Shesh Muhurta by Agatha Christie

শেষ মুহুর্ত – আগাথা ক্রিস্টি (Shesh Muhurta By Agatha Christie)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

ফায়ারপ্লেস ঘিরে যারা বসেছেন তারা সবাই হয় পেশাদার আইনজীবি নয় আইন সম্পর্কে
অনেকের চেয়ে বেশি আগ্রহী । এঁদের মধ্যে আছেন সলিসিটর মার্টিনডেল, রুফুস লর্ড, কে.সি।
হালে কারস্টেয়ার্স মামলায় যে সবার নজর কেড়েছে সেই ছোকরা উকিল ড্যানিয়েলও এসে ভিড়েছে,
এছাড়া ক’জন ব্যারিস্টারও আছেন এঁদের মধ্যে। পাশাপাশি আরও যারা আছেন তাদের মধ্যে আছেন
বিচারক ক্লিভার, লিউইস আ্যাণ্ড ট্রেণ্ড সলিসিটর্স প্রতিষ্ঠানের অন্যতম অংশীদার মিঃ লিউইস, আর
আছেন প্রবীণ আইনজীবী মিঃ ট্রিভূস।
আশি ছুঁই ছুই মিঃ ট্রিভূস শুধু অভিজ্ঞ আইনজীবী নন. তিনি রীতিমত এক ঝানু উকিল। এক
নামী সলিসিটর্স ফার্মের তিনি অন্যতম সদস্য। গুধু সদস্য বললে কমই বলা হবে, বলা উচিত মিঃ
ট্রিভূস এ ফার্মের সবচেয়ে নামী আর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আইন যার নখদর্পণে সেই মিঃ ট্রিভূস আদালতের
আঙ্গিনার বাইরেও এ পর্যস্ত কত যে জটিল মামলার কিনারা করেছেন তার হিসেব নেই। বিখ্যাত
নারীপুরুষদের জীবনের অজানা ইতিহাস তার চেয়ে বেশি জানেন এমন লোক ইংল্যাণ্ডে আর একজনও
আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। পাশাপাশি অপরাধ শাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তার
যথেষ্ট সুনাম আছে। বিচার বিবেচনা যাদের কম এমন অনেকের মতে মিঃ ট্রিভূসেব এখন স্মৃতিকথা
লেখা উচিত, অবশ্য এ বিষয়ে মিঃ ট্রিভ্‌স নিজে তাদের চেয়ে অনেক বেশি জানেন। অনেক বিষয়েই
তিনি অনেকের চেয়ে বেশি জানেন যা বই হয়ে ছেপে বেরোলে মারাত্মক পরিণতি ঘটতে পারে।
আইনজীবীর পেশা থেকে মিঃ ট্রিভূস অনেকদিন হল অবসর নিয়েছেন, এবং আইন সম্পর্কে তাব
মত এক বিশেষজ্ঞের অভিমত এঁ পেশার সঙ্গে যারা যুক্ত তারা শ্রদ্ধা সহকারে শোনেন। ঘরের ভেতরে
সমবেত কথাবার্তায় চাপা গুঞ্জনের মধ্যে মিঃ ট্রিভূসের সরু গলা একেকবার চড়া পর্দায় ওঠার সঙ্গে
সঙ্গে বাকি সবাই চুপ করে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের জন্য ঘরের ভেতরে বিরাজ করছে এক শ্রদ্ধাময় নীরবতা ।
এই সেদিন ওল্ড বেইলি আদালতে একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলার ফয়সালা হয়েছে, সেই মামলা নিয়েই
আলোচনা করছেন আইনজ্ঞেরা। মামলাটা ছিল খুনের, সন্দেহক্রমে পুলিশ যাকে গ্রেপ্তার করেছিল,
বিচারক তাকে বেকসুর খালাস দিষেছেন। উপস্থিত আইনজ্ঞেরা এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে
আলোচনায় মেতেছেন, নানাভাবে বিচারপদ্ধতির সমালোচনাও করছেন।
নিজের পক্ষের সাক্ষিদের একজনের ওপর আস্থা রাখতে গিয়েই মারাত্মক ভুল করেছিল বাদী
বা সরকারীপক্ষ-বিবাদী বা আসামি পক্ষের উকিলকে তিনি কি দারুণ সুযোগ করে দিচ্ছেন প্রবীণ সরকারী উকিল ডেপ্রিচের তা অবশ্যই আচ করা উচিত ছিল। কাজের মেয়েটির দেয়া সাক্ষ্যের পুরোটাই কাজে লাগালেন বিবাদীপক্ষের ছোকরা উকিল আর্থার। বিচার্য বিষয়ের পর্যালোচনা সঠিক পরিপ্রেক্ষিতেই করছিলেন বেম্ট মোর, কিন্তু ততক্ষণে যা হবার হয়ে গেছে- জুরিবৃন্দ কাজের মেয়েটির বিৰৃতি বিশ্বাস
করে বসেছেন। এই জুরিদের নিয়েই হয় যত মুশকিল- কখন কি যে ওঁদের মাথায় ঢুকে পড়বে আগে
থেকে তার কিছুই আঁচ করা যায় না। আর একবার ওঁদের মাথায় কিছু ঢুকে পড়লে হাজার চেষ্টা করেও
তা বের করে আনা যায় না। শাবল প্রসঙ্গে কাজের মেয়েটি সাক্ষির কাঠগড়ায় দাড়িয়ে যা বলল জুরিরা
তাই সত্যি বলে হজম করে নিলেন আর তাতেই যা হবার হয়ে গেল।
মামলাটি সম্পর্কে এতক্ষণ সবাই যে যার মতামত দিচ্ছিলেন, কিন্তু টুকরো টুকরো সেসব মন্তব্য
অসম্পূর্ণ মনে হওয়ায় সবার আড়চোখের চাউনি গিয়ে ঠিকরে পড়ল প্রৌঢ় মিঃ ট্রিভূসের দিকে। কারণ,
এই মামলার প্রসঙ্গে এখনও পর্যস্ত একটি শব্দও তিনি উচ্চারণ করেননি । উপস্থিত সবাই যে তাদের
সবচেয়ে শ্রদ্ধের সহযোগীর মুখ থেকে এ প্রসঙ্গে শেষ কথা শুনতে আগ্রহী তা-ই স্পষ্ট হয়ে দাঁড়াল।

লেখক সম্পর্কে

বিখ্যাত ব্রিটিশ উপন্যাসিক ড্যাম আগাথা মেরি ক্লারিসা
ত্রিস্টি “আগাথা ক্রিস্টি” নামেই সর্বাধিক পরিচিত।
মেরি ওয়েস্টম্যাক্ট ছন্দনামেও লিখেছেন তিনি ।
আগাথা ক্রিস্টির জন্ম ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে।
রহস্য উপন্যাসের অন্যতম গুরুতৃপূর্ণ ও উদ্ভাবনী
লেখকদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয় তাকে । স্যার
আর্থার কোনান ডয়েলের পরেই তার অবস্থান। “দ্য
কুইন অফ ক্রাইম” নামেও তিনি পরিচিত ।
সর্বমোট ৬৬টি রহস্য উপন্যাস লিখেছেন তিনি। এর
পাশাপাশি লিখেছেন ১৪টির মতো ছোটোগল্ল ও
রোম্যান্টিক গল্প । তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো হলো-
মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্টাল এক্সপ্রেস, মার্ডার ইন
মেসোপটেমিয়া, হিকোরি ডিকোরি ডক, দ্য এবিসি
মার্ডার, আ্যান্ড দেন দেয়ার ওয়্যার নান প্রভৃতি ।
এরকুল পোয়ারো এবং মিস মার্পল তার সৃষ্ট বিখ্যাত
দুটো চরিত্র।
ক্রিস্টির অনেকগুলো রহস্য কাহিনি থেকে নির্মিত হয়েছে
চলচ্চিত্র। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ড রেকর্ডস এর
তথ্যানুসারে আগাথা ক্রিস্টি বিশ্বের সর্বকালের সর্বাধিক
বিক্রীত বইয়ের লেখক। তার সমকক্ষে একমাত্র
উইলিয়াম শেকসপিয়ারই অবস্থান করছেন । ইউনেস্কোর
বিবৃতি অনুসারে তিনিই একমাত্র লেখক যার রচনা
সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এ পর্যন্ত
সর্বমোট ৫৬টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তার বই।
১৯৭৬ খ্রিস্টানদের ১২ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের
অক্সফোর্ডশায়ারের উইন্টার্ককে ৮৬ বছর বয়সে
মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাঁকে সমাহিত করা হয়
অক্সফোর্ডশায়ারের সেন্ট মেরি চার্চে ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top