Varot Ovijan by Enayetullah Altamash

ভারত অভিযান ১ – এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ (Varot Ovijan 1 by Enayetullah Altamash)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

৯৭১ সালের পয়লা নভেম্বর, ৩৫৭ হিজরী সনের দশই মুহররম। সেদিন মানবেতিহাসে সূচিত হলো এক নতুন অধ্যায়। জন্ম নিলো এমন এক কালজয়ী মহাপুরুষ, যার নাম শুনলে হাজার বছর পরে আজো মূর্তিপূজারী হিন্দুদের গা কাঁটা দেয়। কলজে কেঁপে ওঠে। সেই মহাপুরুষের নাম সুলতান মাহমুদ গযনবী। ইতিহাসে যিনি আখ্যা পেয়েছেন ‘মূর্তি সংহারক’ নামে।

হাজার বছর পেরিয়ে গেছে। এরই মধ্যে পৃথিবীতে ঘটে গেছে কতো ঘটনা, কতো বিবর্তন। কতো রাজা, মহারাজা, দুঃশাসন, সুশাসন দেখেছে প্রাচ্য এশিয়ার জমিন। এখানকার মাটিতে কতো বনি আদমের খুন মিশে আছে তার ইয়ত্তা নেই। কতো আদম সন্তান, এক আল্লাহর ইবাদতকারী বহু দেবতাপূজারী মূর্তিপূজকের নির্যাতনে নিষ্পিষ্ট হয়েছে এরও নেই সঠিক পরিসংখ্যান। কিন্তু একটি কথা ইতিহাসের পাতায় চির সমুজ্জ্বল মূর্তি ভাঙ্গার ইতিহাস। পৌত্তলিকদের মনগড়া দেবদেবীর মিথ্যা স্বর্গ ভেঙ্গেচুরে মহাজগতের সত্য ও প্রকৃত স্রষ্টা মহান আল্লাহর প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। একবার দু’বার নয়, পরাজয়-পরাভবকে দু’পায়ে দলে সতের বার ভারতের মূর্তিপূজারী পৌত্তলিক প্রভুদের সৃষ্ট সাম্রাজ্য খান খান করে ধুলায় মিশিয়ে দেয়ার ইতিহাস। সেই কালজয়ী ইতিহাসেরই জনক সুলতান মাহমুদ।

সুলতান মাহমূদ ইতিহাসের এক জীবন্ত কিংবদন্তী। এখনও জীবন্ত তার কর্মকৃতি। বেঈমানদের কাছে মাহমূদ গয়নবী হিংস্র, সন্ত্রাসী, খুনী, অত্যাচারী কিন্তু মুসলমানদের কাছে সুলতান মাহমূদ মর্দে মুজাহিদ, মহানায়ক, ভারতীয় মজলুম মুসলমানদের ত্রাণকর্তা, মূর্তিবিনাশী।

আজ থেকে হাজার বছর আগে। মহাভারত জুড়ে ছিল মূর্তি ও মূর্তিপূজারীদের একচ্ছত্র রাজত্ব। মানুষ ছিল মানুষের দাস। মানুষের উপর প্রভুত্ব করতো মানুষ। মানুষের হাতে তৈরি মূর্তি-পদতলে জীবন দিতো মানুষ।

আজ ভারতের মন্দিরে মন্দিরে শোভিত যে মূর্তি, সেসব কাদা মাটির ঘূর্তিকে ভেঙ্গেচুরে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে সুলতান মাহমূদ সেই সময়ের পরাজিত পূজারীদের বলেছিলেন, “কাদা-মাটির এসব ভূত ও মূর্তি মানুষের প্রভু হতে পারে না, যদি তোমাদের মাটির ওইসব দেবদেবীর কোন ক্ষমতা থাকে তবে বলল, নিজেদের ক্ষত-বিক্ষত টুকরোগুলোকে পুনর্গঠিত করে আমাকে এভাবে টুকরো টুকরো করে ফেলুক।”

পারেনি। ধ্বংসাবশেষ থেকে দুমড়ানো মুচড়ানো মূর্তির টুকরো আর জোড়া লাগেনি। মাটিতে মিশে যাওয়া দেবদেবীরা খাড়া হয়ে রুখতে পারেনি মূর্তিসংহারী মাহমূদকে। সুলতান মাহমুদের বিজয়ী সৈনিকেরা কাদা-মাটির মূর্তির উপর দিয়ে তাদের ঘোড়া হাকিয়ে দিলো। সোমনাথ থানেশ্বরের বিশালকায় মূর্তিগুলো মাহমূদ গযনবীর অশ্ববাহিনীর খুরাঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো, পদাতিক বাহিনীর পদতলে পৃষ্ঠ হয়ে মাটির সাথে মিশে গেলো। প্রতিরোধ করবে তো দূরে থাক আত্মরক্ষাও করতে ব্যর্থ হলো। সে সময়ের ব্রাহ্মণেরা দেবতাদের অক্ষমতা প্রত্যক্ষ করেছিল, স্বীকার করেছিল এক আল্লাহ্র বড়ত্ব, মেনে নিয়েছিল এক আল্লাহ্র গোলাম মাহমূদ গযনবীর বশ্যতা। অতঃপর পেরিয়ে গেল অনেক দিন।

এক সময় অতীত হয়ে গেলেন মাহমূদ গযনবী। ভারতের মন্দিরে মন্দিরে আবারো শুরু হলো শঙ্খধ্বনি, শুরু হলো গীত-ভজন। মন্দিরের শূন্য বেদীতে পুনঃস্থাপিত হলো আরো বিশাল বিরাটাকার পাথর-কংক্রীটের শক্ত মূর্তি। ব্রাহ্মণরা নতুন উদ্যোগে পুনরোদ্যমে শুরু করলো ভগঃভজনা। ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ খুঁড়িয়ে দিয়ে হিন্দু-তপস্বীরা মূর্তিসংহারের প্রতিশোধ নিলো; জানিয়ে দিলো, সন্ন্যাসীরা মূর্তিনাশীদের প্রতিশোধ নিয়েছে, মুসলমানদের ইবাদতখানা মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে সেখানে মূর্তি স্থাপন করেছে। তারা মুসলমানদের শক্তি, বীরত্ব, কীর্তি গাঁথার ইতিহাসকে মুছে দিয়েছে।

বিগত হাজার বছরে মুসলমানরা ভারতের পৌত্তলিকদের কাছেই শুধু আত্মবিসর্জন দেয়নি, পৃথিবীর যে সব ভূখণ্ডে মুসলমানরা ছিল দণ্ডমুণ্ডের মালিক, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিধর্মীদের কাছে এসবের কর্তৃত্ব চলে গেছে। মুসলমানরা হারিয়েছে ঈমানী শক্তি, জাতীয়তা বোধ, বিস্মৃত হয়েছে নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, বিশ্বনবীর দেয়া শিক্ষা থেকে দূরে সরে পড়েছে। পরিণতিতে ভিমরুলের মতো চতুর্দিক থেকে হামলে পড়েছে বেঈমানেরা, সম্বিত হারানো ব্যাঘ্রের মতো মুসলিম নওজোয়ানরা দংশিত হয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রহিত হয়ে গেছে নিজেদের সৃষ্ট তুফানে। এখন মুসলমানদের অবস্থা টালমাটাল।

পুনরায় ভারতে ফিরে এসেছে পৌত্তলিকতার জৌলুস। গষনবী যেসব দেবালয় ধ্বংস করেছিলেন সেগুলো এখন আগের চেয়ে আরো বেশি জমজমাট। আধুনিকতার রঙিন ফানুসে উজ্জ্বলতার মূর্তিগুলো যেন পরিহাস করে বলছে, মুসলমানদের খোদা এখন আর নেই, এখন আর নেই মূর্তিসংহারী কোন মাহমূদ। ওরা সব মরে গেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top