Surinamer Sonkote by Abul Asad-33

সুরিনামের সংকটে – আবুল আসাদ (Surinamer Sonkote by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

নিও নিকারী থেকে একটা মাত্র হাইওয়ে দক্ষিণে বেরিয়ে টটনস ও গ্রোনজা শহর হয়ে গেছে রাজধানী পারামারিবোতে।
আহমদ মূসার গাড়ি বেরিয়ে এল নিও নিকারী শহর থেকে।
শহর থেকে বের হওয়া বিভিন্ন রাস্তা গিয়ে মিশেছে হাইওয়েতে।
আহমদ মূসার গাড়ি গিয়ে সেই হাইয়েওতে প্রবেশ করল।
একজন পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়েছিল রাস্তার পাশে। তার কোমরে ঝোলানো রিভলবার এবং তার হাতে একটা দূরবীন।
পুলিশ অফিসারটি রাস্তার পাশ থেকে হাত তুলে আহমদ মূসাকে গাড়ি দাঁড় করাতে বলল।
চেকপোস্ট নয়, অথচ গাড়ি দাঁড় করাতে বলা হোল।
এভাবে গাড়ি দাঁড় করার আদেশ পাওয়ায় বিরক্ত হলো আহমদ মুসা।
গাড়ি দাঁড় করাল।
গাড়ি দাঁড় করাতেই পুলিশ অফিসারটি জানালা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে বলল, মাফ করবেন, ‘আমরা একজন লোক খুঁজছি’।
‘কাকে খুঁজছেন?’ প্রশ্ন করল ড্রাইভার রূপী আহমদ মুসা।
পুলিশ অফিসারটি একটা ফটো আহমদ মুসার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘এই লোকটি।’
ফটোটির দিকে তাকিয়ে আহমদ মুসা চমকে উঠলো। এ যে আহমদ হাত্তা নাসুমনের ফটো।
আহমদ মুসা জিজ্ঞেস করল, লোকটি চোর-ডাকাত, হাইজ্যাকার নাকি?
‘না ইনি পলিটিশিয়ান। ফেরার। এখন শোনা যাচ্ছে, সে গোপনে সুরিনামে প্রবেশ করেছে’।
‘কোথায় গিয়েছিল সে?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
‘দেশের বাইরে কোথাও।‘
‘কি করে জানা গেল সুরিনামে প্রবেশ করেছেন তিনি।‘
‘সেটা জেনে লাভ নেই। এখন দরকার তাকে পাওয়া। ছবিটা দেখে রাখুন। তাকে পেলে পুলিশে ফোন করবেন।‘
বলে লোকটি গাড়ির জানালা থেকে মুখ সরাতে গিয়ে হাত্তা নাসুমনের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল। বলল, ‘আপনাকে পরিচিত মনে হচ্ছে’।
পুলিশ অফিসারের কথা শেষ না হতেই আহমদ মুসা সামনের সিটের দরজা খুলে দিয়ে বলল, ‘স্যার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলার চাইতে গাড়িতে বসুন। বসে কথা বলুন’।
পুলিশ অফিসারটি উঠে বসল। তার মুখ গম্ভীর। চোখে সন্ধানী দৃষ্টি। আহমদ মুসার পাশের সিটে উঠে বসতে বসতে হাত্তা নাসুমনকে সে বলল, ‘আপনার নাম কি?’
‘আবুল হাত্তা’। বলল আহমদ হাত্তা নাসুমন।
‘আবুল হাত্তা, না আহমদ হাত্তা?
বলেই পুলিশ অফিসারটি পেছনের সিটে বসেই চোখের পলকে তার বাম হাতটা আহমদ হাত্তার দিকে চালনা করে তার দাড়ি ধরে টান দিল। দাড়ি খসে এল তার হাতে। সংগে সংগে চিৎকার করে উঠল পুলিশ অফিসার, ‘ও গড, পাওয়া গেছে। ইউরেকা, ইউরেকা’।
আবার পরক্ষণেই চিৎকার থামিয়ে পুলিশ অফিসারটি গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল, ‘গাড়ি থেকে নামুন মি. আহমদ হাত্তা নাসুমন। আপাতত নাম ভাঁড়ানো, ছদ্মবেশ নিয়ে প্রতারণা, ফেরার হওয়া, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা, ইত্যাদি অভিযোগে আপনাকে আমি গ্রেফতার করলাম’।
বলে গাড়ির দরজা খুলতে গেল পুলিশ অফিসার।
ড্রাইভার রূপী আহমদ মুসা বলল, দরজা লক করে দিয়েছি পুলিশ অফিসার। আপাতত আমরা আপনাকেই এরেস্ট করলাম।
আহমদ মুসার কথা শুনে পুলিশ অফিসার হুংকার দিয়ে আহমদ মুসার দিকে মুখ ঘুরাল। মুখ ঘুরিয়ে দেখল, আহমদ মুসার রিভলবার তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
‘একি ড্রাইভার কি করছ তুমি। পুলিশের দিকে তুমি রিভলবার তাক করেছ, এর পরিণতি কি জান?’ ধমকের সুরে কথা কয়টি বলল পুলিশ অফিসার।
‘পরে জানলেও চলবে পুলিশ অফিসার, আপনার রিভলবারটি আমাকে দিন। দেরি করলে আমার প্রথম গুলিটার লক্ষ্য হবে আপনার ডান হাত’। কঠোর কন্ঠে বলল আহমদ মুসা।
পুলিশ অফিসার একবার আহমদ মুসার চোখের দিকে তাকাল। তারপর আস্তে রিভলবারটা বের করে আহমদ মুসার হাতে দিল।
‘ধন্যবাদ পুলিশ অফিসার’। বলে আহমদ মুসা পুলিশের রিভলবার পেছনের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, ‘মি. হাত্তা, আপনি পুলিশ অফিসারের মাথা তাক করে রাখুন। কোন বেয়াদবি করার চেষ্টা করলে তার মাথাটা একেবারে উড়িয়ে দেবেন’।
আহমদ মুসা নিজের হাতের রিভলবারটা স্টিয়ারিং হুইলের সামনের ড্যাশ বোর্ডে রেখে পুলিশ অফিসারের দিকে চেয়ে বলল, মি. পুলিশ অফিসার আপনি মি. হাত্তার যে অপরাধের তালিকা দিলেন, তার মধ্যে তাঁর আসল দোষটাই তো নেই। জানেন দোষটা কি? দোষটা হলো, একুশ তারিখে তিনি তাঁর মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার জন্যে দেশে এসেছেন’।
পুলিশ অফিসারটি মুখ হাঁড়ি করে বসেছিল। সে ভীতও। কোন কথা বলল না সে। তাকাল না সে আহমদ মুসার দিকে।
আহমদ মুসা আবার বলল, ‘মি. পুলিশ অফিসার, আপনি বললেন মি.হাত্তা ফেরার। তিনি কি ফেরার হয়েছিলেন, না তাঁকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল? তাঁর মেয়েকে কারা দেশ ছাড়া করেছে পুলিশ অফিসার? কারা তাঁর হবু জামাতাকে পণবন্দী করে রেখেছে? দেশে অপহরণ, কিডন্যাপের সয়লাব সৃষ্টি করেছে কারা? এসব অপরাধ কি মি. হাত্তার?
‘তুমি একজন ড্রাইভার। এসব তুমি জান কেমন করে? বলছ কোন স্বার্থে? মরার জন্যে পাখা উঠেছে বুঝি! চল চেকপোষ্টে, দেখবে, কি ঘটে?’ সাহস দেখিয়ে অপমান-ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলল পুলিশ অফিসারটি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top