একটু চোখ বুলিয়ে নিন
কটেজের দরজায় আলতো হাতের ছোঁয়ায় কড়া নাড়ল মিস পোলিট। বেশ কিছুক্ষণ
বিরতির পর আবার কড়া নাড়ল সে। তার বাঁ-হাতের বাঁধন থেকে প্যাকেটটা একটু বুঝি হা
আলগা হলো, ফিরে আবার গুছিয়ে রাখল। প্যাকেটের ভেতরে মিসেস স্পেনলোর শীতের
নতুন সবুজ পোশাক ছিলো। মিস পোলিটের বাঁহাতে একটা কালো সিচ্কের ব্যাগ ঝুলছিল,
ভাতে ররেছে পোশাক মাপার একটি ফিতে, একটা পিল-কুশান আর একটা বড় আকারের
দীর্ঘদেহ্ী মিস পোলিটের চেহারা রোগাটে ধরণেব, টিকোল নাক, চাপা ঠোটদ্বয় এবং ধুসর
বন্ডের চুল তেমন ঘন নয়। তৃতীয়বার কড়া নাড়ার আগে ইতস্তত করল সে। চকিতে একবার
রাস্তার দিকে তাকাতেই সে দেখল, একটা ছায়ামুর্তি ভ্রুত এগিয়ে আসছে তার দিকে। পঞ্চানগ
বছরের হাসিখুশিতে ভরা, রোদে-পোড়া মিস হার্টনেল তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় চিৎকাব করে
উঠলেন, গুড আফটারনুন মিস পোলিট 1
প্রতিসস্ত্রাযণ জানাল ড্রেসমেকার, “গুড আফটারনুন মিস হার্টনেল। তার কন্ঠস্বর অস্বাভাবিক
মিহি এবং নশ্র। তার জীবনের শুরু একজন লেডির পরিচারিকা হিসেবে। মাপ করবেন, বলতে
শুরু করল সে, “আচ্ছা, আপনি কি জানেন, মিসেস স্পেনলো বাড়িতে নেই?’
‘না,আমার কোনো ধারণা নেই, উত্তবে বললেন মিসেস হার্ট নেল। “দেখুন, ব্যাপারটা কেমন
ফেন একটু অস্তুত লাগছে। আজ বিকেলে মিসেস স্পেনলোব একটা নতুন পোশাক ট্রায়াল
দেওয়ার কথা ছিলো। তিনি আমাকে সাড়ে-তিনটেয় আসতে বলেছিলেন। অথচ…….’
” মিস হার্টনেল তার কজিঘড়ির ওপর দৃষ্টি ফেললেন। ‘আধঘণ্টা সময় এখন অতিক্রান্ত ।’
‘হ্যা, তিন তিনবার দরজায় কড়া নেড়েছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। তাই মনে হয়,
আমার এখানে আসবার কথা ভূলে গিয়ে হযত বাইরে কোথাও বেরিয়ে গিয়ে থাকবেন। কিন্তু
কাউকে কথা দিয়ে তিনি তো ভুলে যাওয়ার পাস্ত্রী নন। তাছাড়া এই নতুন পোশাকটা আগামী
পরশু পরার কথা তার।
গেট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন মিসেস হার্টনলে। এবং খানিকটা পথ হেঁটে এসে্
ল্যাবুরনাম কটেজের দরজার সামলে মিস পোলিটের সঙ্গে মিলিত হলেন।
“কেন ষে গ্রেডিস সাড়া দিলো না?’ জানতে চাইলেন তিনি।
‘ওহো, না, আজ বৃহস্পতিবার, গ্লেডিসের বাইরে যাওয়ার দিন। আশাকরি যিসেস স্পেনলো
ঘুমিয়ে পড়ে থাকবেন। আমার মনে হয় না এ ব্যাপারে খুব বেশি সোরগোল তৃলেছিলেন
আপনি।’
_. দরজার কড়া ধরে কান ঝালাপালা করার মতো করে নাড়তে থাকলেন তিনি, সেই সঙ্গে
দরজার প্যানেলে জোরে জোরে ধাকা দিতে থাকলেন। তারপর চিৎকার করে উঠল সে.
‘কি ব্যাপার, চুপচাপ কেন, ভেতরে কি হয়েছে!”
কোনো সাড়া নেই।
লেখক সম্পর্কে
সারা বিশ্বে আগাথা ক্রিস্টি কেন যে “রহস্য সম্রাঞ্জী” হিসাবে পরিচিতা, সেটা যেমন আজ
কারো কাছে অজানা নয়, আবার সেটা এক রহস্যও বটে! তবে সে রহস্য আর কিছু নয়, তাঁর
লেখার এবং সব শেষে তার সৃষ্ট গোয়েন্দাদের বিশাল জনপ্রিয়তা । প্রথমেই ধরা যাক, সেই বেঁটে,
ছোট-খাটো চেহারার ধুসর কোষের অধিকারি বেলজিয়ান গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারোর কথা!
খুনের কোনো কত নেই, অথচ এ হেন কেসে তিনি তার অসাধারণ বুদ্ধি দিয়ে, অবিশ্বাস্য যুক্তি
দিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রকৃত খুনীকে ঠিক খুঁজে বার করেছেন। এরকুল পোয়ারোর অসাধারণ বুদ্ধির
ছাপ আমরা দেখতে পাই ক্রিস্টির বিখ্যাত গোয়েন্দা উ পন্যাস “মার্ডার অফ রজার আকরয়েড”-
এ। জাবায় এই গোয়েন্দা রহস্য উপন্যাসটিরই প্রথম নাট্যরূপ দেওয়া হয় “আযালিবাই” নামে
এবং ওয়েস্ট এন্ড-এ সাফল্যের সঙ্গে সেই নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল। পোয়ারোর পরেই আগাথার
আর এক বিখ্যাত গোয়েন্দা মিস মার্পলের নাম সবার জানা আছে নিশ্চয়ই । ১৯৭৬ সালে আগাথা
ফিস্টি তার শেষ লেখা “ ল্লিপিং মার্ডারে” মিস মার্পলকে সফল গোয়েন্দা হিসাবে উপস্থাপন
করে তার সুক্ চুলচেবা বিচাবের আর এক নজির স্থাপন করেছিলেন।
এই অমনিবাসে আগাথা ক্রিস্টিব সৃষ্ট সব গোয়েন্দাদেরই স্থান দেওয়া হয়েছে, আর তাই
সব গোয়েন্দাদের এখানে একব্রিত কবতে পারাব জন্য এব নামকরণ সার্থক হয়েছে £ “পোয়ারো
মার্পল এন্ড কোম্পানি!” নামের সঙ্গে সামগ্রস্ম রেখে আগাথা ক্রিস্টির শ্রেষ্ঠ উপন্যাস এবং
গল্পের স্থান করে দেওয়া হয়েছে এখানে। তবে একথা অবশ্ই অনস্বীকার্য যে, তার প্রতিটি
উপন্যাস অনবদ্য, সর্বকালের সেরা বলে বিবেচিত । ইংরেজী ভাষায় তার বই যেমন লক্ষ লক্ষ
বিক্রী হয়েছিল, তেমনি লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রী হয় ৪৫টি বিদেশী ভাষায়। সর্বকালের সর্বভাষায়
তিনি এক অপ্রতিহন্নী লেখিকা । বিক্রীর দিক থেকে বাইবেল এবং শেক্জপীয়রের পরেই তার স্থান
হঙ্গা যেতে পারে।
আগাথা ক্রিস্টি জন্মগ্রহন করেছিলেন টুর্কিতে 00995)। ওঁর প্রথম উপন্যাস “দি
মিদ্িয়াস আযফেয়ার আয ষ্টাইলস” লেখা হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ ভাগে। তখন তিনি
৬0 হিসাবে কাজ করছিলেন। ১৯২৬ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছর একটি করে তার উপন্যাস
প্রকাশিত হয়েছে।
৭৯টি রহস্য-গোয়েন্দা উপন্যাস, বেশ কয়েকটি ছোট বহস্য গল্পের সংকলন, ১৯টি নাটক
লিখেছিলেন তিনি । আবার মেরি ওয়েষ্ট ম্যাকটের ছল্পনামে ছয়টি উপন্যাস লিখেছিলেন তিনি।
তার সেরা উপন্মাসগুলির অন্যতম “আ্যান্ড দেন দেয়ার ওয়াজ নান’ ও “ক্যারিবিয়ান মিষ্টি এই
সংকলনে গ্রথিত হয়েছে। আগাথা ক্রিস্টি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন ১৯৭১ সালে।
জাগাথা ক্রিস্টি চারটি সামাজিক উপন্যাসও লিখেছিলেন। সেই সঙ্গে একটি
অটোবারোগ্রাফি ঃ “কাম, টেল মি হাউ ইউ লিভ” যাতে তিনি ঠার আর্কিওলজিস্ট স্থায়ী স্যার
মাক ম্যালোয়ানকে সাথী করেছিলেন।