Varot Ovijan by Enayetullah Altamash

ভারত অভিযান ২ – এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ (Varot Ovijan 2 by Enayetullah Altamash)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

বিজিত রাজ্য পেশোয়ারে সুলতান মাহমুদ অধীরভাবে অপেক্ষা করছেন দূত আসেমের আগমন প্রত্যাশায়। কিন্তু দু’সপ্তাহ কেটে গেল আসেমের কোন খবর পাচ্ছেন না। প্রত্যাশা এখন হতাশায় রূপান্তরিত হল সুলতানের, আশংকাও দেখা দিল তার মনে আসেম সাথীদের নিয়ে শত্রুসেনাদের হাতে বন্দী হয়নি তো! দরবারীদের কাছে তিনি আশংকার কথা বারকয়েক ব্যক্ত করেছেন। তিনি শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে এ ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন, “যদি শুনি আসেম ও তার সাথীদের ওরা বন্দী করেছে তাহলে আমি মুলতানের রাজপ্রাসাদের প্রতিটি ইট খুলে ফেলবো। ইসলাম গ্রহণ করা ছাড়া কাউকে জ্যান্ত রাখবো না।”

এর দু’দিন পর সুলতানকে সংবাদ দেয়া হলো, আসেমের এক সাথী এক যুবতী মহিলাকে নিয়ে গজনী ফিরেছে। দীর্ঘ সফর, ক্ষুধা পিপাসা আর কষ্ট যাতনায় ওদের অবস্থা খুবই করুণ।

“ওদেরকে এক্ষুণি আমার এখানে নিয়ে এসো।” কিছুটা বিস্ময়মাখা কণ্ঠে নির্দেশ করলেন সুলতান। “কোন অঘটন ঘটেনি তো?”

সৈনিক সুলতানের কক্ষে প্রবেশ করল। মুখ ব্যাদান। তার দু’চোখ কোটরাগত। শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে ঘন ঘন। যুবতীর অবস্থা ওর চেয়েও করুণ। সুলতান ওদের পানি দিতে নির্দেশ করলেন। পানি নিয়ে এলে উভয়ে কয়েক ডোক পান করল।

“সুলতানে আলী মাকাম! ঘোড়াকে বিশ্রাম দেয়া ছাড়া আমরা পথে কোথাও এক মুহূর্ত দেরী করিনি। কমান্ডার আসেমের এখানে পৌঁছার আগেই আপনার সাথে সাক্ষাৎ করা ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। সম্ভবত সে এখনও পৌঁছেনি।” বলল সৈনিক।

“জাহাপনা! আসেম আপনার পয়গামের যে জবাব নিয়ে আসছে তা সম্পূর্ণ প্রতারণা। মুলতানের শাসক দাউদ বিন নসর হিন্দুদের চেয়ে আরো বেশি ভয়ংকর শক্র আপনার। সে হিন্দুদের পক্ষ থেকে আপনাকে হত্যা করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছে। সেই সাথে আমাদের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার জন্যে মারাত্মক চক্রান্তের জাল বিছিয়েছে। সে আনন্দ পাল ও বিজি রায়ের পক্ষে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে নীলনকশা এঁকেছে। সেই নীলনকশার অংশ হিসেবেই ওরা আসেমকে হাত করে নিয়েছে। আসেম আপনার কাছে যে মানচিত্র নিয়ে আসছে, সেটি হিন্দুদের সরবরাহকৃত। বিজি রায় ও আনন্দ পালের সৈন্যরা দাউদের হয়ে ওৎ পেতে থাকবে আমাদের গমন পথে নিরাপত্তা দেয়ার কৌশল করে। কিন্তু সুযোগ মতো ওরা আপনার উপর হামলা করবে এবং আমাদের সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করবে। আসেম তার অধীনস্থ সৈনিকদের নিয়ে ওদের ক্রীড়নক হিসেবে আত্মসমর্পণে প্ররোচনা দিবে।”

“দাউদ যে এই নীলনকশা এঁকেছে, আসেম কি তা বুঝতে পারেনি?”

“সে নিজেই তো বিক্রি হয়ে গেছে। সে এখন দাউদের ক্রীড়নক।”

সৈনিক যুবতী সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত করল সুলতানকে। কিভাবে ভাগ্য বিড়ম্বিতা এই যুবতী ইসলামের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছে এবং তার সাথে পালিয়ে এসেছে। সুলতান এক দোভাষীর মাধ্যমে যুবতীর কাছ থেকে জানলেন দাউদের অভ্যন্তরীণ হালত। এও জানলেন, আসেমের এতদিন ওখানে কিভাবে কেটেছে, কি করেছে, কি কি কথা হয়েছে দাউদ ও আসেমের মধ্যে। যুবতী দাউদ বিন নসরের কার্যক্রম, ওদের ধর্মীয় আচার ও আকীদা বিশ্বাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানাল সুলতানকে। সে এ কথাও বলল, “আমি নিজের কানে এসব শুনেছি এবং নিজের চোখে দেখেছি ও নিজের হাতে আসেমকে মদ খেতে দিয়েছি।”

“এই মেয়েটিকে অন্দর মহলে পাঠিয়ে দাও। এর সেবা-যত্নে কোন ত্রুটি হয় যেন। আর এই সৈনিকেরও খানা-দানা ও বিশ্রামের সুব্যবস্থা কর। ওকে শাহী মেহমানখানায় থাকতে দাও। এরা যে আসেমের আগেই পৌঁছে গেছে সে কথা প্রকাশ হয় না যেন।”

ওদের পৌঁছার চার পাঁচদিন পর আসেম ওমর সুলতানের দরবারে পৌঁছাল। আসেম সুলতানকে বলল, “দাউদ বিন নসর আপনার জন্যে দামী দামী উপঢৌকন পাঠিয়েছে এবং অধীর আগ্রহে আপনার আগমন প্রত্যাশা করছে। সে আপনাকে মুলতানে স্বাগত জানাতে উগ্রীব। দাউদের দেয়া ষড়যন্ত্রের মানচিত্র সুলতানের কাছে মেলে ধরে সে বলল, এটা দাউদের বলে দেয়া পথ। এ পথে আমাদের সৈন্যরা অতিক্রম করলে সে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। আসেম আরো বলল, দাউদ বিন নসর আমাদের খুব নির্ভরযোগ্য দোস্ত।”

“মুলতান পর্যন্ত সৈন্য নিয়ে যাওয়ার পথ আমি দেখে ফেলেছি। তবে তুমি আমাকে বল, বিজি রায় ও আনন্দ পালের সৈন্যরা কোন কোন জায়গায় ওঁৎ পেতে থাকবে এবং রাতের আঁধারে কীভাবে গুপ্ত হামলা করবে?”

“বিস্ময়ভরা চোখে সুলতানের দিকে তাকাল আসেম। নির্দেশ দিলেন সুলতান, ওদের দুজনকে নিয়ে এসো।”

একটু পরই আসেম ওমরের হারিয়ে যাওয়া নিরাপত্তারক্ষী আর সেই তরুণী এসে দাঁড়াল তার সামনে।

“এই যুবতাঁকে চেনো?” গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন সুলতান। “তোমার কি মনে আছে, দাউদের প্রাসাদে বসে যখন তুমি তোমার ঈমান আর আমার জীবন বেচাকেনা করছিলে তখন এই যুবতী তোমাদের মদ পরিবেশন করছিল? তুমি কি আমার মুখেই তোমার কৃতকর্মের বিস্তারিত শুনতে চাও, না ওর মুখে শুনবে এর চেয়ে কি এটাই ভাল নয় যে, কৃতকর্মের বর্ণনা তুমি নিজের মুখেই দাও।”

উঠে দাঁড়াল আসেম ওমর। কৃত অপরাধ আর পাপাচারের বোঝ ওর ঈমানী শক্তিকে বিলীন করে দিয়েছে। সত্যের মুখোমুখি হতে সাহস হলো না তার। আস্তে করে তরবারীটা কোষমুক্ত করে আগাটা বসিয়ে দিল পেটে এবং দুহাতে তরবারীর বাট ধরে এমন জোরে চাপ দিল যে পিঠ ফুরে বেরিয়ে গেল। একটা চাপা চিৎকার দিয়ে পড়ে গেল মেঝের ওপর। তড়পাতে লাগল ওর দেহ।

প্রহরীদের নির্দেশ দিলেন সুলতান। ওর দেহকে শহরের বাইরে খোলা জায়গায় ফেলে এসো। ঈমান সওদাকারী দাফন কাফনের হকদার নয়।”

সেনাপতিদের ডেকে পাঠালেন সুলতান। নির্দেশ দিলেন, “এখনই সেনাদের তৈরি হতে বলুন। আমি আজই মুলতানের উদ্দেশে রওয়ানা হবো। ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে। পথে কয়েক জায়গায় যুদ্ধ করতে হবে আমাদের। পৌত্তলিকদের পাশাপাশি কারামাতী চক্রান্তও এবার খতম করব ইনশাআল্লাহ।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top