একটু চোখ বুলিয়ে নিন
১. বিশ্ববিখ্যাক মানুষদের জীবন
বিশ্ববিখ্যাত মানুষদের জীবন আমাদের কানে কানে সেই কথা বলে, আমরাও তাদের মতো হতে পারি। তারা চলে যান, কিন্তু সময়ের বালুকাবেলায় তাদের পদচিহ্ন থেকে যায়।
-হেনরি ওয়ার্ডসওয়ার্থ লংফেলো।
না, যারা মারা গেছেন তাদের ঘুম ভাঙাবার চেষ্টা করো না।
তারা এই পৃথিবীর অংশ হয়ে গেছেন। এই পৃথিবীর মধ্যে তাদের সব কিছু মিশে আছে। তারা সম্মানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন। সেপনের গৃহযুদ্ধে যারা নিহত হয়েছেন, তারা ইতিমধ্যেই অমরত্ব লাভ করেছেন।
-আরনেস্ট হেমিংওয়ে।
গল্প শুরুর আগে আপনারা এটাকে একটা বানানো উপন্যাস বলতে পারেন, কিন্তু…
আমরা প্রবেশ করতে চলেছি ডন কুইকসোট এবং ফ্লেমিংকোর সেই রোমান্টিক ভূমিখণ্ডে, যা বরাবর ট্যুরিস্টদের হাতছানি দিয়ে ডেকেছে। একে আমরা স্পেনীয় অভিযাত্রীদের মহান দেশ বলতে পারি। টরকোয়েমাডার দেশ হিসেবেও একে চিহ্নত করা যেতে পারে। ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে আমরা দেখব, এই দেশের বুকে একদা সবথেকে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ হয়ে গেছে। পাঁচ লক্ষ মানুষের মৃত্য হয়েছে। একদিকে প্রজাতন্ত্রী, অন্যদিকে বিদ্রোহী জাতীয়তাবাদীরা। ১৯৩৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে ২৬৯টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। জাতীয়তাবাদীরা হত্যা করতে
থাকে প্রজাতন্ত্রীদের। প্রতি মাসে অন্তত এক হাজার করে। নিহতদের জন্য শোক প্রকাশের ওপর জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা। ১০৭টি গির্জা ধুলিসাৎ করে দেওয়া হয়। কনভেন্ট থেকে বিতাড়িত করা হয় উপাসিকাদের ৷ ডার্ক ডি সেন্ট সিমন লিখেছেন-এটা হল স্পেনীয় সরকার এবং চার্চের কর্তৃত্বের মধ্যে লড়াই । শেষ পর্যন্ত তা অন্যদিকে মোড়
নিয়েছিল। সংবাদপত্রের আধিকারিকদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। খবরের টুটি চেপে ধরা হয়েছে। এই গৃহযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সমাপ্ত হয়। জাতীয়তাবাদীরা ফ্রাঙ্কের নেতৃত্বে স্পেনের ওপর তাদের দখলদারি কায়েম করে ফ্রাঙ্কের মৃত্যুর পর স্পেনে রাজতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়।
১৯৩৬-১৯৩৯ সরকারীভাবে গৃহযুদ্ধের সময়সীমা । তারপরেও যুদ্ধের আগুনের আঁচ ধিকিধিকি ভ্বলেছে। স্পেনের দুটি অংশ পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। কখনও সন্ধিচুক্তি সম্পাদিত করা সম্ভব হয়নি। আজ স্পেনের বুকে আর একটি গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছে। গেরিলারা বাসকোর নেতৃত্বে কর্তৃত্বের জন্য লড়াই করছে। এই লড়াইয়ের প্রথম পর্যায়ে তারা গণতন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়েছিল । কিন্তু ফ্রাঙ্কের শাসনকালে এই যুদ্ধে তারা পরাস্ত হয়। এই যুদ্ধে যথেষ্ট বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। একের পর এক ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। দেখা গেছে গুপ্ত হত্যা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।
ই টি এ অর্থাৎ একটি গেরিলা সংবাহিনীর নেতা মাদ্রিদ হাসপাতালে মারা গেছেন। তাকে ভীষণভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল। এই মৃত্যু দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূচনা করেছে। এর ফলে স্পেনের পুলিশ বিভাগের মহা আধিকারিককে পদ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। পাঁচজন নিরাপত্তা প্রধানকেও অপসারিত করা হয়েছে। চলে গেছেন ২০০ জন বলিষ্ঠ পুলিশ আধিকারিক।
১৯৮৬ সালে বার্সিলোনাতে বাসকোয়েটরা জনসমক্ষে স্পেনের জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছেন। বাসকোর অধীনস্থ মানুষদের অত্যাচারে পাম্পালোনাতে হাজার হাজার মানুষ ভয়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। পুলিশ দীর্ঘদিন যোবা ভূমিকা পালন করেছে। তারপর শুরু হয়েছে আধা সামরিক বাহিনীর শাসন। প্রতিহিংসার আগুন জ্বলে উঠেছে। দেখা
দিয়েছে বিশৃঙ্খলা । বাসকোর বাড়িতে গুলি চলেছে। জনগণ অধৈর্য হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসবাদীদের কার্যকলাপ চোখে পড়ছে।
১৯৭৬ সালের ঘটনাবহুল দুটি সপ্তাহকে পাথেয় করে লেখা হল এই উপন্যাসটি । তাই বলছি পাঠক-পাঠিকা, একে বানানো উপন্যাস বলার আগে এক মুহূর্ত চিন্তা করবেন…
০১. পাম্পালোনা, স্পেন-১৯৭৬
যদি পরিকল্পনাটা কোনো কারণে ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে আমাদের সকলকে মরতে হবে।
শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছিলেন, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন এই প্রকল্পনার মধ্যে কোনো লুকোনো ক্রটি বা অসঙ্গতি আছে কিনা। উনি একজন বুদ্ধিমান মানুষ। শেষ পর্যন্ত দেখলেন, না, কোনো ছিদ্র চোখে পড়ছে না। পরিকল্পনাটার মধ্যে দুঃসাহসের ছাপ আছে। একে আমরা এক নিভীক প্রকল্প বলতে পারি। সেকেন্ডের ক্ষণভগ্নাংশের মধ্যে কাজ করতে হবে। জয়যুক্ত হলে অসামান্য সফলতা অর্জিত হবে। কিন্তু যদি আমরা হেরে যাই…
এখন চিন্তা করার কোনো মানে হয় না। জাইমে মিরো দার্শনিকভাবে চিন্তা করলেন এখন কাজে লেগে পড়তে হবে।
জাইমে মিরোকে আমরা কিংবদন্তীর এক মহানায়ক বলতে পারি। বাসকের অধীনে এক মহান নেতা । ইতিমধ্যে তিনি স্পেনীয় সরকারের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছেন। ছফুট লম্বা, মুখমণ্ডলে বুদ্ধির দ্যুতি, পুরুষালি চেহারা, দুটি চোখের তারায় তীক্ষ দৃষ্টি। অবয়বের থেকে তাকে আরও বেশি উচ্চ বলে মনে হয়। দেহের যা রং, তার থেকে বেশি বাদামী
বলে মনে হয়। তিনি এক জটিল চরিত্রের মানুষ । বাস্তববাদী, যে কোনো ঘটনার ভবিষ্যৎ ব্যাপার কী হতে পারে, তা অনায়াসে বুঝতে পারেন। আবার রোমান্টিক মনোভাবাপন্ন। স্বপ্নের জন্য জীবন দিতে কুন্ঠিত হন না।
সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।