
ত্রিস্টি “আগাথা ক্রিস্টি” নামেই সর্বাধিক পরিচিত।
মেরি ওয়েস্টম্যাক্ট ছন্দনামেও লিখেছেন তিনি ।
আগাথা ক্রিস্টির জন্ম ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে।
রহস্য উপন্যাসের অন্যতম গুরুতৃপূর্ণ ও উদ্ভাবনী
লেখকদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয় তাকে । স্যার
আর্থার কোনান ডয়েলের পরেই তার অবস্থান। “দ্য
কুইন অফ ক্রাইম” নামেও তিনি পরিচিত ।
সর্বমোট ৬৬টি রহস্য উপন্যাস লিখেছেন তিনি। এর
পাশাপাশি লিখেছেন ১৪টির মতো ছোটোগল্ল ও
রোম্যান্টিক গল্প । তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো হলো-
মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্টাল এক্সপ্রেস, মার্ডার ইন
মেসোপটেমিয়া, হিকোরি ডিকোরি ডক, দ্য এবিসি
মার্ডার, আ্যান্ড দেন দেয়ার ওয়্যার নান প্রভৃতি ।
এরকুল পোয়ারো এবং মিস মার্পল তার সৃষ্ট বিখ্যাত
দুটো চরিত্র।
ক্রিস্টির অনেকগুলো রহস্য কাহিনি থেকে নির্মিত হয়েছে
চলচ্চিত্র। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ড রেকর্ডস এর
তথ্যানুসারে আগাথা ক্রিস্টি বিশ্বের সর্বকালের সর্বাধিক
বিক্রীত বইয়ের লেখক। তার সমকক্ষে একমাত্র
উইলিয়াম শেকসপিয়ারই অবস্থান করছেন । ইউনেস্কোর
বিবৃতি অনুসারে তিনিই একমাত্র লেখক যার রচনা
সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এ পর্যন্ত
সর্বমোট ৫৬টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তার বই।
১৯৭৬ খ্রিস্টানদের ১২ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের
অক্সফোর্ডশায়ারের উইন্টার্ককে ৮৬ বছর বয়সে
মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাঁকে সমাহিত করা হয়
অক্সফোর্ডশায়ারের সেন্ট মেরি চার্চে ।