একটু চোখ বুলিয়ে নিন
পেনসিলভানিয়া এ্যাভিনিউ
হোয়াইট হাউস থেকে একটা ব্লক দূরে পেনসিলভানিয়া এ্যাভিনিউ-এর উপর দিয়ে সে দ্রুত পায়ে হেটে যাচ্ছিল। ডিসেম্বরের কনকনে শীত। তখন, বিমান আক্রমণের সতর্কীকরণ সাইরেন বেজে উঠল। হঠাৎ সে সারাজেড়োয় ফিরে গেল এবং বোমা ফেলার বুক কাঁপানো আওয়াজ শুনতে পেল। আকাশ আগুন রঙা। বিমান থেকে বোমাবর্ষণের আওয়াজ পাওয়া গেল। কাছাকাছি ঘরবাড়ি গুলোর দরজা জানলা, দেওয়াল বোমার আঘাতে ভেঙে পড়ছে। মানুষজন ছুটছে।
বহুদূর থেকে পুরুষকণ্ঠে প্রশ্ন এল, তুমি ঠিক আছ তো?- মেয়েটি তার চোখ খুলল।
হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।- মেয়েটিকে সে বলে-তুমি ড্যানা ইভা তো? আমি WTN এ তোমার ওপর নজর রাখি প্রতি রাতে। তোমার সব বেতার ভাষণ শুনি। যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে কি তুমি উত্তেজিত হয়ে ওঠো?-
-হ্যাঁ, কারণ ছিন্নভিন্ন মানুষের দেহ, শিশুদের দেহ, কুয়োয় পড়ে যাওয়া এসব মানুষকে উত্তেজিত করে ।-
হঠাৎ ইভান্স-এর পেটের যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় সে ক্ষমা চেয়ে চলে গেল।
মাস তিনেক আগে ড্যানা যুগোস্লাভিয়া থেকে ফিরে এসেছে। স্মৃতি টাটকা এখনও । সারাজেভোয় মানুষের মনে হাসি ছিল না, ছিল শুধু মর্টার বিস্ফোরণের শব্দ।
ড্যানার মনে হল, জন ডোনিই ঠিক। কোন মানুষই একটা দ্বীপ নয়। পৃথিবী ব্যাপী ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলেছে নিরন্তর ।
স্যান্টিয়াগোয় দশ বছরের মেয়েকে তার ঠাকুরদা ধর্ষণ করে । নিউইয়র্কে দুজন প্রেমিক প্রেমিকা চুমু খায়। ফ্ল্যাঙ্গার্সে সতেরো বছরের মেয়ে পঙ্গু সন্তানের জন্ম দেয়, শিকাগোয় একজন দমকল কর্মী নিজের জীবন বিপন্ন করে একটা বেড়ালের প্রাণ বাঁচায়, সাওপাওলোয় ফুটবল দেখতে গিয়ে স্টেডিয়াম ভেঙে শতশত মানুষ প্রাণ হারায়। পিসায় মা তার শিশুকে প্রথম হাঁটতে দেখে আনন্দে চেচিয়ে ওঠে।
ড্যানা ভাবল ষাট সেকেণ্ডের মধ্যে এসব অনন্তকাল ধরে চলে আসছে।
সাতাশ বছর বয়সের ড্যানাকে দেখতে সুন্দরী। পাতলা রোগাটে চেহারা, কোমর ছুই ছুই চুল, বুদ্ধিদীপ্ত ধূসর চোখ, গোল মুখ, উষ্ণ হাসি। ড্যানার বাবা সৈন্যবাহিনীর নির্দেশক। কর্মসূত্রে সব জায়গায় ঘুরেছেন। তার সঙ্গে ড্যানাও অভিযানের স্বাদ পেয়ে গেছে। তার কোন ভয় নেই। ড্যানা মৃত্যুকে পরোয়া না করে যুদ্ধের খবর বেতারে লাইভ টেলিকাস্ট করেছে। এতে তার খ্যতি বেড়েছে।
পেনসিলভানিয়া এ্যাভিনিউ দিয়ে দ্রুত হোয়াইট হাউস অতিক্রম করতে গিয়ে ড্যানা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবে মিটিং-এ যেতে দেরি হয়ে গেল।
সিক্সথ স্ট্রিট-এর পুরো ব্লকটাই ওয়াশিংটন ট্রিবিউন এন্টারপ্রাইজ-এর দখলে, চারটি বিল্ডিং-খবরের কাগজ ছাপানোর অফিস, স্টক অফিস, এক্সকিউটিভ টাওয়ার, টেলিভিশন ব্রডকাস্টিং কমপ্লেক্স । কমপিউটারের কী বোর্ডের শব্দে সবসময় জায়গাটা সরগরম থাকে।
এখানে জেফ বার্নসের সঙ্গে মিলিত হয়েছিল ড্যানা। জেফ ওয়াশিংটন ট্রিবিউন নেটওয়ার্কের স্পোর্টস রিপোর্টার। তিরিশের ভেতর বয়স। লম্বা ও রোগাটে চেহারা । আকর্ষণীয় মুখ। জেফ ও ড্যানা প্রেমে পড়েছে। ওয়াশিংটন ট্রিবিউন এন্টারপ্রাইজের প্রাক্তন মালিক স্টুয়ার্ট তার এই কোম্পানি ইলিয়ট ক্রমওয়েলেকে বিক্রি করে দিয়েছেন।
ম্যাট বেকার এবং ইলিয়ট ক্রমওয়েলের সঙ্গে মিটিং শুরুর মুখে ম্যাট-এর সহকারী অ্যাবি ল্যাসম্যান ড্যানাকে অভিবাদন জানাল। ম্যাট বিরক্ত হয়ে বলল,তুমি দেরী করে ফেলেছ।- ম্যাট বেকারের পঞ্চাশ বছর বয়স। রুঢ় প্রকৃতির মানুষ৷ অবিন্যস্ত পোশাক। WTN টেলিভিশন অপারেশন পরিচালনা করেন তিনি।
ইলিয়ট ক্রমওয়েলের বয়স ষাট, বন্ধুসুলভ, কোটিপতি মানুষ । সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন খবর প্রকাশ করা তাঁর কাজ যা সর্বদা সুখকর নয়। ড্যানাকে তিনি বললেন, ম্যাটের কাছে শুনলাম তোমার বাজারদর ক্রমশ বাড়ছে । বেতারে সংবাদ প্রচার আমি শুনি। তোমারটা একেবারে আলাদা ।-
ধন্যবাদ- ড্যানা বলল। সে জানে সে সাংবাদিক হিসাবে হাড়ির খবর টেনে বার করে আনে, অন্যদের মত ভাসা ভাসা খবর সে পরিবেশন করে না। তাই সে এত জনপ্রিয় ।
ম্যাট বেকার জানতে চাইলেন, -আজও তো ইন্টারভিউ নিতে যাচ্ছ তুমি?-হ্যাঁ, গারি উইনথ্রপের। সে আমেরিকার প্রি্স চার্মিং। প্রবীণ, সুপুরুষ ।- ক্রমওয়েল বললেন, -শুনেছি সে ব্যক্তিগত প্রচার চায় না। তাই ভাবছি তুমি কি করে তাকে রাজি করালে? আসলে আমাদের ছবি একই । সে ভ্যানগগের আর মনেট-এর ছবি কেনে আর আমি কিনতে না পেরে তাকিয়ে থাকি। তার নিউজ কনফারেন্সের একটা টেপ করে নেব। এটাই আজ বিকেলের কভার। তারপরেও সাক্ষাৎকার চালিয়ে যাব।-
তাদের পরিকল্পনা মাফিক নেটওয়ার্কের নতুন শো-এর ব্যাপারে, ঘণ্টাখানেক ধরে আলোচনা চলল। সেটা অপরাধ জগতের অনুসন্ধান কার্য পরিচালনা করা যা ড্যানা দীর্ঘস্থায়ী হিসাবে প্রযোজনা করতে যাচ্ছে। ম্যাট বলে, -বেতারে অনেক বাস্তব তুলে ধরা হয়েছে। তাই আরও ভাল কিছু আমাদের তুলে ধরতে হবে। অর্থলিপ্সার মত বিষয়কে আঁকড়ে ধরে থাকব যাতে শ্রোতাদের আকর্ষণের সঙ্গে সঙ্গে- …ইন্টারকম বেজে উঠল কথার মাঝে । ম্যাক বিরক্ত হল,-তোমাকে না বলেছি এখন কোন কথা নয়।-
অ্যাবি বলে-দুঃখিত, কিন্তু এটা মিস ইভান্সের। ফেনাল-এর স্কুল থেকে ওর খোঁজ করা হচ্ছে।- ড্যানা রিসিভারটা নিয়ে কথা বলে। ম্যাট জানতে চাইলেন, -কার ফোন?- ড্যানা উত্তেজিত হয়ে বলল, ফেনালকে নিয়ে আসার জন্য ওরা আমাকে স্কুলে যেতে বলল ।-
ইলিয়ট জিজ্ঞেস করলেন, সারাজেভো থেকে যে ছেলেটিকে তুমি নিয়ে এসেছিলে এ কি সে?-হ্যাঁ। বোমায় ওর একটা হাত উড়ে গেছে। আমি ওকে পোয্য নিতে চলেছি। আমি ওর অভিভাবিকা ।-
সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।